• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

ঘরে ঘরে সুন্দরী তরুণী কিন্তু পাত্রের অভাবে বিয়ে হচ্ছে না

প্রকাশিত: ১৪:৫৬, ৮ আগস্ট ২০২২

আপডেট: ১৫:০৭, ৮ আগস্ট ২০২২

ফন্ট সাইজ
ঘরে ঘরে সুন্দরী তরুণী কিন্তু পাত্রের অভাবে বিয়ে হচ্ছে না

এই গ্রামের কোনও মেয়েকে বিয়ে করলে ঘর জামাই হয়ে থেকে যেতে হবে বউয়ের ঘরেই।

ব্রাজিলের ছোট্ট গ্রাম ‘নয়ভা ডো করডেইরো’ (Noiva Do Cordeiro)। ছবির মতো সুন্দর সে গ্রামে বসবাস করেন প্রায় ৬০০ নারী। তাঁদের মধ্যে অর্ধেকই যুবতী বিবাহযোগ্যা। সারাদিন তারা হেসেখেলে বেড়াচ্ছেন এক বুক কষ্ট নিয়ে। কারণ তাঁদের গ্রামে প্রেম বা বিয়ে করার মতো কোন পূরুষ নাই ! ওখানকার পূরুষরা কৌশর পেরুলেই কাজ করতে বিদেশে চলে যান। আর তাদের ফেরা হয়না। এমনকি অন্য গ্রাম বা এলাকার কোনও পুরুষ রাজিও হন না এই গ্রামের কোন নারীকে বিয়ে করতে।

তরুণীরা অধির অপেক্ষায় থাকেন, যদি কোনও পুরুষ এসে তাঁদের বিয়ে করে তার সঙ্গে ঘর বাঁধেন!

বাঁধা এক অদ্ভুত নিয়ম। এই গ্রামের কোনও মেয়েকে বিয়ে করলে ঘর জামাই হয়ে থেকে যেতে হবে বউয়ের ঘরেই। এমনকি চাকরি-ব্যবসা ছেড়ে করতে হবে ঘরকন্নার কাজ। এই অদ্ভুত শর্তই পুরুষ-অহং বিসর্জন দিয়ে মেনে নিতে পারেন না। আর নারীরাও শতাব্দি পূরানো প্র্রথা বিসর্জন দিতে রাজি নন। তাই এই গ্রামের তরুণীরা অধির অপেক্ষায় থাকেন, যদি কোনও পুরুষ এসে তাঁদের বিয়ে করে তার সঙ্গে ঘর বাঁধেন!

তবে সঙ্গিহীন এই নারীরা অসম্ভব সৌখিন। সুন্দর করে সাজিয়েগুছিয়ে রাখেন পূরো গ্রাম। তাদের বাড়িগুলি গোলাপি রঙে রাঙানো। গাছপালা সুন্দর করে ছেঁটে রঙিন ফিতে দিয়ে সাজানো। ঘরের কাজ, বাইরের কাজ, দোকান, বাজার, অফিস সবই চালাচ্ছেন ফিটফাট, সুন্দরী ও আকর্ষণীয় মেয়েরা। প্রাণ খোলা ঐ তরুণীদের রূপের বাহারে ‘নয়ভা ডো করডেইরো’ যেন রূপকথার দেশ।

কিন্তু এত সুন্দর গ্রামের সুন্দরী মেয়েদেরও জীবনের দীর্ঘশ্বাস একটাই। কোন পুরুষ নেই তাঁদের জীবনে। তাঁরা কিন্তু প্রেমে পড়তেও তৈরি, রাজি বিয়ে করতেও। স্বপ্নের পুরুষ কেমন হবেন, তা নিয়ে ফ্যান্টাসিরও শেষ নেই। কিন্তু ওই পর্যন্তই। একটা চুমুও যেন জুটতে নেই তাঁদের কপালে।

এই অদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে দুই ধরণে কিংবদন্তি চালু আছে। শুরুটা ১৮৯১ সালে। ব্রাজিলের একটি গ্রামে মারিয়া সেনহোরিনা ডি লিমা নামে এক তরুণীকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। কিছুদিন পর তিনি স্বামীকে ছেড়ে বাপের বাড়ি ফিরে চলে আসেন। কিন্তু মারিয়ার এই বিদ্রোহ মেনে নেয়নি সমাজ। আপত্তি জানায় চার্চও। গ্রাম থেকে বেড় করে দেওয়া হয় তাকে। নিজ সমাজ থেকে বিতারিত মারিয়া তখন প্রত্যন্ত নয়ভা ডো করডেইরো গ্রামে চলে আসেন এবং সেখানে নারীদের নিয়ে একটি সম্প্রদায় গড়ে তোলেন। নতুন নিয়ম করেন, এই সম্প্রদায়ের মেয়েরা বিয়ের পরে কেউ স্বামীরবাড়ি যাবেন না, স্বামীকে স্ত্রীর বাড়িতে এসে থাকতে হবে। সেই থেকে এই নিয়ম। 

বিয়ে করলে যুবকরা রাজকন্যার সঙ্গে পাবেন রাজত্বও। কারণ পরিশ্রমি এই নারীরা প্রায় সকলেই স্বচ্ছল

আরেক কিংবদন্তি অনুযায়ী ১৯৪০ সাল নাগাদ এই নয়ভা গ্রামের এক ষোলো বছরের কিশোরীকে বিয়ে করে এক যুবক। তার পরে গ্রামে একটি গির্জা প্রতিষ্ঠা করে মহিলাদের জন্য একাধিক কঠোর নিয়ম জারি করে। নারীদের মদ্যপান, গান শোনা, লম্বা চুল রাখা, গর্ভনিরোধক গ্রহণ করা– সবই নিষিদ্ধ করে দেয় সেই যুবক। কঠোর নিয়মের জেরে নারীদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এর পরে সেই যুবকের মৃত্যুর পর মহিলারা ওকজোট হয়ে ঠিক করেন, গ্রামে আর কোনও পুরুষের শাসন চলতে দেওয়া হবে না। নারীরাই হবেন সর্বেসর্বা।

সেই থেকে ‘নয়ভা ডো করডেইরো’ গ্রামে শুরু হয় নারীদের শাসন। নিয়ম করা হয়, বিয়ে করে স্ত্রীর কাছেই থাকতে হবে স্বামীদের। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে শিক্ষিত স্বাধীন চেতা পূরুষরা এই নিয়ম আর মানতে চান না। নিজের মতো বাঁচতে তারা গ্রাম ছাড়েন। ক্রমে পূরুষ শুণ্য হয়ে পরে গ্রামটি। ফলে মেয়েদেরও আর বিয়ে হয় না ওই গ্রামে।

বিয়ে করলে যুবকরা রাজকন্যার সঙ্গে পাবেন রাজত্বও। কারণ পরিশ্রমি এই নারীরা প্রায় সকলেই স্বচ্ছল

তবে বিয়ের জন্য এই সুন্দরী নারীরা সবসময় তৈরি। বাইরে থেকে কেউ এসে যদি বিয়ে করতে চান, তাহলে সুন্দরীরা তা তখনই মেনে নেবেন। বিবাহ করতে রাজি হওয়া যুবকরা রাজকন্যার সঙ্গে পাবেন রাজত্বও। কারণ পরিশ্রমি এই নারীরা প্রায় সকলেই স্বচ্ছল। তবে বিয়ে করার শর্ত একটাই, স্ত্রীর বাড়িতে থেকে যেতে হবে ঘর জামাই হয়ে। ঘরকন্নার কাজও করতে হবে। পুরুষ-অহং বিসর্জন দিয়ে মেনে চলতে হবে নিজ স্ত্রীসহ নারীদের আধিপত্য।

তথ্যসূত্র : দ্যা ওয়াল

মন্তব্য করুন: