২৫৭ কি.মি. বেগে ধেয়ে আসছে ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মেলিসা’
শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় মেলিসা স্থানীয় সময় রবিবার (২৭ অক্টোবর) দ্রুত শক্তি বাড়িয়ে এখন বিরল ক্যাটাগরি–৫ মাত্রার ঝড়ে পরিণত হয়েছে। ক্যারিবীয় সাগরে সৃষ্ট এ ঘূর্ণিঝড় বর্তমানে ঘণ্টায় প্রায় ২৫৭ কিলোমিটার (১৬০ মাইল) বেগে বয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) জানিয়েছে, মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালেই জ্যামাইকার দক্ষিণ উপকূলে আঘাত হানবে মেলিসা- যা দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে রেকর্ড হবে।
বর্তমানে ঝড়টির কেন্দ্র কিংস্টন থেকে প্রায় ১৩০ মাইল দক্ষিণে অবস্থান করছে এবং ঘণ্টায় মাত্র ৫ কিলোমিটার (৩ মাইল) বেগে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ‘নিরাপদ আশ্রয় থেকে বাইরে বের হবেন না,’ সোমবার সকালে এমন সতর্ক বার্তা দিয়েছে এনএইচসি।
সংস্থাটি জানায়, ‘রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রাণঘাতী আকস্মিক বন্যা ও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। আজ সন্ধ্যা থেকেই প্রবল বাতাস বইতে শুরু করবে, যা ব্যাপক অবকাঠামোগত ক্ষতি, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা এবং বহু এলাকা বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে।’
এরইমধ্যে জ্যামাইকার উপকূলে ট্রপিক্যাল স্টর্ম পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের মূল অংশ স্থলভাগে আঘাত করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে রোববার সন্ধ্যায় জ্যামাইকার সরকার উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাধ্যতামূলক সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে, যার মধ্যে রাজধানী কিংস্টনের কিছু অংশও রয়েছে। দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তরের প্রধান ইভান থম্পসন জানান, ‘ঝড়ের ঢেউ মূলত দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে আঘাত হানবে, বিশেষ করে কেন্দ্রের পূর্বদিকের উপকূলে।’
জ্যামাইকার পাশাপাশি পূর্ব কিউবার চারটি প্রদেশ—গ্রানমা, সান্তিয়াগো দে কিউবা, গুয়ারতানামো ও হোলগুইনে হারিকেন সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হাইতির বেশিরভাগ অংশে ট্রপিক্যাল স্টর্ম সতর্কতা এবং বাহামা ও টার্কস অ্যান্ড কাইকোস দ্বীপপুঞ্জে হারিকেন ওয়াচ ঘোষণা করা হয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরে ধীরগতিতে চলতে থাকা মেলিসা ইতিমধ্যে হাইতি ও ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে ব্যাপক বন্যা ও ভূমিধস সৃষ্টি করেছে। হাইতিতে অন্তত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে দুজন ভূমিধসে মারা গেছেন। ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে আরও একজন নিহত এবং এক হাজার জনেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেলিসার মতো ঘূর্ণিঝড়ের ‘অত্যন্ত দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি’ এখন আরও ঘন ঘন ঘটছে—যা জীবাশ্ম জ্বালানি দূষণজনিত বৈশ্বিক উষ্ণতার ফল। চলতি মৌসুমে আটলান্টিক অঞ্চলের চারটি বড় ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে তিনটিই এমন দ্রুত শক্তিবৃদ্ধির শিকার হয়েছে।
মেলিসার কারণে জ্যামাইকা ও দক্ষিণ হিস্পানিওলায় (হাইতি ও ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র) বৃষ্টিপাত ৭৬ সেন্টিমিটার (৩০ ইঞ্চি) পর্যন্ত হতে পারে, আর কিছু এলাকায় তা ১০০ সেন্টিমিটার (৪০ ইঞ্চি) ছাড়িয়ে যেতে পারে। পূর্ব কিউবায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫০ সেন্টিমিটার (২০ ইঞ্চি) পর্যন্ত হতে পারে।
জ্যামাইকায় ঘণ্টায় ২৫৭ কিলোমিটার গতির প্রবল বাতাসে গাছ উপড়ে পড়া, ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হওয়া ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা ব্যাপক আকারে ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া দপ্তর।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রী ক্রিস্টোফার টাফটন জানিয়েছেন, সব সরকারি হাসপাতাল ‘জরুরি মোডে’ রয়েছে এবং রোগী ভর্তি বাড়াতে অপ্রয়োজনীয় সার্জারি স্থগিত করা হয়েছে।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ডেসমন্ড ম্যাকেঞ্জি জানান, দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলোতে আশ্রয়কেন্দ্র ‘সক্রিয় করা হয়েছে’ এবং বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জ্যামাইকার জনগণ এখন দোয়া ও প্রস্তুতির মাঝেই অপেক্ষা করছে-কবে এবং কীভাবে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়টি তাদের দ্বীপে থাবা বসাবে।
সূত্র: সিএনএন
বিভি/টিটি




মন্তব্য করুন: