• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

ড. ইউনূস ইস্যুতে চিঠির সমালোচনা করে ইইউ রিপোর্টে নিবন্ধ

প্রকাশিত: ০০:০১, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

ফন্ট সাইজ
ড. ইউনূস ইস্যুতে চিঠির সমালোচনা করে ইইউ রিপোর্টে নিবন্ধ

সম্প্রতি বাংলাদেশের নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন বিশ্বের ১৭০ এর বেশি বৈশ্বিক ব্যক্তিত্ব। ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে নানা প্রশ্ন রেখে পাল্টা খোলা চিঠি লিখেছেন লন্ডন-ভিত্তিক সাংবাদিক, লেখক এবং রাজনীতি ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক সৈয়দ বদরুল আহসান। তার ওই চিঠিটি প্রকাশ করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভিত্তিক নিউজ সাইট ইইউ রিপোর্ট।

বাংলাভিশনের পাঠকদের জন্য ওই নিবন্ধটি  তুলে ধরা হলো- 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি পাঠানো এবং একই সাথে সেই চিঠিটি সংবাদপত্রে একটি বিজ্ঞাপন হিসাবে প্রচার করার পরও স্বাক্ষরকারী ওই ১৭০ জন ব্যক্তিত্ব বুঝতে পারেনি যে এই ধরনের কাজটি উদ্দেশ্যমূলক ছিল। এই চিঠি শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীই নয়, পুরো সরকারকে অপমানিত করার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ। এছাড়াও ওই চিঠির ভাষা সরকার প্রধানকে সম্বোধনের উপযুক্ত নয়।

চিঠি প্রদানকৃত ব্যক্তিরা ড. ইউনূসের প্রশংসা করে বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদানকৃত ক্ষুদ্রঋণ জনপ্রিয় হয়। এবং তার অবদান বাংলাদেশের সামাজিক দৃশ্যপটে উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। যার ফলে ২০০৬ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পান। এখন আইনি জটিলতায় পড়ায় তারা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে কথা বলা উপযুক্ত বলে মনে করেছেন।

ওই চিঠির মাধ্যমে স্বাক্ষরকৃত ব্যক্তিরা শেখ হাসিনার সরকারকে চাপে রাখতে চেয়েছিলেন যা কেবল অপ্রীতিকর নয় বরং কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। সেইসাথে চিঠির ভাষা কেবল মর্মান্তিক নয়, আপত্তিকরও। তাদের এটা মাথায় রাখা দরকার ছিল যে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তারা চিঠি লিখছেন। আর যার হয়ে লিখছেন তিনি আর্থিক কোনো বিষয়ে আইনি লড়াই করছেন।

অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে চলমান আদালতের কার্যক্রম অবিলম্বে স্থগিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানিয়েছেন চিঠির লেখকরা। তারা পরামর্শ দিয়েছে যে উত্থাপিত অভিযোগগুলি নিরপেক্ষ বিচারকের একটি প্যানেল দ্বারা পর্যালোচনা করা হোক। ন্যায্যতা জন্য তারা এটাও জানিয়ে দিয়েছে যে পর্যালোচনার অংশ হিসাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কিছু বিশেষজ্ঞকে বোর্ডে আনা উচিত। তারা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন:

‘আমরা নিশ্চিত যে ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী ও শ্রম আইনের যে কোনো মামলার পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনার হলে তাকে খালাস দেওয়া হবে।’

সকলকে অবাক করে দিয়ে তারা বাংলাদেশের নেত্রীকে হুঁশিয়ার করে বলেছে- 'আগামীলিতে এই বিষয় কিভাবে সমাধান হয় তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য আমরা বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ জড়ো করবো।'

চিঠির লেখকরা সম্ভবত এই পয়েন্টটি মিস করেছেন যে, একবার আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হলে, এটি সম্পূর্ণ আইনি প্রক্রিয়া মেনে যথপোযুক্ত নিষ্পত্তি হয়। বিশ্বের কোথাও এমন কোনো আইনি ব্যবস্থা নেই যেখানে একটি মামলা, একবার এটি আদালতে শুরু হলে, কার্যক্রম থেকে অপসারণ করা যেতে পারে এবং একটি 'নিরপেক্ষ বিচারকদের প্যানেল'-এর কাছে হস্তান্তর করা যেতে পারে, কারণ এটি হবে আইনের সঙ্গে প্রতারণা। এছাড়াও, একটি দেশের স্বাভাবিক আইনে পরিচালিত একটি মামলা স্থগিত করা এবং এর বিবরণ আন্তর্জাতিকভাবে বিশেষজ্ঞদের কাছে হস্তান্তর করা সমীচীন নয়।

চিঠিতে নানান উপায়ে বাংলাদেশ সরকারকে ঘায়েল করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। এবং বাংলাদেশের জনগণকে একদল লোকের সামনে নতজানু করারও অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে। এটা আইনের শাসন থেকে বিচ্যুতি। চিঠির লেখকরা ইউনূসের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলি পর্যবেক্ষণ করার কথা বলেছে, যা বাস্তবে সরকারের জন্য একটি হুমকি। এ ধরনের দাবি দেখে মনে হচ্ছে তারা দাবি করে যে তারা তাই করবে ইচ্ছামতো যা তারা করতে চাইবে।

নোবেল বিজয়ী ও অন্যরা যারা চিঠিতে তাদের স্বাক্ষর রেখেছেন তারা স্পষ্টতই ইউনূসের বিষয় ছাড়াও অন্যান্য বিষয় দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে যা এই মুহুর্তে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ সকলের সন্তুষ্টির জন্য করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের প্রশ্নে প্রফেসর ইউনূসের রক্ষার বিষয় থেকে চিঠির লেখকরা সরে গেছেন। 
তাদের কথাগুলি লক্ষ্য করুন: ‘আমরা বিশ্বাস করি আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ। '

অসঙ্গতির বিষয়ে ভুল করা উচিত নয়। চিঠির পিছনের উদ্দেশ্যটি অনুধাবন করা কঠিন নয়। বাংলাদেশে আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্ধারিত নির্বাচনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে পথ দেখানোর বিষয়টি নিশ্চিত করার একটি স্পষ্ট উদ্দেশ্য এতে রয়েছে। হঠাৎ করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করার ধারণাটি ওঠে আসেনি যা বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ক্ষমতা থেকে ঠেলে দেবে বলে মনে হচ্ছে। 
চিঠির লেখকরা কেন ইউনূস মামলার সঙ্গে নির্বাচনের যোগসূত্র বেছে নিয়েছেন সেটি একটি উদ্বেগজনক প্রশ্ন। স্বচ্ছতা ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতা স্পষ্টতই কাজ করেনি। কাউকে অবাক করবে না যে, যারা এই চিঠিটি লিখেছেন এমন অনেক নারী ও পুরুষ বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের প্রতি তাদের অপছন্দ কখনও গোপন করেননি।

এটা দুঃখজনক, যারা চিঠিটি পড়েছেন তাদের জন্য নয়, চিঠির লেখকদের জন্য। বাংলাদেশ সরকারের এমন প্রকাশ্য নিন্দা যে পাল্টা প্রতিক্রিয়ার কারণ হবে তা বুঝতে তাদের ব্যর্থতা দুঃখজনক। চিরকালই তাদের ঐতিহ্যের জন্য গর্বিত একটি জাতি এই বাংলাদেশের জনগণ চিঠির মনোভাব ও বিষয়বস্তু দেখে হতবাক। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই চিঠি লেখকরা অতীতে বিশ্বজুড়ে জনসাধারণের মনোভাব সম্পর্কে অন্যান্য সরকার প্রধানদের কাছে একই ধরনের খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন কিনা তা নিয়ে দেশে প্রশ্ন উঠছে। 

এই প্রশ্নগুলি লক্ষ্য বিবেচনা করুন: কয়েক দশক ধরে গুয়ান্তানামো কারাগারে বিনা বিচারে আটকে থাকা এবং কারাবন্দিদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়ে এই বৈশ্বিক ব্যক্তিত্বরা কি কখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো রাষ্ট্রপতির কাছে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন?

কোন কারণ ছাড়াই ২০০৩ সালে  স্বাধীন দেশ  ইরাক আক্রমণ থেকে বিরত থাকতে এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে বিচারের নামে প্রহসণ করে যখন ফাঁসি দেয়া হয়েছিল এই  ব্যক্তিরা কি তখন মার্কিন রাষ্ট্রপতি এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে কোন  চিঠি লিখেছিলেন?

এই চিঠি লেখকরা কি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে হয়রানি বন্ধে, তার বিরুদ্ধে ১৫০টির বেশি মামলা প্রত্যাহার  এবং তার মুক্তির দাবিতে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের কাছে একটি উন্মুক্ত বার্তা পাঠানোর প্রয়োজন মনে করেছেন?

চিঠির লেখকরা নিজেদেরকে আইনের শাসনে বিশ্বাসী বলে মনে করে। তবে তারা কি  ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাদের বর্বর ভূমিকার কথা জেনেও কখনো বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডে দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত দুই খুনিকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে মার্কিন ও কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে লিখেছে?

২০০১ সালে অক্টোবরে সাধারণ নির্বাচনে জয়ের পরপরই আওয়ামী লীগ সমর্থক এবং সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর জোট সমর্থকরা যে তান্ডব চালিয়েছিল, তখন এর বিচার চেয়ে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার কাছে এই ধরনের কোন চিঠি পাঠানো হয়েছিল?

এই ব্যক্তিবর্গ কি রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে যে আলেক্সি নাভালনির বিরুদ্ধে সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া বাদ দিতে হবে এবং তাকে মুক্তি দিতে হবে এমন কোনো খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন? কিংবা এটিকে পশ্চিমা সংবাদপত্রে একটি বিজ্ঞাপন হিসাবে প্রচার করে দাবি করেছেন?

এই চিঠি লেখকরা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ পর্বে কোথায় ছিলেন? তারা কি যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে কোন খোলা চিঠি লিখেছেন যে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার স্বার্থে অ্যাসাঞ্জকে তার পেশা চালিয়ে যাওয়ার জন্য মুক্তি দিতে হবে?

এই চিঠির লেখকদের মধ্যে কতজন মিয়ানমারের সামরিক জান্তার কাছে বন্দী অং সান সুচির বিরুদ্ধে সমস্ত অভিযোগ প্রত্যাহার এবং মিয়ানমারের নির্বাচিত নেতা হিসাবে তাকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন? 

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের লক্ষ লক্ষ শরণার্থীকে বাংলাদেশ মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে। তাদের কবে দেশ ফিরিয়ে নেয়া হবে সে বিষয়ে  এসব ব্যক্তি কি মিয়ানমারের জান্তার কাছে জানতে চেয়েছেন?

মিশরে সাংবাদিকরা বছরের পর বছর ধরে সে দেশের কারাগারে বন্দী। রাষ্ট্রপতি আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির কাছে কি তাদের মুক্তির জন্য কোন খোলা চিঠি লেখা হয়েছে?

কয়েক বছর আগে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে খুন হন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। এই নোবেল বিজয়ী এবং বৈশ্বিক নেতারা কি সৌদি সরকারকে চিঠি লিখে এই ট্রাজেডির সত্যতা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন?

২০০৯ সালে সালে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর হাতে তামিল টাইগার এলটিটিই-এর পরাজয়ের পর তামিল সংখ্যালঘুদের উপর যে অত্যাচার হয়েছিল এবং তামিলদের দুঃখ-দুর্দশার জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবিতে শ্রীলংকা কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো খোলা চিঠি তো পাঠানো হয়নি।

সুষ্ঠু বিচারের জন্য ভন্ডামি কোন বিকল্প নয়। যেসব ব্যক্তি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিটি লিখেছেন তারা স্পষ্টতই ড. ইউনূস সম্পর্কে তাদের উদ্বেগ সরকারকে বিচক্ষণ কূটনৈতিক উপায়ে জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা যে ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ীকে তাদের উদ্বেগ প্রকাশের জন্য বেছে নিয়েছেন এটা মূলত বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর একটি কৌশল।

একজন ব্যক্তির এক ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করার বিষয়ে কৌতূহলী হওয়া ও অনাকাঙ্ক্ষিত কাজটি নিজেদের কাঁধে তুলে নেয়ার চেয়ে বরং ১৭০-এর বেশি বৈশ্বিক ব্যক্তিত্বদের আরও ভাল কিছু চিন্তা করা উচিত ছিল। তাদের এই কৌশলটি কোনো কাজেই আসঠে না।

ইইউ রিপোর্টের মূল নিবন্ধটি পড়তে চাইলে ক্লিক করুন এই লিঙ্কে।

বিভি/এ.জেড

মন্তব্য করুন: