• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ১১ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

শেষ বাঁশির আগেই মাঠ ছাড়লেন ইমরান!

প্রকাশিত: ১৬:৫৭, ৩ এপ্রিল ২০২২

আপডেট: ১৭:২২, ৩ এপ্রিল ২০২২

ফন্ট সাইজ
শেষ বাঁশির আগেই মাঠ ছাড়লেন ইমরান!

ইমরান খান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থাভোটের দাবি তুলেছিলেন বিরোধীরা। কিন্তু রবিবার সেই অনাস্থা-প্রস্তাব বাতিল করেছেন ডেপুটি স্পিকার। এরপরই ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দিতে প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানান ইমরান খান। তাঁর প্রস্তাব মেনে নিয়ে অ্যাসেম্বলি ভেঙেও দেন প্রেসিডেন্ট। ফলে মেয়াদ শেষের আগেই ক্ষমতা ছাড়তে হচ্ছে তাকেও।

পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে কোনও প্রধানমন্ত্রীই নিজেদের ৫ বছরের পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করেননি। কখনও খুন হয়ে, আবার কখনও বিরোধী দলের অনাস্থার মুখে পড়ে গদি ছাড়তে হয়েছে প্রধানমন্ত্রীদের। ধারণা করা হয়েছিল সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান ভাঙবেন সেই রিতি। কিন্তু ২০১৮ সালে নির্বাচনে জয়ী পাকিস্তানের এই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বও খমতা ছাড়তে যাচ্ছেন এক বছর বাকি রেখেই।  চলুন দেখে নেই পাকিস্তানের কোন প্রধানমন্ত্রী কতদিন ছিলেন।

স্বাধীন পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান। ১৯৪৭ সালের ১৪ অগস্ট তিনি দায়িত্বভার নেন। কিন্তু চার বছর ৬৩ দিন ক্ষমতায় থাকার পর ১৯৫১ সালের ১৬ অক্টোবর এক জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার সময় আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারান লিয়াকত আলি খান।

তাঁর পর পাক মসনদে বসেন খাজা নাজিমুদ্দিন। তিনি ১৯৫১ সালের ১৭ অক্টোবর থেকে ১৯৫৩ সালের ১৭ অগস্ট পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পদে বহাল ছিলেন। তাঁর সময়কালে বাংলা ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশ ও লাহোরে একাধিক ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হওয়ায় এক বছর ১৮২ দিন ক্ষমতায় থাকার পর পদচ্যুত করেন পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল মালিক গোলাম। 

পাকিস্তানের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী হন মোহাম্মদ আলী বোগরা। তিনি ১৯৫৩ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে মোট দু’বছর ১১৭ দিন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শাসন করেন। নিয়োগের পরপরই, আঞ্চলিক বৈষম্য নিয়ে তৎকালীন গভর্নর-জেনারেল ইসকান্দার মির্জার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বোগরার সমস্যা শুরু হয়। এর পরই বোগরাকে একপ্রকার ইস্তফা দিতে বাধ্য করেন ইসকান্দার।

মোহাম্মদ আলী বোগরার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন চৌধুরী মোহম্মদ আলী। ১৯৫৫ সাল থেকে শুরু করে এক বছরের কিছু বেশি সময় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বহাল ছিলেন আলী। দলবিরোধী কাজকর্মের জন্য তাঁকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরানো হয়।

পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হন হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী। তিনি ১৯৫৬ থেকে শুরু করে এক বছর ৩৫ দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে গভর্নর জেনারেল ইসকান্দারের চাপের মুখে পড়ে পদ ছাড়তে হয় সোহ্‌রাওয়ার্দীকেও।

পাকিস্তানের ষষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হন ইবরাহিম ইসমাইল চুন্দ্রিগড়। মাত্র দু’মাস ক্ষমতায় থাকার পর রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনার কথা বলায় তাঁকেও অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরানো হয়।

এর পর আসেন স্যার মালিক ফিরোজ খান নুন। খুব কম সময়ে ফিরোজের জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছয়। মনে করা হয়, পাকিস্তানের সম্পূর্ণ ক্ষমতা দখলের ইচ্ছায় ফিরোজ বাধ সাধতে পারেন, এই ভয়ে ২৯৫ দিন ক্ষমতায় থাকার পর পদচ্যুত করা হয় তাকেও।

দেশটির অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হন নুরুল আমিন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি আয়ুব খানের সঙ্গে মনোমালিন্য হওয়ায়  মাত্র ১৩ দিন পর তিনি নিজের পদ ছাড়েন। তিনি পাকিস্তানের শেষ বাঙালি নেতা হিসেবেও পরিচিত।

তারপর পাকিস্তানের ৯ম প্রধানমন্ত্রী হন পিপলস্‌ পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো। ১৯৭৩ সাল থেকে শুরু করে তিন বছর ৩২৫ দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি। ১৯৭৭ সালের ৫ জুলাই সামরিক বাহিনী ভুট্টোকে ক্ষমতাচ্যূত করে।

জুলফিকার আলী ভুট্টোকে সরিয়ে ক্ষমতায় আনা হয় মুহাম্মদ খান জুনেজোকে। কিন্তু ৩ বছরের কিছু বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার পর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অযোগ্য এবং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার জন্য দায়ী করে তাকেও পদ থেকে সরান রাষ্ট্রপতি জিয়া।

পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসেন জুলফিকার আলী ভুট্টোর মেয়ে বেনজীর ভুট্টো। তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রায় দু’বছর ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু দুর্নীতি ও স্বজনপ্রিয়তার অভিযোগ এনে ১৯৯০ তাঁকে বরখাস্ত করা হয়।

বেনজীর ভুট্টোর পরে প্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজ শরিফ। ১৯৯৩ সালে রাষ্ট্রপতি ইসহাক পাক সংসদ ভেঙে দেওয়ার পর তিনি গদিচ্যূত হন এবং বিরোধী নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

১৯৯৩ সালের নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয়বারের মত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বেনজীর ভুট্টো। কিন্তু পূর্বের অভিযোগেই ১৯৯৬ সালে তাকে পুনরায় বরখাস্ত করা হয়। বেনজীর ভূট্টোকে সরানোর পর পাকিস্তানের চর্তুদশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আবারও বসেন নওয়াজ শরিফ। কিন্তু দু’বছর ২৩৭ দিন পর ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানের ফলে তার শাসনকালের অবসান ঘটে।

এর পর ক্ষমতায় আসেন জাফরুল্লাহ খান জামালী। তবে প্রায় দু’বছর পর হঠাৎ নিজেই পদ থেকে সরে যান তিনি। যদিও সেনাপ্রধান পারভেজ মোশারফ তাকে পদত্যাগে বাধ্য করেছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়।

ষষ্ঠদশ প্রধানমন্ত্রী হয়ে ৫৭ দিন দায়িত্ব পালন করেন চৌধুরী সুজাত হোসেন। এরপর তিনি নিজেই পদ ছেড়ে দেন শওকত আজিজকে।
মোশারফের ডান হাত হিসেবে পরিচিত ছিলেন শওকত। তিনি ৩ বছর ক্ষমতায় থাকার পর নিজে থেকেই সরে যান।

শওকতের পর প্রধানমন্ত্রী হন ইউসুফ রাজা গিলানী। তিনি  ২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৪ বছর ৮৬ দিন ক্ষমতায় ছিলেন। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রধানমন্ত্রী পদে গিলানিই সব থেকে বেশি দিন বহাল ছিলেন। তবে একাধিক দুর্নীতির মামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর প্রধানমন্ত্রী পদ খারিজ করে।

উনিশতম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে মাত্র ২৭৫ দিন ক্ষমতায় ছিলেন পারভেজ আশরফ। ২০১৩ সালে ২৪ মার্চ তিনি পদ ছাড়েন। তাঁকেও একাধিক দুর্নীতির মামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতারের নির্দেশ দেয় পাক সুপ্রিম কোর্ট।

২০১৩ সালে ফের ক্ষমতায় আসেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নওয়াজ শরিফ। তবে তৃতীয় বারের এই প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালে পানামা পেপার দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ক্ষমতাচ্যূত হন। সুপ্রিম কোর্ট ২০১৮ সালে তাঁকে ১০ বছরের জন্য কারাবাসে পাঠানোরও নির্দেশ দেন।

নওয়াজ শরিফের পর নির্বাচিত হয়ে একুশতম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন শাহিদ খকন আব্বাসি। কিন্তু ৩০৩ দিন পর ২০১৮ সালে নির্বাচনের মুখে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়তে হয়। এরপরই আসেন ইমরান খান।
 

বিভি/কেএস

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2