• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

কে ঠিক, জনগণকে নির্ধারণ করার সুযোগ দিন: ইসি মো. আলমগীর

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ৯ জুলাই ২০২২

ফন্ট সাইজ
কে ঠিক, জনগণকে নির্ধারণ করার সুযোগ দিন: ইসি মো. আলমগীর

নির্বাচনে কে আসবে, কে আসবে না এটি তো রাজনৈতিক কৌশল। আমরা যেটি চাই, আমরা চাই সবাই নির্বাচনে আসুক। আপনার যদি কোনো অভিযোগ থাকে, আপনি যদি মনে করেন আপনি ঠিক আছেন, অন্যরা ঠিক নাই। তাহলে জনগণকেই সেটি নির্ধারণ করার সুযোগ দেন। নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বাংলাভিশনের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে এমন কথা বলেন।

তিনি বলেন, আপনি (রাজনৈতিক দল) যদি নির্বাচনে না আসেন, তাহলে আপনার কথাই ঠিক, নাকি ঠিক না। এটি তো জনগণ নির্ধারণ করতে পারছে না। আপনি হয়তো বলতেছেন আপনি ঠিক, অন্যরা ঠিক নাই। সেটি বিচার করার দায়িত্ব কার? সেটি বিচার করার দায়িত্ব তো জনগণের, ভোটারের। ভোটারকে তো আপনি সেই সুযোগ দিচ্ছেন না। ভোটারদেরকে সেই সুযোগ না দিয়ে যদি বলেন- আমি ঠিক আরউনারা ঠিক না। তাহলে আপনার কথা তো বাজারে বেশিদিন টিকবে না।

বিএনপিকে সংলাপে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখেন আমরা বারবারই তাদেরকে ডাকবো। যতদিন তারা না আসবেন, ততদিন ডাকবো। আমরা ডাকতেই থাকবো। আহ্বান জানাবো এইটাই আমাদের দায়িত্ব। তবে হ্যাঁ, আমাদের সীমাবদ্ধতা আছে।

সংবিধান নির্বাচন করার অধিকার দিয়েছে যে কে নির্বাচন করবেন, কে নির্বাচন করবেন না। এটা সাংবিধানিক অধিকার। রাজনৈতিক দল হলেই যে তাকে অবশ্যই নির্বাচন করতে হবে এটি বলা নাই। তবে একটি কথা আছে- পরপর দুইবার যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে কমিশন তার নিবন্ধন বাতিল করে দিতে পারবে। পরপর দুইবার ধারাবাহিকভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে। একটি করে মাঝখানে বাদ দিয়ে আবার আরেকটি করলো তাহলে কিন্তু নিবন্ধন বাতিল হবে না।

ইভিএমের বিষয়ে দলগুলোর মতামত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইভিএম নিয়ে কোন রাজনৈতিক দল কি মতামত দিয়েছে সেটির কাজ চলছে। মতবিনিময় সভায় মিশ্র মতামত এসেছে। কেউ ইভিএমের পক্ষে মতামত দিয়েছেন, কোনো কোনো দল থেকে বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন, আবার কোনো কোনো দল ইভিএমে সরাসরি হ্যাঁ বলেননি, আবার সরাসরি নাও বলেননি। তারা কিছু কিছু শর্ত দিয়েছেন যে, এই শর্তগুলো যদি ইভিএম পূরণ করে তাহলে ব্যবহার করা যায়। আবার ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কেউ কেউ বলেছেন, এটা জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার না করে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যবহার করে মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা, এটির ব্যবহার শেখা বা মানুষ যাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠে। এরপর জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই জন্য আমরা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি। কারণ জানেন সামনে কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সভা করবে। সেখানে আরো অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। সেই সাথে ইভিএম বিষয়টিও থাকবে। এরপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

কতগুলো আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করবো। যেমন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ৩০০ আসনে ইভিএম হলেও তাদের আপত্তি নাই। কোনো কোনো আসনে করলে তাতেও আপত্তি নাই। আর একেবারে না করলেও তাদের কোনো আপত্তি নাই। এই বিষয়টি তারা নির্বাচন কমিশনের উপর ছেড়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত পাওয়ার পরও আমাদের বাজেট, যদি সব আসনে করতে হয় বা এখন যে দেড় লাখ আছে তার থেকে বেশি ব্যবহার করতে হয়, সেই ইভিএম তৈরি করা, টেন্ডার দেওয়া, তারপরে প্রস্তুতকারী তারা এটি তৈরি করে দেবেন। তারপর এর কোয়ালিটি চেকিং হবে, রাখার জায়গা ঠিক করতে হবে, ইভিএম যারা পরিচালনা করবেন তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, এরজন্য আবার বাজেট লাগবে, সময় লাগবে, লোক লাগবে। এগুলোর সবকিছু হিসাব নিকাশে নিয়েই আমরা হয়তো আরও দুয়েক মাস পরে চূড়ান্তভাবে বলতে পারবো যে, যদি আমরা ইভিএমে নির্বাচন করিও তাহলে কত আসনে করতে পারবো।

তিনি বলেন, ঠিক এই মুহূর্তে যদি আমাদের করতে হয়, তাহলে আমরা বলতে পারি আমাদের যে ক্যাপাসিটি আছে তাতে ম্যাক্সিমাম ১০০ আসনে করা যাবে, যদি সিদ্ধান্ত হয় ইভিএম এবং ব্যালট দুটোতেই আমরা নির্বাচন করবো। এখন ১০০ এর বেশি আসনে করার মতো অবস্থা আমাদের নেই। রাজনৈতিক দলগুলো সঙ্গে আলোচনা করার পরে যদি সিদ্ধান্ত হয় যে, আরো কিছু বাড়ানো প্রয়োজন বা ৩০০ আসনেই করা প্রয়োজন। আমাদের ওই কন্ডিশন দেখতে হবে যে, ৩০০ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করতে গেলে যে ধরণের সময়, অর্থ, কারিগরি দিক বিবেচনায় নিতে হবে। ৩০০ আসনে নির্বাচন করা সম্ভব হবে কিনা আমরা এই মুহূর্তে বুঝতে পারছি না।

ইভিএমের বিষয়ে আমাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কারণ তা না হলে আমাদের হাতে তো সময় থাকবে না। যদি নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেই যে, আমরা ধরেন দেড়শ আসনে ইভিএমে নির্বাচন করবো, আমাদের ইভিএম কিনতে হবে, কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে হবে, ট্রেনিং করাতে হবে এগুলো করতে তো সময় লাগে। যদি বেশি আসনে করার সিদ্ধান্ত নেই, তাহলে কি আমরা পারবো? পারবো না তো। এই জন্য আমাদের যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার পরই নিতে হবে যোগ করেন তিনি।

চার ধাপে নির্বাচন করার বিষয়ে কমিশনে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি মনে হয় একটি ভুল মেসেজ গেছে। আমাদের যে ট্রেডিশন সেটি হলো একদিনে নির্বাচন করা। কিন্তু আরপিওতে কিন্তু বলা আছে এক বা একাধিক দিন। যদি এমন অবস্থা হয় যে, চারদিনে করলে বা পাঁচ দিনে করলে বা ছয়দিনে করলে বা দুই দিনে করলে ভালো হয়। এটা হলো রাজনৈতিক দলগুলো যদি মনে করে। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল যদি বলে যে, হ্যাঁ ঠিক আছে এক দিনে না করে আপনারা বেশি দিনে করেন। সুধী সমাজ থেকে যারা এসেছিলেন তারা কিন্তু কেউ কেউ বলেছেন যে, এটা করলে অ্যান্ড ফোর্স বেশি বেশি মোতায়েন করা যাবে। আমরা কিন্তু সেটি গ্রহণও করিনি, বাতিলও করিনি। এটা একটা প্রস্তাব, প্রস্তাব হিসেবেই আছে। সেটি নিয়ে আমাদের মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন যে, কেউ কেউ চার দিনে করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। তার মানে এই না যে একাধিক দিনে নির্বাচন করার জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা একাধিক দিনের সিদ্ধান্ত নেইনি, একদিনেরও সিদ্ধান্ত নেইনি। এটা রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ আলোচনা করে আমাদের যে রোডম্যাপ তৈরি করা হবে, সেখানে বলে দেবো নির্বাচন একদিনে হবে না একাধিক দিনে হবে। আমরা কতটি আসনে ইভিএম করবো, কতগুলোতে ব্যালটের মাধ্যমে করবো, নাকি পুরোটাই ইভিএমে করবো। সেটি আমাদের রোডম্যাপে থাকবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের বিষয়ে তিনি বলেন, সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যে কোনো পরামর্শ দিতে পারেন। অর্থাৎ নির্বাচন ব্যবস্থাপনা, প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট বা ইভিএম, ব্যালট অথবা কমিশনের আরো কি কি দায়িত্ব পালন করা উচিৎ বা কমিশন কিভাবে দায়িত্ব পালন করলে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে বলে তারা মনে করেন। সমস্ত ব্যাপারে উনারা খোলামেলা আলোচনা করতে পারবেন এবং আমরা সেগুলো অত্যন্ত পজেটিভলি নেবো। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা দরকার সেসব পরামর্শ নেওয়া হবে।

নির্বাচনকে প্রশ্নহীন করার জন্য আরো নতুন কিছু ভাবছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা তো অবশ্যই। কারণ এটা তো একটি চলমান প্রক্রিয়া। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমরা শুধু সিসি ক্যামেরাই ব্যবহার করিনি। আমরা রিটার্নিং অফিসার, সহকারি রিটার্নিং অফিসার এদেরকে বাইরে থেকে দিয়েছি। তারপর প্রিজাইডিং অফিসার বাইরে থেকে দিয়েছি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অনেক আগে থেকেই মাঠে ছিল। এই ধরনের বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছি। আমাদের মাথায় আরও কিছু পরিকল্পনা আছে। এই মুহূর্তে সেগুলো বলা যাচ্ছে না। আমাদের একেকজনের মাথায় একেকজনের প্লান আছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করলে সেখান থেকে পরামর্শ পাবো।

তিনি বলেন, আমাদের উদ্দেশ্য হলো- নির্বাচনটা যেনো সুষ্ঠুভাবে হয়, ভোটার যেন তার নিজের পছন্দমত ভোট দিতে পারেন। ভোটের রেজাল্ট যেনো সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয় এবং সেটি মেনে নেওয়া। এটিই তো আমাদের সবার চাওয়া। তো আমাদের কালচারে সমস্যা আছে যে, যিনি নির্বাচনে হেরে যান তিনি ভোটগণনার আগ পর্যন্ত বলেন ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। গণনা করার পর যখন দেখেন হেরে গেছেন, তখন বলেন ভোট সুষ্ঠু হয়নি। এই কালচারটা আমাদের আছে।

ঈদের পর যে সংলাপ হবে। এটি শেষ হলে আবারও কি দলগুলো সঙ্গে সংলাপ করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি যে ফাইনাল সংলাপ তা কিন্তু নয়। নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত, এমন কি প্রয়োজনে নির্বাচনের আগেরদিন পর্যন্ত সংলাপ হতে পারে। কোনো রাজনৈতিক দল যদি মনে করে নির্বাচনের আগেরদিন কোনো একটি প্রস্তাব রাখে যে, এই কাজটি করলে নির্বাচনটি সুষ্ঠু হবে। আমরা সেদিনও ওয়েলকাম করবো। একবার নয়, এটি চলমান প্রক্রিয়া। সবসময় আমাদের দরজা খোলা থাকবে। এমন কি শুধু আমাদের ইনভাইটেশন না, কোনো রাজনৈতিক দল যদি মনে করে যে, আমরা আপনাদের সাথে দেখা করে কিছু মতামত রাখতে চাই। তাহলেও আমরা তাদের মতামতগুলো নেবো।

দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে নাকি আগে রোডম্যাপ তৈরি করে সংলাপে বসবেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা খসড়াটা করে ফেলেছি, এটি নিয়ে যখন উনাদের সঙ্গে বসবো। আমরা উনাদের কথা শুনবো।  যদি তাদের মতামতের সাথে মিলে যায়, তখন আমরা বলবো আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি আপনাদের সঙ্গে মিলে গেছে। যেটি মিলবে না সেটির সুবিধা অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করে উনারা আমাদেরকে কনভিনজড করার চেষ্টা করবে। উনারা যে প্রস্তাব দেবেন সেটি যে আমরা মেনে নেবো সেটি নাও হতে পারে। তখন আমরা তাদেরকে বলবো এইটা করলে এই এই সমস্যা আছে, এই এই সুবিধা আছে।

আপনাদের রোডম্যাপে বিশেষত্ব কি থাকছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটু পার্থক্য আছে। কারণ আগের কমিশনগুলো রোডম্যাপ তৈরি করে রাজনৈতিক দল বা সুধীজনের সঙ্গে সংলাপে বসেছেন। আমরা কিন্তু তা করিনি। আমরা রাজনৈতিক দল বা সুধীজনের সঙ্গে প্রথমে আলোচনা করেই কিন্তু রোডম্যাপ করছি। অর্থাৎ এতে বুঝা যায় যে, তাদের কথাবার্তার অনেক রিফ্ল্যাকশন এই রোডম্যাপে থাকবে। আমরা রোডম্যাপটি করার জন্য উনাদের পরামর্শ নিয়েছি। এরপর যখন চূড়ান্তটা করবো তখন উনাদের সঙ্গে কথা বলেই। তার মানে এই রোডম্যাপ আমাদের না। এই রোডম্যাপ রাজনৈতিক দলের যোগ করেন তিনি।

বিভি/এইচকে

মন্তব্য করুন: