• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

চিলেকোঠার সেপাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কথাসাহিত্যের অনন্য নক্ষত্র

প্রকাশিত: ০৭:৫৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১১:৪৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ফন্ট সাইজ
চিলেকোঠার সেপাই আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কথাসাহিত্যের অনন্য নক্ষত্র

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, বাংলা সাহিত্যের প্রথিতযশা কথাশিল্পী। বাংলা সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হিসেবে গণ্য "চিলেকোঠার সেপাই" ও "খোয়াবনামা"র স্রষ্টা আখতারুজ্জামান উপন্যাস ছাড়াও বেশ কিছু গল্প ও প্রবন্ধ লিখেছে। লেখালেখির জন্য পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ও একুশে পদক।

১৯৪৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা জেলার গোটিয়া গ্রামে মামার বাড়িতে জন্ম আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের। পুরো নাম আখতারুজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস, ডাক নাম মঞ্জু। তার পৈতৃক বাড়ি বগুড়া জেলায়। বাবা বদিউজ্জামান মোহাম্মদ ইলিয়াস পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (১৯৪৭-১৯৫৩) এবং মুসলিম লীগের পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি ছিলেন। মা, বেগম মরিয়ম ইলিয়াস। বগুড়া জিলা স্কুল থেকে ১৯৫৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষা এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬০ সালে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন আখতারুজ্জামান। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন ১৯৬৪ সালে। পড়াশোনা শেষে জগন্নাথ কলেজের প্রভাষক হিসাবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। এরপর বিভিন্ন সময়ে মিউজিক কলেজের উপাধ্যক্ষ, প্রাইমারি শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরিচালক, ঢাকা কলেজের বাংলার প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এই লেখক। মফিজউদ্দিন শিক্ষা কমিশনের সদস্য হিসাবেও কাজ করেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দেন, গোপনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। তার বিভিন্ন গল্পে পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধপরবর্তী রাজনৈতিক এবং সামাজিক বাস্তবতা। শুধু আমাদের নয়, সমগ্র বাংলা সাহিত্যের প্রেক্ষাপটে যদি বিবেচনা করি, তাহলে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর পাশাপাশি তাঁর নাম সর্বাগ্রে উচ্চারণ করতে হবে। বাংলা কথাসাহিত্যে তাঁর স্থান এখন প্রায় শীর্ষে। অথচ, কটা উপন্যাস আর গল্পই-বা লিখেছিলেন তিনি, উপন্যাসের সংখ্যা মাত্র দুটি, গল্পের সংখ্যা সবমিলিয়ে ২৭/২৮টি। এর বাইরে ইলিয়াসের আছে একটি প্রবন্ধ সংকলন আর কিছু কবিতা। কিন্তু সংখ্যায় নয়, গুণগত বিচারে তিনি সবাইকে প্রায় ছাড়িয়ে গেছেন। উপন্যাস রচনায় সমকালে তাঁর সমতুল্য একজন লেখককেও খুঁজে পাওয়া যাবে না- কী বাংলাদেশে, কী পশ্চিমবঙ্গে। গল্প রচনাতেও তিনি প্রথাগত পথ পরিত্যাগ করে একেবারেই নিজস্ব একটি ঘরানা তৈরি করে নিয়েছিলেন।

প্রবন্ধ সংকলন 'সংস্কৃতির ভাঙ্গা সেতু' (১৯৯৮)

তাঁর আবির্ভাবের কালটিও আমাদের ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস জন্মগ্রহণ সালের চার বছরের মাথায় ভারত-বিভক্তি ঘটে যায়। এই বিভক্তি, এই অঞ্চলের মানুষকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিল নতুন এক পরিস্থিতির মুখে। বিভক্তির আগেও সমকালীন রাজনৈতিক পরিস্থিতি এই বঙ্গভূমিতে যে আলোড়ন তুলেছিল, তার দ্বারাও প্রভাবিত হয়েছিল এই অঞ্চলের মানুষের জীবন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন তখন যেমন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিল, তেমনি প্রধান দু'টি সম্প্রদায় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে দেখা দিয়েছিল তীব্র টানাপোড়েন। ইলিয়াসের রচনাসমগ্রেও এর গভীর প্রভাব পড়েছে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য সমাজবাস্তবতা ও কালচেতনা; বিশেষ করে রচনাশৈলীর ক্ষেত্রে তিনি যে স্বকীয় বর্ণনারীতি ও সংলাপে কথ্যভাষার ব্যবহার লক্ষণীয় তা সমগ্র বাংলা কথাশিল্পে অনন্যসাধারণ। বাস্তবতার নিপুণ চিত্রণ, ইতিহাস ও রাজনৈতিক জ্ঞান, গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও সূক্ষ্ম কৌতুকবোধ তার রচনাকে দিয়েছে ব্যতিক্রমী সুষমা। তার সেরা কাজ চিলেকোঠার সেপাই আর খোয়াবনামা নামের উপন্যাস দু'টি। চিলেকোঠার সেপাই'র প্রেক্ষাপট উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান। খোয়াবনামা উপন্যাসের প্রেক্ষাপট আরও বিস্তৃত। এতে উঠে এসেছে  ইংরেজবিরোধী সংগ্রাম, ফকির-সন্ন্যাসী বিদ্রোহ এবং ভারত ভাগের কথা। কেবল তাই নয়-শত শত বছর ধরে মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায় যেভাবে তাদের ধর্মীয় পরিচয় অক্ষুন্ন রেখেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখেছিল, সে কথা উপন্যাসের নানা চরিত্রের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। উপন্যাস ছাড়াও লিখেছেন বেশ কিছু অসাধারণ গল্প। গল্প রচনাতেও তিনি প্রথাগত পথ ছাড়িয়ে একেবারেই নিজস্ব একটি ঘরানা তৈরি করে নিয়েছিলেন। তার প্রথম প্রকাশিত গল্প ‘নিরুদ্দেশ যাত্রা’একটি ঘোরগ্রস্ত যুবকের ঘুম না জটিলতাকে কেন্দ্র করে রচিত। সবমিলিয়ে পঁচটি গল্পগ্রন্থ রয়েছে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের। অন্যঘরে অন্যস্বর (১৯৭৬), খোঁয়ারি (১৯৮২), দুধভাতে উৎপাত (১৯৮৫), দোজখের ওম (১৯৮৯) ও জাল স্বপ্ন, স্বপ্নের জাল (১৯৯৭)। এছাড়া তার প্রবন্ধ সংকলন 'সংস্কৃতির ভাঙ্গা সেতু' (১৯৯৮)। এদেশের প্রগতিশীল ও মানবতাবাদী সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতি বরাবরই পরোক্ষ সমর্থন ছিল এই লেখকের। লেখালেখির পাশপাশি ভালো সংগঠক হিসাবেও ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। দেশের অন্যতম প্রধান প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। তার কিছু সাহিত্যকর্ম বিদেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং কিছু কাজের অনুবাদ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তার লেখা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছোটগল্প রেইনকোট অবলম্বনে মেঘমল্লার (২০১৫) চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে। এছাড়া, চিলেকোঠার সেপাই ও খোয়াবনামা উপন্যাস থেকে নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। এগুলোর মধ্যে হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৭), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮২), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), সাদত আলী আখন্দ পুরস্কার (১৯৯৫), কাজী মাহবুবুল্লাহ স্বর্ণপদক (১৯৯৬), কলকাতার আনন্দ পুরস্কার (১৯৯৬) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, ১৯৯৮ সালে এই লেখককে একুশে পদক (মরণোত্তর) দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ১৯৭৩ সালে বিয়ে করেন, তার স্ত্রীর নাম সুরাইয়া তুতুল। এই দম্পতির একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। লেখকের ছোট ভাই অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াসও, গদ্যলেখক ও অনুবাদক। ১৯৯৬ সালের ১৩ জানুয়ারি জটিল রোগ ক্যান্সার ধরা পড়ে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের। এক পর্যায়ে ক্যানসার আক্রান্ত ডান পা-টি পুরোপুরি কেটে ফেললেও শেষ রক্ষা হয়নি। এই রোগেই ১৯৯৭ সালের ৪ জানুয়ারি মাত্র ৫৪ বছর বয়সে পরলোকে পাড়ি জমান আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। বগুড়ার ভাই পাগলা মাজার কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে অন্তিম শয্যায় শায়িত হন লেখক। আজ এই ক্ষণজন্মা কথাশিল্পীর ৭৯তম জন্মদিন। শুভ জন্মদিন বাংলা সাহিত্যের অনন্য কথাশিল্পী আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। বিভি/এনজি  

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2