• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

নীলফামারীতে শ্রমিকের প্রাণহানীর প্রতিবাদ

নির্বাচনী তফসিলের আগে শ্রম আইন সংশোধনের দাবি

প্রকাশিত: ১৯:০০, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৯:২৯, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
নির্বাচনী তফসিলের আগে শ্রম আইন সংশোধনের দাবি

নীলফামারীতে শ্রমিকের প্রাণহানীর প্রতিবাদ এবং জুলাই সনদে গণতান্ত্রকি শ্রম আইনের নিশ্চয়তা ও নির্বাচনী তফসিলের আগে শ্রম আইন সংশোধনের দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০.৩০টায় বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে উক্ত সমাবেশ আয়োজন করা হয়। এতে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহীম চৌধুরীর পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপ্রধান তাসলিমা আখ্তার, প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল। আরও বক্তব্য রাখেন গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতি নেতা কেন্দ্রীয় সহ সভাপ্রধান অঞ্জন দাসসহ, শ্রমিক নেতা আকলিমা আখতার, হযরত বিল্লাল, নুরুল ইসলম, আরশাদুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, শাহীদা বেগম, হাবিবুর রহমান ও অন্যান্য নেতৃত্ব। সমাবেশে সংহতি বক্তব্য রাখেন, নারী সংহতির সাধারণ সম্পাদক অপরাজতিা দেব, ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, বহুমুখী শ্রমজীবী হকার সমিতির সভাপতি নেতা বাচ্চু ভুইয়া, আউসোর্সিং কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা নুরুল হক, দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা সাইফুল ইসলাম অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। সমাবেশ শেষে প্রতিবাদী প্ল্যাকার্ডসহ একটি মিছিল পল্টন এলাকা প্রদক্ষিণ করে।

সমাবেশে বক্তারা নিন্দা জানিয়ে বলেন, নীলফামারী ইপিজেডের এভারগ্রিন প্রতিষ্ঠান বকেয়া বেতন ও ছাঁটাই বিরোধী আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই পুলিশ সংস্কারের দাবি শ্রমিক সংগঠনসহ অন্যান্যরা জানালেও সেই সংস্কার হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছ থেকে নিরাপত্তার বদলে গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছে শ্রমিক। নেতৃবৃন্দ এই ঘটনা তীব্র নিন্তা ও প্রতিবাদ জানান। দ্রুত তদন্ত, বিচার ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ দাবি করেন এবং পুলিশের মানববিধ্বংসী মারণাস্ত্র ব্যবহার বিধি পরিবর্তন সংশোধন ও পুলিশ সংস্কারের দাবি জানান।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে শ্রম আইন পরিবর্তন ও শ্রমখাত সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে শ্রমিকরা। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে নভেম্বর মাস থেকে শ্রম সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ত্রিপক্ষীয় পরিষদ (এনটিসিসি) শ্রম আইন সংশোধন ও শ্রমখাত সংস্কারের কাজ করছে। কিন্তু, এখনও শ্রম আইনের সংশোধন ও সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়নি। নেতৃবৃন্দ সরকারের ঐকমত্য কমিশনের শ্রম সংস্কার কমিশন ও নারী কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ৫টি কমিশনকে যুক্ত না করার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, শ্রমিকদের দাবি বিবেচানায় অবশ্যই জুলাই সনদে তাদের অধিকার বাস্তবায়নের নিশচয়তার ঘোষণা থাকতে হবে। 

তারা আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানে প্রাণ হারানো হাজারো জনগণের মধ্যে পোশাক শ্রমিকসহ অন্যান্য শ্রমজীবীর শ্রমিকের সংখ্যাই ছিল বেশি। এত প্রাণের বিনিময়ে নতুন বাংলাদেশে শ্রমিকের  জীবন-জীবিকা ও মর্যাদা নিশ্চিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা জরুরি। তারা যুক্ত করেন।

তারা বলেন, এখন সময় এসেছে বিলম্ব না করে দ্রুত শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক কমিটির প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে আইন সংশোধন। বাংলাদেশ শ্রম অধ্যাদেশ-২০২৫ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচনী তফসিলের আগের সময়কেই বেছে নিতে হবে।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সারা দেশে আসন্ন ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের হাওয়ায় উত্তপ্ত। নেতৃবৃন্দ এই পরিবেশে কোনভাবেই যেন বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন এবং শ্রম খাত সংস্কারের কাজ বাধাগ্রস্থ না হয় সে বিষয়ে শ্রম উপদেষ্টা এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মনোযোগ আকর্ষণ করেন।

তারা বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই শ্রম আইন সংশোধন ও শ্রম খাত সংস্কারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ খাতে বিচার-সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। কোনভাবে নির্বাচনের সাথে একে সাংঘর্ষিক যায়গায় নেয়ার অপচেষ্টার বিষয় সতর্ক থাকতে সকলকে থাকতে হবে। বাংলাদেশের সকল অঞ্চলের পোশাক শ্রমিক ও শ্রমজীবিদের শ্রম আইন বাস্তবায়নে আওয়াজ তোলা ও ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানান তারা।

সভা সমাপনীকালে তাসলিমা আখতার নিম্নোক্ত ১০টি বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আইন প্রণয়নের আহবান জানান।

১. রানা প্লাজা তাজরীনসহ বিভিন্ন কারখানায় অবকাঠামোগত হত্যাকাণ্ড ও মজুরি আন্দোলনে প্রাণহানির বিচার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সম্পন্ন করা ও যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। 

২. আইন-আদালতে বাংলা ভাষা ও বৈষম্যহীন ভাষা ব্যবহার করার আইন তৈরি করতে হবে।

৩. জাতীয় ন্যূনতম মজুরি কমিশন গঠন ও মজুরি নির্ধারণকাল ৩ বছর অন্তর অন্তর করতে হবে। 

৪. মতপ্রকাশ ও সংগঠনের অধিকার নিশ্চিতকরণে শ্রমিকের সংজ্ঞা সম্প্রসারণ, ইউনিয়ন রেজিসে্ট্রশন, নির্বাচন, যৌথ দরকষাকষির শর্ত শিথীলকরণ। অরেজিসি্ট্রকৃতদের রেজিস্ট্রিকালে সুরক্ষা প্রদান করা।

৫. যৌন হয়রানি ও সহিংসতাহীন মর্যাদাপূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণ শ্রম আইনে এর সংজ্ঞা ও দণ্ডবিধি প্রণয়ন করতে হবে। 

৬. রাষ্ট্রীয় সহায়তায় প্রসূতিকালীন ৬ মাস বেতন, ছুটি ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করতে হবে।

৭. শ্রমিক কল্যাণ তহবিল এবং সেন্ট্রাল ফান্ডের যথাযথ-স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক ব্যবহার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধন প্রয়োজনীয়। শ্রম আইনের পঞ্চদশ অধ্যায়: কোম্পানির মুনাফায় শ্রমিকের অংশগ্রহণ অধ্যায়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনী সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতার সাথে করা প্রয়োজন।

৮. শ্রমিক ইতিহাস-ঐতিহাসিক স্থান সুরক্ষা ও স্মৃতি সৌধ- ভাস্কর্য-যাদুঘর-গবেষণাগার গঠনে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। মিডিয়া, পাঠ্যপুস্তক, পাঠ্যক্রম, শিক্ষা কোর্সে শ্রম বিষয় [লেবার স্টাডিজ] মর্যাদাপূর্ণভাবে উত্থাপন ও যুক্ত করা জরুরি।

৯. শ্রম আইন সংশোধন, শ্রমখাত সংস্কারে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় বৃদ্ধি এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন অধিদপ্তরসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। 

১০. শ্রমিক অভিযোগ ভিত্তিতে অনলাইন ব্যবস্থাকে জোরদার, শ্রমিক ও নেতৃত্ব প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। তথ্যপ্রাপ্তি অধিকার নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

বিভি/পিএইচ

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2