ঝড়ে ভেসে উঠলো কয়েক শতাব্দী আগে ডুবে যাওয়া জাহাজের ধ্বংসাবশেষ
তীব্র উপকূলীয় ক্ষয় ও ঝড়ের তাণ্ডবে ভিয়েতনামের এক উপকূলে উন্মোচিত হয়েছে শতাব্দীপ্রাচীন একটি জাহাজের ধ্বংসাবশেষ। সাম্প্রতিক টাইফুন কালমেগির আঘাতে উপকূলীয় এলাকায় বালু ও পলিমাটি সরে গিয়ে জাহাজটির কাঠামোর একটি অংশ দৃশ্যমান হয়।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এটি সম্ভবত কয়েক শতাব্দী আগের একটি বাণিজ্য জাহাজ, যা ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উৎস হতে পারে।
তারা আরো জানিয়েছে, এই ঘটনা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাচীন সমুদ্রবাণিজ্যের ইতিহাসে নতুন আলোকপাত করতে পারে। সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় ক্রমাগত ক্ষয়ের কারণে এখনই এটি উদ্ধারের সর্বোত্তম সময় বলে মনে করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। জাহাজটি উদ্ধারে ভিয়েতনামের সংস্কৃতি ও প্রত্নতত্ত্ব দপ্তর ইতোমধ্যেই জরুরি উদ্ধার অভিযানের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ববিদ নগুয়েন থান লং বলেন, ‘সমুদ্রের জোয়ার-ভাটার প্রভাবে এই ধ্বংসাবশেষ দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই এখনই পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, আমরা এক অমূল্য ইতিহাস হারাতে পারি।’
স্থানীয় জনগণও ঘটনাটিকে ঘিরে ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করেছে। জাহাজটির কাঠ ও ধাতব অংশ বিশ্লেষণ করে এর বয়স, উৎপত্তি ও যাত্রাপথ নির্ধারণের চেষ্টা চলছে।
বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, এই আবিষ্কার ভিয়েতনামের প্রাচীন সামুদ্রিক ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে এটি একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার হতে পারে। ভিয়েতনামের হোই আন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
প্রাথমিকভাবে ২০২৩ সালে হোই আন উপকূলে আবিষ্কৃত কমপক্ষে ১৭ দশমিক ৪ মিটার লম্বা জাহাজটির ভারী কাঠের হাল কয়েক শত বছর ধরে উত্তাল সমুদ্রে প্রায় পুরোপুরি অক্ষত অবস্থায় টিকে ছিল। কর্তৃপক্ষ সেটি পুনরুদ্ধার করার আগেই পুনরায় ডুবে যায়।
বিশেষজ্ঞরা এখনো জাহাজটি ধ্বংসের তারিখটি জানাতে সক্ষম হননি, তবে প্রাথমিক অনুসন্ধানে ধারণা করা হচ্ছে যে এটি ১৪শ থেকে ১৬শ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত হয়েছিল।
ইউনেস্কো-তালিকাভুক্ত হোই আন রেশম, সিরামিক ও মশলার সমৃদ্ধ আঞ্চলিক বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল।
হোই আন সেন্টার ফর দ্য প্রিজারভেশন অফ ওয়ার্ল্ড কালচারাল হেরিটেজ-এর পরিচালক ফাম ফু নোগক সোমবার এএফপিকে বলেন, ‘আমরা বর্তমানে জরুরি খনন আবেদন করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
গত সপ্তাহে টাইফুন কালমেগি অতিক্রম করার পর ধ্বংসাবশেষটি দৃশ্যমান হয়। তিনি আরো বলেন, ‘এই প্রাচীন জাহাজের আবিষ্কার আঞ্চলিক বাণিজ্যে হোই আনের গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ভূমিকার সুস্পষ্ট প্রমাণ।’
নোগক বলেন, ‘এবার এই জাহাজ আরও কিছু অংশ উন্মোচিত হয়েছে, যা আমাদের অধিক তথ্য সরবরাহ করতে পারে।’
হোই আন সংরক্ষণ কেন্দ্র, হো চি মিন সিটির সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি স্থানীয় জাদুঘরের বিশেষজ্ঞদের একটি দল গত বছর ধ্বংসাবশেষটি জরিপ করেছে।
বিশেষজ্ঞ এই দলের সদস্যরা ধ্বংসাবশেষটির মোটামুটি বয়সের একটি অনুমান করতে পেরেছেন।
ছাড়াও, তারা দেখতে পেয়েছেন যে এটি ‘টেকসই ও উচ্চ-সহনশীল কাঠ’ দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এবং এর সংযোগস্থলগুলো সিল করার জন্য পানিরোধী উপকরণ দিয়ে শক্তিশালী করা হয়েছিল।
হাই আন সেন্টার পূর্ববর্তী এক বিবৃতিতে জানায়, ‘জাহাজের কাঠামো থেকে বোঝা যায় যে এটি দীর্ঘ দূরত্বের ভ্রমণ করতে সক্ষম ছিল। সম্ভবত সামুদ্রিক বাণিজ্য বা নৌ অভিযানের জন্য এই জাহাজটি ব্যবহৃত হত।’
তীব্র উপকূলীয় ক্ষয় ও জাহাজটি প্রায়শই প্রতিকূল আবহাওয়ার মুখোমুখি হওয়ার কারণে, ‘তাৎক্ষণিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা না নিলে’ ধ্বংসাবশেষটি ‘মারাত্মক অবনতির’ ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
সোমবারও ধ্বংসাবশেষটি স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল, এর আকর্ষণীয় কঙ্কাল-কাঠামো দেখার জন্য সৈকতে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে।
বিভি/এজেড




মন্তব্য করুন: