সেদিন পুলিশের বন্দুকের সামনে একাই দাঁড়িয়েছিলেন আবু সাঈদ

চব্বিশের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ। বৈষম্য আর অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তোলা এক নাম, সাহসের বাতিঘর। আবু সাঈদের হাত ধরেই অগ্নিস্ফুলিঙ্গে পরিণত হয়েছিলো চব্বিশের আন্দোলন। আবু সাঈদ থেকে শুরু হওয়া সেই শহীদের মিছিলে শামিল হন সহাস্রাধিক তাজা প্রাণ। আন্দোলনে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা মনে করেন, সেদিন পুলিশের বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে যে ইতিহাস রচনা করেছেন আবু সাঈদ, তার সেই সাহস আর প্রাণ উৎসর্গের ইতিহাস মানুষের হৃদয়ে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
কিছু মানুষ পৃথিবীতে আসেন ইতিহাস রচনা করতে। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে প্রথম হাসিমুখে ফাঁসির মঞ্চে ওঠা ক্ষুদিরাম, বাংলার প্রথম নারী শহীদ প্রীতিলতা আজও অমর হয়ে আছেন বাংলার ইতিহাসে।
ঠিক শত বছরেরও বেশি সময় পর তাদের দেখানো পথেই হাঁটলেন আবু সাঈদ। স্বৈরশাসনের থাবা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে বুক চিতিয়ে দাঁড়ালেন বন্দুকের নলের সামনে।
চব্বিশের আন্দোলনে পুলিশের গুলির সামনে দাঁড়িয়ে যে বারুদ ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন রংপুরের এই শিক্ষার্থী, সেই বারুদই অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল পুরো দেশজুড়ে। দিনটি ছিলো ২০২৪ এর ১৬ জুলাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন ছাত্রলীগের হামলায় নাস্তানাবুদ, তখন প্রতিরোধের দেয়াল তুলেছিলো রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পুলিশের বন্দুকের সামনে অসীম বিশ্বাস নিয়ে একাই দাঁড়িয়েছিলেন আবু সাঈদ। কিন্তু কে জানতো, সেই বিশ্বাসে ভরা আবু সাঈদের বুকটাকেই ঝাঁঝড়া করে দেবে পুলিশের উদ্ধত রাইফেল।
সেদিন আবু সাঈদ জীবন দিয়ে বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের যে দাবানল ছড়িয়ে দেন, সেই দাবানলেই টলে যায় স্বৈরাচারের মসনদ। আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে পুরো বাংলাদেশে। একই দিনে পুলিশের গুলিতে চট্টগ্রামে ৩জন, ঢাকায় ২জন নিহত হন। আহত হন সহস্রাধিক মানুষ।
১৬ জুলাই রাতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বন্ধ ঘোষণা করা হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে পদত্যাগ করেন ছাত্রলীগের অন্তত অর্ধশত নেতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নজিরবিহীন বর্বর হামলায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সর্বস্তরের মানুষ। কোটা আন্দোলন রূপ নিতে থাকে গণআন্দোলনে।
পৃথিবীতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে বুক পেতে মৃত্যুকে আলিঙ্গনের ইতিহাস রচিত হয় না রোজ। আবু সাঈদের দেখানো পথে যুগে যুগে দেশে দেশে লক্ষ সাঈদরা যে বুক পেতে দাঁড়ায়, চব্বিশের অভ্যুত্থান যেনো সেই ইতিহাসই নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে জুলুমবাজদের মসনদকে।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: