স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়া থেকে বাঁচতে নিউরোলজিস্টের ৫ পরামর্শ

মানুষের বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্কের যত্ন নেওয়াও জরুরি। স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়া একটি জটিল নিউরোকগনিটিভ রোগ। এ রোগে আক্রন্তদের স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়াসহ চিন্তাভাবনা ও দৈনন্দিন কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫৭ মিলিয়ন মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। তবে জীবনধারায় কিছু পরিবর্তন এনে মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখা এবং স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের শীর্ষ নিউরোলজিস্ট এবং অ্যালঝাইমারস রিসার্চ ইউকে'র প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা অধ্যাপক জোনাথন স্কট সম্প্রতি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য উন্নত করতে ও ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে পাঁচটি কার্যকর উপায় শেয়ার করেছেন। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো।
১. নতুন কিছু শেখা
মস্তিষ্ককে নতুন কোনো কিছুর সঙ্গে পরিচিত করালে নতুন স্নায়ু পথ তৈরি হয় এবং কগনিটিভ রিজার্ভ বাড়ে। এটি হতে পারে নতুন ভাষা শেখা, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, নতুন কোনো শখে মন দেয়া বা কোডিং, ছবি আঁকা কিংবা নাচ শেখার মতো সৃজনশীল কিছু। গবেষণায় দেখা গেছে, শেখার প্রক্রিয়া মস্তিষ্ককে সচল ও নমনীয় রাখে। অধ্যাপক স্কট বলেন, “যা ভালো লাগে তাই করুন। যদি সুডোকু ভালো না লাগে, তাহলে সেটি করার দরকার নেই।”
২. দিনে সক্রিয় থাকুন
মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে দৈহিক পরিশ্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত শরীরচর্চা রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং সার্বিক সুস্থতায় সহায়তা করে। অধ্যাপক স্কট বলেন, “এটাই সম্ভবত মস্তিষ্কের জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ।” তিনি সপ্তাহে ৩–৪ দিন অন্তত ২০ মিনিটের উচ্চ হৃৎস্পন্দন সৃষ্টিকারী ব্যায়ামের পরামর্শ দেন।
৩. হাঁটুন, বারবার হাঁটুন
জোরালো ব্যায়াম না করলেও নিয়মিত হাঁটা মস্তিষ্কের উপকারে আসে। স্কট বলেন, প্রতিদিন হাঁটার অভ্যাস রাখা অত্যন্ত উপকারী। 'আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, সারা জীবনে অল্প কিন্তু নিয়মিত পরিমাণে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকাটাই সবচেয়ে বেশি উপকার দেয়।'
২০২৩ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক মাত্র ৪,০০০ স্টেপ হাঁটলেও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ে এবং মস্তিষ্কের আকার বড় হয়, যা স্মৃতিভ্রংশ প্রতিরোধে সহায়ক।
৪. সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখুন
প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানো, গল্প করা ও সামাজিকভাবে যুক্ত থাকা মস্তিষ্ককে সচল রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, নিঃসঙ্গতা মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অংশের আকার কমিয়ে দিতে পারে, যা স্মৃতি তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এতে আলঝাইমারের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে। স্কট বলেন, “যা করতে ভালো লাগে, তা নিজের মতো করে করুন তবে অন্যদের সঙ্গেও করুন।”
৫. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন
রক্তচাপ শুধু হৃদরোগ নয়, মস্তিষ্কের সুস্থতার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ রক্তচাপ মস্তিষ্কের রক্তনালীতে চাপ সৃষ্টি করে এবং সেরিব্রোভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়, যা ডিমেনশিয়ার অন্যতম কারণ। স্কট বলেন, “৩০ বা ৪০ বছর বয়স থেকেই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত।”
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: