‘দুদক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত আইন দুই-এক মাসের মধ্যে প্রণয়ন হবে’

ছবি: সংগৃহীত
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কার সংক্রান্ত কমিশনের প্রস্তাবিত আইনগুলো আগামী দুই-এক মাসের মধ্যে প্রণয়ন করা হবে। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংস্থার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
ইতোমধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে দুদক সংস্কার কমিশনের সব সুপারিশের পক্ষেই মোটাদাগে রাজনৈতিক দলগুলো নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন বিষয়ক সংস্কার কমিশন দুদক সংস্কারের বিষয়ে কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। দুদক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত আইনগুলো আগামী দু-এক মাসের মধ্যে প্রণয়ন করা হবে।’
গত বছরের ৫ অগাস্ট ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের হাল ধরা অন্তর্বর্তী সরকার দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ নেয়।
এর অংশ হিসেবে প্রথম ধাপে ৩ অক্টোবর গঠিত হয় নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রসাশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন। ৬ অক্টোবর গঠিত হয় সংবিধান সংস্কার কমিশন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানের নেতৃত্বে আট সদস্যের দুদক সংস্কার কমিশন ১৫ জানুয়ারি প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেয়।
প্রতিবেদনে ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে সংবিধানের অঙ্গীকার, দুর্নীতি বিরোধী কৌশলপত্র প্রণয়ন, ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা ও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিলের প্রস্তাবসহ ৪৭ দফা সুপারিশ করা হয়।
গেল ২৬ মে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের সবগুলো সুপারিশের পক্ষেই মোটাদাগে রাজনৈতিক দলগুলো নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় ও আইনি ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসন ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের সুপারিশের বিষয়ে সব দল একমত পোষণ করেছে।’
দুদকের স্বাধীনতা, কার্যকরতা ও গতিশীলতার পাশাপাশি এর স্বচ্ছতা, নৈতিকতা ও জবাবদিহিতার জন্য প্রস্তাবিত সব সুপারিশ সম্পর্কে প্রায় সব দলই সম্পূর্ণ একমত হয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুদককে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তাবে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল একমত পোষণ করেছে। দু-একটি দল বিষয়টি নিয়ে নির্বাচিত সংসদে আলোচনা হতে পারে বলে মত দিয়েছে।
দুদক সংস্কারে আরও যেসব সুপারিশের দলগুলো একমত হয়েছে সেগুলো হলো-
১। দুর্নীতিবিরোধী ন্যায়পালের পদ সৃষ্টি করে ন্যায়পালকে দুর্নীতিবিরোধী জাতীয় কৌশলপত্রের যথাযথ প্রতিপালন নিশ্চিত করার জন্য ক্ষমতায়িত করার প্রস্তাবে অধিকাংশ দল নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেছে। তবে এই বিষয়টি অমীমাংসিত থেকে গেছে, কেননা কোনো কোনো দল এই বিষয়ে আংশিক একমত।
২। রাজনৈতিক ও নির্বাচনি অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চা নিশ্চিতের লক্ষ্যে আনীত প্রস্তাবে নীতিগতভাবে বা আংশিক একমত হয়েছে সবগুলো দল।
৩। সেবা প্রদানকারী সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা কার্যক্রম ও তথ্য-ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণ (এন্ড-টু-এন্ড) অটোমেশনের আওতায় আনার প্রস্তাবে সব দল একমত পোষণ করেছে।
৪। কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশকে রাষ্ট্রীযভাবে কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড ও উন্মুক্ত সরকার ব্যবস্থায় সহায়ক হিসেবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয়ভাবে Open Government Partnership এর পক্ষভুক্ত হওয়ার প্রস্তাবে অধিকাংশ দল একমত পোষণ করেছে।
৫। ইউএন কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট করাপশন এর অনুচ্ছেদ ২১ অনুসারে বেসরকারি খাতের ঘুষ লেনদেনকে স্বতন্ত্র অপরাধ হিসেবে শাস্তির আওতায় আনার সুপারিশের বিষয়ে সব দল একমত পোষণ করেছে।
বিভি/এসজি
মন্তব্য করুন: