• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

সরকারি সুবিধা নিয়ে প্রচারে যেতে চেয়ে বিতর্কে জিএম কাদের

প্রকাশিত: ১৩:৫১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩

আপডেট: ১৩:৫৬, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
সরকারি সুবিধা নিয়ে প্রচারে যেতে চেয়ে বিতর্কে জিএম কাদের

জি এম কাদকে চ্যালেঞ্চ জানালেল তৃতীয় লিঙ্গের আনোয়ারা ইসলাম রানী

তফসিল ঘোষণার পর থেকে জি এম কাদের নিজ নির্বাচনী এলাকায় যাননি। এতদিন নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতার কোনো পর্যায়েই নিজের নির্বাচনি এলাকায় না যাওয়ায় তাকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছিল৷ অবশেষে ভোটের মাঠে নেমে তাতে ইতি টানলেও নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের৷


শুক্রবার ঢাকা থেকে রংপুরে গেছেন তিনি৷ প্রথমে সরকারি সুবিধা নিয়ে বিমানে রংপুরে যেতে চাইলেও আচরণবিধির কারণে পরে সড়ক পথে যেতে হয় তাকে৷ তবে উপনেতার জন্য বরাদ্দ ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়েই গেছেন তিনি৷

জি এম কাদেরসহ জাতীয় পার্টির কোনো কোনো নেতা সেভাবে প্রচারে না নামলেও কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদেরসহ জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকজন প্রার্থী ইতিমধ্যে  মাঠে নেমেছেন৷

জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি বাংলাভিশনের কন্টেন্ট পার্টনার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা সবাই নির্বাচনি প্রচারে নেমেছি৷ আমি নিজেও প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে এলাকায় অবস্থান করে জনসংযোগ করছি৷ ভোট পর্যন্ত আমি এলাকাতেই থাকবো৷ আমাদের সব নেতাই যার যার এলাকায় চলে গেছেন নির্বাচনি প্রচারে৷”

নাটকীয়তা শেষে ১৭ ডিসেম্বর নির্বাচনে থাকার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে জাতীয় পার্ট (জাপা)-র মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দাবি করেছিলেন, ২৮৩টি আসনে দলের প্রার্থীরা ‘লাঙ্গল' প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন৷ তবে ঢাকা-৬ আসনে দলটির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ এবং ঢাকা-১৩ আসনে প্রেসিডিয়াম সদস্য শফিকুল ইসলাম সেন্টুসহ ২৬ জন ঐদিনই নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন৷ ফলে শেষ পর্যন্ত দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ২৫৭টিতে জাপার প্রার্থী থাকে৷ এই ২৫৭ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন-সমঝোতায় জাপার যে ২৬ জন প্রার্থীর আসনে ‘নৌকা'র প্রার্থী নেই, তারা নিজ এলাকায় ভোটের মাঠে সক্রিয়৷ অবশিষ্ট ২৩১ জনের মধ্যে আট-দশ জন নিজ আসনে ‘নৌকা'র বিপরীতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে জোর প্রচারণায় নেমেছেন৷ বাকিরা বলতে গেলে নামেমাত্র প্রার্থী৷ তাদের মধ্যে অনেকেই কার্যত ভোটের মাঠেই নেই৷

জিএম কাদের একদিনও না এলেও জিতবেন: মোস্তফা


জাপার একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের লক্ষ্য বিরোধী দলের অবস্থান নিশ্চিত করা৷ কারণ, জাতীয় পার্টির চেয়ে সতন্ত্র প্রার্থী বেশি পাশ করলে বিরোধী দলের জায়গাটাও হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাদের৷

তফসিল ঘোষণার পর থেকে জি এম কাদের এলাকায় না যাওয়ায় নানা ধরনের সমালোচনা হচ্ছিল৷ ওই আসনে ইতিমধ্যে প্রচারণার আলো কেড়েছেন আনোয়ারা ইসলাম রানী৷  তৃতীয় লিঙ্গের এই প্রার্থী নির্বাচনি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন৷ আওয়ামী লীগের অনেকেই তাকে সমর্থন করছেন বলে স্থানীয় পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে৷

জিএম কাদের নির্বাচনের মাঠে নেই বলে মন্তব্য করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ারা ইসলাম রানী

আনোয়ারা ইসলাম রানী বলেন, "রংপুরের মানুষ বারবার জাতীয় পার্টিকে ভোট দিয়েছে৷ কিন্তু বিনিময়ে কী পেয়েছে? কিছুই পায়নি৷ জিএম কাদের এখনও এলাকায় যাওয়ারই সুযোগ পাননি, তাহলে তিনি নির্বাচিত হলে কিভাবে মানুষের পাশে থাকবেন? আমার পক্ষে এলাকায় জোয়ার উঠেছে৷ সাধারণ মানুষ টাকা দিয়ে আমার পোষ্টার বানাচ্ছে, প্রচারণা চালাচ্ছে৷ যদি আমার সঙ্গে অন্যায় করা না হয়, তাহলে আমি এক লাখ ভোটের ব্যবধানে পাশ করবো৷”

তবে রানীর এসব বক্তব্যকে আমলেই নিতে রাজি নন জাতীয় পার্টির নেতারা৷ রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগরের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা বলেন, "জিএম কাদের এলে  জিতবেন, একদিনও না এলেও জিতবেন৷ এটা তো একটা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন৷ বড় দুই-তিনটি দল নির্বাচন করছে না৷ বিএনপি যদি নির্বাচনে থাকতো, তা হলেও এখানে জাতীয় পার্টি জিততো৷ এবার ভোটারদের মধ্যে খুব একটা উৎসাহ নেই৷ ভোট কাস্ট খুব একটা বেশি হবে না৷ তারপরও যা ভোট পড়বে, তার ৮০ ভাগই পাবেন জি এম কাদের৷ সিটি কর্পোরেশনের ভোটে তো দেখেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে৷ এই আসনটা মূলত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের আসন৷ এরশাদ যখন চেয়ারম্যান ছিলেন তখন তিনি এমপি ছিলেন৷ রওশন এরশাদ যখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হলেন, তখন তিনি এখান থেকে এমপি হয়েছেন৷ এখন জি এম কাদের চেয়ারম্যান, তিনি এখান থেকে এমপি হবেন৷”

মানুষ জাতীয় পার্টিকে ভোট দিয়ে কী পেয়েছে?


আওয়ামী লীগ ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতে সহযোগিতা করছে কিনা জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির বলেন, "রংপুরে আমাদের আওয়ামী লীগের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন নেই৷ সদর আসনে তো আওয়ামী লীগ নেতারা তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার কথা বলছেন৷ অনেকে তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীর পক্ষেও মাঠে নেমেছেন৷ তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না৷ আর জি এম কাদেরকে কেন এলাকায় আসতে হবে? জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা আছেন না? তিনি একটা দলের প্রধান৷ তিনি তো সারা দেশে লাঙ্গলের পক্ষে প্রচারণা চালাবেন৷”

তবে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাজেদ আলী বলেন, "দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রংপুর সদরে আমাদের কোনো প্রার্থী নেই৷ এতদিন জাতীয় পার্টি আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি, ফলে আমরাও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখিনি৷ শুক্রবার তারা কায়েক জায়গায় প্রচারণার কাজে আমাদের ডেকেছে, আমাদের নেতা-কর্মীরা তাদের পক্ষেই প্রচারণা চালিয়েছে৷ তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না৷”

এদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন-সমঝোতার বাইরে থাকা জাতীয় পার্টির ২৩১ জন প্রার্থীর মধ্যে দশ জনের মতো প্রার্থী ‘লাঙ্গল' প্রতীক নিয়ে নিজ আসনে নৌকার বিপরীতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ার জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ তাদের মধ্যে রয়েছেন জাপার কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা (ঢাকা-৪) ও সালমা ইসলাম (ঢাকা-১), জাপার সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের স্ত্রী এবং পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাসরিন জাহান রত্না (বরিশাল-৬), প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা (নারায়ণগঞ্জ-৩), পীর ফজলুর রহমান (সুনামগঞ্জ-৪) এবং হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন (ঢাকা-৭)৷

প্রচারণার শুরুতেই বিতর্কের মুখে জি এম কাদের

সরকারি সুবিধা নিয়ে রংপুরে ভোটের প্রচারে যেতে চেয়েছিলেন জি এম কাদের৷ বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে তিনি ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি'৷ নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ১৪ ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনি প্রচারে সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনি কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড যোগ করতে পারবেন না'৷ শনিবার বিমানে তার যাওয়ার কথা থাকলেও সমালোচনার মুখে শুক্রবার সড়কপথেই তিনি রংপুরে গেছেন৷

গত বৃহস্পতিবার বিরোধী দলীয় উপনেতার কার্যালয়ের চিঠিতে জি এম কাদেরের রংপুর যাত্রাকে সরকারি সফর বলা হয়৷ তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সফরসঙ্গী হবেন জানিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে৷ বিরোধীদলীয় উপনেতা হিসেবে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা, বেতন-ভাতা এবং সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন জি এম কাদের৷ তার সফরের খরচ বহন করে সরকার৷

উপনেতার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আবু তৈয়ব স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, শনিবার সকাল ৯টায় উত্তরার বাসভবন থেকে সড়ক পথে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে যাবেন জি এম কাদের৷ ব্যবস্থাপনার জন্য ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনারকে জানানো হয়েছে৷ শনিবার সকাল ১০টায় বিমানে জাপা চেয়ারম্যান ঢাকা থেকে সৈয়দপুর যাবেন৷ ব্যবস্থাপনার জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে৷ সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে সড়ক পথে রংপুরের নির্বাচনি এলাকায় যাবেন জি এম কাদের৷ যে পথ দিয়ে তিনি যাবেন, ওই এলাকার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের ব্যবস্থাপনার জন্য বলা হয়েছে৷ আগামী সোমবার ফিরতি যাত্রায় অনুরূপ ব্যবস্থাপনার কথা বলা হয়েছে৷

সরকারি সফরে নির্বাচনি প্রচারে যাওয়ার সমালোচনা শুরু হওয়ায় একদিন আগে, শুক্রবার দুপুরেই জি এম কাদের সড়কপথে রওনা হন৷ উপনেতার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আবু তৈয়ব ডয়চে ভেলেকে বলেন, "শুক্রবার দুপুরেই তিনি সড়কপথে রওনা হয়েছেন৷ সোমবার তিনি ঢাকায় ফিরবেন৷ এটা সরকারি সফর না৷ উনি ব্যক্তিগত সফরে নির্বাচনি প্রচারণায় রংপুরে যাচ্ছেন৷”  

প্রসঙ্গত, গত ২০ অক্টোবর মুদ্রিত আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী,  প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সংসদ উপনেতা, বিরোধীদলীয় নেতা ও উপনেতা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী এবং তাদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, এমপি এবং সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি৷ ১৪(১) উপধারা অনুযায়ী, সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ভোটের প্রচারে সরকারি যানবাহন, প্রচারযন্ত্র এবং অন্য কোনো রকম সরকারি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না৷ সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবহার করতে পারবেন না৷ তবে জি এম কাদের উপনেতার জন্য বরাদ্দ ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে রংপুর গেছেন৷

মন্তব্য করুন: