• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

এই গরমে আপনার শিশুর যত্ন নিবেন যেভাবে

রাইয়ান আজমি

প্রকাশিত: ২২:০২, ৩০ জুন ২০২২

ফন্ট সাইজ
এই গরমে আপনার শিশুর যত্ন নিবেন যেভাবে

এই তীব্র দাবদাহ ও ভ্যাপসা গরম আপনার আদরের সন্তানটি কি মানিয়ে নিতে সক্ষম! আপনি কি জানেন গরমে শিশুদের কি কি স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে? তবে চিন্তিত না হয়ে সঠিক সতর্কতা অবলম্বন করলে, আপনি এবং আপনার শিশু গ্রীষ্ম কালটাকে দারুণভাবে উপভোগ করতে পারবেন.

গরমে শিশুদের যেসব স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে:
ভ্যাপসা গরমে বা প্রখর রোদে অনেক বাচ্চারই হঠাৎ করে নানারকম সমস্যা সৃষ্টি হয়। বাবা মা বুঝতেই পারেন না আসলে কি কারণে বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়ছে! নিম্নোক্ত লক্ষণগুলো দেখে মিলিয়ে নিতে পারেন আপনার বাচ্চারও অতিরিক্ত গরমের কারণে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না?

১) হিট র‍্যাশ
ত্বকে ছোট ছোট কতগুলো লালচে দাগ। এগুলোর কারণে ব্যাথা হতে পারে। বেবি পাউডার বা অন্য ট্যালকম পাউডার দিলে এই র‍্যাশ থেকে কিছুটা আরাম পাওয়া যায়। 

২) সানবার্ন 
সানবার্ন হওয়ার ঘটনা এতটাই সাধারণ যে এটাকে কেউ সমস্যা বলেই মনে করেন না। কিন্তু এটির কারণে ত্বক লালচে হয়ে যেতে পারে, ত্বকের উপরের চামড়া উঠে যেতে পারে। এমনকি দীর্ঘ কয়েক বছর এভাবে সানবার্ন হতে থাকলে একটা সময় এটি স্কিন ক্যান্সার পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারে। সানবার্ন থেকে বাঁচতে হলে বাচ্চাকে সানস্ক্রিন ও ছাতা ব্যাবহার করা শেখাতে হবে। 

৩) হিট ক্র্যাম্প
অতিরিক্ত গরমে শরীরচর্চা বা খেলাধুলা করার কারণে ঘামের সঙ্গে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় লবণ এবং অন্য তরল উপাদান বের হয়ে যায়, যার কারণে মাংসপেশিতে ব্যাথা হয়। কিছুক্ষণ পর পর বাচ্চারা পানি পান করতে ভুলে যাওয়ার কারণে তাদের এই সমস্যা আরও বেশি দেখা দেয়।

৪) ক্লান্তি
এটি অপেক্ষাকৃত গুরুতর সমস্যা। গরমে কেউ যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল না খায় তাহলে এই সমস্যা দেখা দেয়। এর প্রধান লক্ষণগুলো হলো-

●    তৃষ্ণা বেড়ে যাওয়া

●    দুর্বলতা

●    মাংসপেশিতে ব্যাথা

●    বমি ভাব, বমি করা

●    অজ্ঞান হয়ে যাওয়া

●    মাথাব্যথা

●    অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়া

●    শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি

৫) গরমে শিশুর হিটস্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা
অনেকের ধারণা হিটস্ট্রোক শুধু বড়দের হয়। অনেকে তো এটাকে গুরুত্বই দেন না, ভাবেন গরমে আবার স্ট্রোক হয় নাকি? আসল ব্যাপারটা হলো, তীব্র গরমে বাচ্চা এবং বড় সবারই হিটস্ট্রোক হতে পারে এবং উপরের দুই ধরনের অসুস্থতার চেয়ে এটা অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুতর। এমনকি এটি বাচ্চার মৃত্যুর কারণও হতে পারে।

তীব্র গরমে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে ১০৬° ফারেনহাইট (৪১.১° সেলসিয়াস) বা তার বেশি হয়ে গেলে মস্তিস্কের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন জরুরি চিকিৎসা না দেওয়া হলে এর কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।  বাচ্চারা ভারী জামাকাপড় পরে থাকলে অথবা দৌড়াদৌড়ি করে এবং একইসাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ তরল জাতীয় খাবার না খেলে তাদের হিটস্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। শহরাঞ্চলে অনেক বাবা-মা তাদের বাচ্চাদের মাঝরাস্তায় গাড়ির মধ্যে রেখে কেনাকাটা করতে যান। এ অবস্থায় বাইরের তাপমাত্রা যদি ৩৩ দশমিক ৯ ডিগ্রি  সেলসিয়াস থাকে, তাহলে গাড়ির ভেতরে মাত্র ২০ মিনিটে তাপমাত্রা ৫১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে যেতে পারে। সেই গাড়িতে বাচ্চা আটকে পড়লে তার শরীরের তাপমাত্রাও অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায় এবং হিটস্ট্রোক হয়।

হিটস্ট্রোকের লক্ষণগুলো:

প্রচণ্ড মাথাব্যাথা,

বমি ভাব ও বমি করা,

প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে যাওয়া,

শ্বাসকষ্ট, 

হার্টরেট বেড়ে যাওয়া, 

জ্ঞান হারানো,

খিঁচুনি, 

ঘাম না হওয়া,

শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া,

ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া ইত্যাদি। 


হিটস্ট্রোক হলে করণীয়:

বাচ্চার মাঝে হিটস্ট্রোকের একাধিক লক্ষণ দেখা দিলে প্রথমেই তাকে ছায়ায় বা ঠান্ডা কোনো স্থানে নিয়ে আসতে হবে। জামা-কাপড় খুলে পুরো শরীর পানিতে ভেজানো কাপড় দিয়ে মুছে দিতে হবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব বাচ্চাকে নিয়ে হাসপাতালে বা অন্য কোনো ক্লিনিকে নিয়ে যেতে হবে। বাচ্চার যদি জ্ঞান না থাকে তবে বাচ্চাকে কোনো তরল খাবার বা পানি না দেওয়াই ভালো।

গরমে শিশুর যত্নে কিছু প্রশ্নোত্তর:
গরমের উত্তাপ থেকে শিশুকে রক্ষা করতে হলে তাকে অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রা আছে এমন স্থানে রাখতে হবে। পরিমিত পরিমাণ তরল খাদ্য, পানি পান করানো, সুতি বা লিনেন কাপড়ের আরামদায়ক পোষাক পরানো হলে এবং, বাচ্চার স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন থাকলে অতিরিক্ত গরমের কারণে সৃষ্টি হওয়া জটিলতা থেকে বাচ্চাকে রক্ষা করা সম্ভব। আসুন জেনে নেই বিস্তারিত-

১) রৌদ্র থেকে কিভাবে শিশুকে সুরক্ষা দেবেন:
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, তীব্র রোদ থেকে বেঁচে থাকা এবং বেশি বেশি তরল জাতীয় খাবার খাওয়া। এই দুটি বিষয় খেয়াল রাখলে বেশিরভাগ অসুস্থতা থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। অনেক সময় বাচ্চাদের তৃষ্ণা থাকে না তাই পানি পান করে না যা একদমই ঠিক নয়। বাচ্চাদের গরমের দিনে বাইরে বের করাও উচিত নয়, আর করলেও ছাতা ও পানির বোতল সঙ্গে নেওয়া উচিত। 

২) গরমে বা ভ্যাপসা গরমে শিশুকে কীভাবে ঠান্ডা রাখবো:
কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চললেই শিশু এই এই গরমে সুস্থ থাকবে। আপনি হয়তো ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে কিছু জানেন এবং মেনেও চলেন। নিচের তালিকা দেখে মিলিয়ে নিতে পারেন বাচ্চাদের সুস্থ রাখতে আপনি কি কি করেন এবং নতুনভাবে কি কি করতে পারেন:

ঘুমানোর আগে কিছুক্ষণ এসি অন করে ঘর ঠান্ডা করতে পারেন। অথবা জানালা খুলে ফ্যান ছেড়ে দিলেও ঘর অনেক ঠান্ডা হয়।

সম্ভব হলে প্রতি ঘন্টায় শিশুকে লেবুর শরবত, ডাব, স্যালাইন ইত্যাদি দেওয়া উচিত। এতে বাচ্চার শরীর ঠান্ডা থাকে।

চওড়া হ্যাট অথবা টুপি পরলেও মাথা ও মুখে রোদ অনেকটা কম লাগে। এর সাথে সঙ্গে ব্যবহার করা উচিত।

সবসময় বাচ্চাকে হালকা রঙের সুতি বা কটন কাপড়ের পোশাক পরিয়ে রাখা উচিত।

৩) শিশুর থাকার পরিবেশ কেমন হবে:
অনেক সময় অতিরিক্ত গরম পরিবেশের কারণে শিশুর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়, যেমন ঘুম ঠিকমতো না হওয়া, অতিরিক্ত ঘামের কারণে ঠান্ডা লেগে যাওয়া ইত্যাদি। এসব সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে হলে শিশুর থাকার পরিবেশ আরামদায়ক করা প্রয়োজন। এরজন্য শিশুকে যে ঘরটা সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা এবং বেশি বাতাস চলাচল করে, সেখানে রাখা যেতে পারে। 

ভেজা তোয়ালে ও জামাকাপড় ঘরে শুকানোর জন্য মেলে দেওয়া যেতে পারে, যেন বাতাস ঠান্ডা হতে পারে। বেশি গরম পড়লে ঘরের মেঝেও গরম হয়ে যায় অনেক সময়। এক্ষেত্রে মেঝেতে ঘুমাতে চাইলে শীতল পাটি ব্যাবহার করা যেতে পারে। বিছানায় শীতল পাটি বিছিয়ে দিলেও গরম অনেকটাই কমে যায়। বাচ্চাদের বেশি সময় এয়ার কন্ডিশনের মাঝে রাখা উচিত নয়, এতে পরিবেশ শুষ্ক হয়ে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। অল্প সময় এসি অন করে ঘর ঠান্ডা হয়ে গেলে বন্ধ করে দেওয়া উচিত। অথবা পোর্টেবল মিনি এয়ার কুলার ব্যাবহার করতে পারেন, এতে ঘরের পরিবেশ ঠান্ডা হয়।

৪) গরমকালে শিশুর পরিধেয় কাপড় কি হবে:
গরমে শিশুকে এমন কাপড় পরাতে হবে যেন সে আরাম বোধ করে। লিনেন, সুতি, কটন কাপড়ের অনেক আরামদায়ক পোষাক বাজারে পাওয়া যায়। এসব কাপড় দিলে বাচ্চারা অতিরিক্ত গরমে অস্বস্তি অনুভব করবে না।

৫) গরমে শিশুর পানিশূন্যতা কিভাবে দূর করবো:
গরমকালের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান একটি সমস্যা হলো পানিশূন্যতা। দৌড়ঝাঁপ, খেলাধুলা করার কারণে ও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করার কারণে শিশুরা পানিশূন্যতায় বেশি ভুগে থাকে। পানিশূন্যতা দূর করার জন্য শিশুকে বেশি বেশি পানি পান করাতে হবে এবং এর সাথে যেসব খাবারে পানির পরিমাণ বেশি, যেমন স্যুপ, ডাল ইত্যাদি খাওয়াতে হবে। গরমের সময় উপকারী খাবারগুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হয়েছে। 

বাচ্চা যদি অনেক ছোট হয়, তাহলে তাকে ঘন ঘন বুকের দুধ, ফিডার দেওয়া উচিত, এতে পানিশূন্যতা দূর হয়। এর সঙ্গে মাকেও অনেক বেশি পরিমাণে তরল খাবার, পানি পান করতে হবে যেন বুকের দুধের তারল্য ঠিক থাকে এবং এর মাধ্যমে বাচ্চা পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পায়। বাচ্চার বয়স ছয় মাসের বেশি হলে বুকের দুধের পাশাপাশি ফুটানো ঠান্ডা পানিও দেওয়া উচিত। খেয়াল রাখতে হবে যেন বাচ্চা প্রতিদিন অন্তত ১-১.৫ লিটার পানি পান করে।

৬) গরমে শিশুদের খাবার কেমন হওয়া উচিৎ:
অন্য সতর্কতা অবলম্বন করার সঙ্গে শিশুর খাবারের প্রতিও খেয়াল রাখা দরকার। গরম আবহাওয়ায় এমন কিছু খাবার খাওয়া প্রয়োজন যেগুলো শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। গ্রীষ্মকালে যেসব ফল পাওয়া যায়, যেমন, তরমুজ, শশা, আনারস, ডাব ইত্যাদি খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। এসব খাবারে পানির পরিমাণ বেশি তাই পানিশূন্যতাও দূর করতে সহায়তা করে এসব ফলমূল। তাছাড়া দই, আম, কলাসহ অন্যান্য সবজি যেগুলোতে পানির পরিমাণ বেশি সেগুলোও বাচ্চাদের দেওয়া যায়। লেবু, কমলা, জাম্বুরা, অ্যালোভেরার জুসও এক্ষেত্রে অনেক উপকারী।

বিভি/এনএ

মন্তব্য করুন: