আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা প্রত্যাহার, শিক্ষার্থীদের রাজপথ অবরোধ

নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম ও হাসনাতসহ ৬ সমন্বয়ক আটক অবস্থায় আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণা জোরপূর্বক নেওয়া হয়েছে এমন দাবি করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ চালিয়ে যায়। আটক সমন্বয়কদের ডিবি কার্যালয়ে ভাত খাওয়ানোর ভিডিও প্রকাশ জাতির সাথে ‘মশকরা’ বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। এদিন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় আন্দোলন অব্যাহত ছিলো। নিজ বাসভবনে একের পর এক বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একবছর আগে ঠিক এই দিনে ঘটে যাওয়া ঘটনা এগুলো।
২৯ জুলাই ২০২৪। আটক অবস্থায় ডিবি কার্যালয় থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের আন্দোলন স্থগিত করার ঘোষণাকে প্রত্যাহার করে অন্যায়ভাবে সমন্বয়কদের আটক ও হয়রারির অভিযোগ এনে এর প্রতিবাদে রাস্তায় নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এদিন পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেলের মুখে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এদিন কারফিউ শিথিল থাকলেও রাজধানীতে কঠোর অবস্থানে ছিল পুলিশ। র্যাবের হেলিকপ্টার টহলও দেখা গিয়েছিলো।
ডিবি হেফাজতে থাকা কোটা আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের সাথে দেখা করতে যান তাদের পরিবারের সদস্যরা। তবে, তৎকালীন সরকারের চাপের মুখে নিজ সন্তানদের পরিস্থতি নিয়ে স্বস্তির বার্তা দিতে তাদের বাধ্য করা হয়েছিলো, তা বুঝতে আর কোন সন্দেহই ছিলো না দেশবাসীর। একই দিনে আটক সমন্বয়কদেরকে দেখতে ডিবি কার্যালয়ে গিয়েছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজ। তবে, কোন অজ্ঞাত কারণে তাকে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এদিন আটক ছয় সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজত থেকে মুক্তি ও আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালাতে আদালতের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিটের শুনানিও হয়। তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে ছয় সমন্বয়কের ভাত খাওয়ানোর ভিডিও প্রকাশ করা জাতির সাথে 'মশকরা' করা হয়েছে বলে শুনানিতে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।
গণভবনে একের পর এক বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৪ দলের সাথে জরুরি বৈঠকে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয় গত বছরের এদিনে। ছাত্রলীগ নেত্রীদের সাথে বৈঠকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে জঙ্গিবাদী কাজ বলে তকমা দেওয়া হয়। মন্ত্রীসভার বৈঠকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে পরদিন সারাদেশে শোক পালনের ঘোষণাও করা হয়েছিলো এই দিনে।
এদিন সরকার পতনের দাবিতে সকল রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনসহ দলমত নির্বিশেষে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছিলো ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ। যৌক্তিক অধিকারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনকে সহিংস আকার দেয়ার দায় সরকারের বলে দাবি করে গণতন্ত্র মঞ্চ। দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দায় নিয়ে সরকারকে পদত্যাগের আহবানও জানিয়েছিলো এই জোট।
সরকার শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়ে ভুল পথে হাটছে, এদিন-নিপীড়ন বিরোধী এক শিক্ষক সমাবেশে এমন অভিযোগ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। শিক্ষার্থীদের তুলে নেওয়া বন্ধ করে যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়ার পাশাপাশি অবিলম্বে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ও নির্যাতন বন্ধের জোর দাবি জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
এতকিছুর পরও তৎকালীন ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার প্রধান শেখ হাসিনার সুবোধ ফিরো আসেনি। তার দমন-পীড়ন কমার বদলে প্রাণ নিয়েছিলো আরো নিরপরাধ শিক্ষার্থীর।
বিভি/পিএইচ
মন্তব্য করুন: