বিএনপি বাংলাদেশের বৃহত্তম দল- এটা স্বীকৃত: মতিউর রহমান
ছবি: মতিউর রহমান (সংগৃহীত)
প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান বলেছেন, আগামীতে যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে, বিএনপির কাছ থেকে আমরা আরও অধিকতর সহ্য শক্তি, আরও অধিকতর সমালোচনা সহ্য করা ও গ্রহণের আশা করি।
রবিবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর হোটেল রেডিসন ব্লুতে বিএনপি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ উপলক্ষ্যে দৈনিক পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক, রেডিও, টেলিভিশনের বার্তা প্রধান এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
মতিউর রহমান বলেন, যে উপলক্ষ্যে আজকে সমাবেশটা ডাকা হয়েছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাংলাদেশে ফিরে আসা উপলক্ষ্যে, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা মনে করি যে, দেশে একটা রাজনৈতিক শূন্যতা রয়েছে, চলছে। এটা একটা বিপর্যয়জনক এবং সেটা বিএনপির জন্যও কিছুটা কঠিন অবস্থা।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সমীকরণে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, বিএনপি বাংলাদেশের বৃহত্তম দল- এটা স্বীকৃত। আমাদের জরিপ যেটা আমরা করেছি- আমরা এটা বিশ্বাস করি যে, জয় মোটামুটি সত্যের কাছাকাছি বা মানুষের চিন্তা জগতের কাছাকাছি।
বিগত সরকারের আমলে সংবাদপত্রের ওপর চাপের বর্ণনা দিয়ে মতিউর রহমান বলেন, বিগত সরকারের ১৫ বছর আমলে শুধু তাদের পছন্দ পছন্দমতো সম্পাদক-সাংবাদিকদের তারা আমন্ত্রণ জানাতেন। কিছু কিছু সংবাদপত্র, আমাদের সংবাদপত্র বলতে গেলে নিষিদ্ধ ছিলো। আর শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমানের কথা আমি নাই বললাম এখানে, উনারা তো জেলেই ছিলেন। একটা সময় তারা নিজের দেশের ভেতরে, দেশের বাইরে ছিলেন। ডিজিএফআই বা অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো যেভাবে সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছে, রাতের বেলা, দিনের বেলা, সকালবেলা, নানা ক্ষেত্রে নানাভাবে সেটাও একদম অগ্রহণযোগ্য। আমাদের ক্ষেত্রে এটা ছিলো- মালিকানা নিয়ে নেওয়া, বদলে ফেলা, সম্পাদক বদলে দাও, শেয়ার বিক্রি করে দাও, এটা ছিলো সর্বশেষ চেষ্টা। যদি জুলাই আগস্টে পরিবর্তন না হতো তাহলে প্রথম আলো এই মালিকানা বা সম্পাদনা পরিবেশ থাকতো না।
বিএনপির নেতৃত্বের সহনশীলতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নানা রকম সমালোচনা তর্ক-বিতর্কের মধ্যেও বিএনপির নেতৃত্বের মধ্যে ধৈর্য ছিলো তাদের সহ্য শক্তি ছিলো এবং তারা আমাদের প্রথম আলো পত্রিকার সমালোচনাগুলো মেনে নিয়েছিলেন। সংশোধন করতে পেরেছিল কিনা হয়েছিলো সেটা অনেক লম্বা আলোচনার বিষয়। আমরাও আগামীতে ভবিষ্যতে যদি বিএনপি বিজয়ী হয়ে আসে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আমি এটা বলব- বিএনপির কাছ থেকে আমরা আরও অধিকতর সহ্য শক্তি আরও অধিকতর সমালোচনা সহ্য করা, গ্রহণ করা, মেনে নেওয়া, মেনে নেওয়া মানে শোনা। বাকিটা তো নেতৃত্বের ও দলের শর্তের ওপর নির্ভর করে।
মতিউর রহমান বলেন, আমি মনে করি আগামী দিনগুলো অনেক কঠিন। আগামী দিন যারা সরকারে আসবেন তাদের জন্য সময়টা হবে আরও কঠিন। আমার বিগত ৫০ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে একটা কঠিনতম এখনই। অনেকেই এই প্রশ্ন তোলেন বিএনপি কি পারবে? এতো জটিলতা, এতো কঠিন, এ সমস্যা তৈরি হয়েছে বিগত ৫০ বছরে, ২০ বছরে, ১৬ বছরে— এটা কী বিএনপির নেতৃত্বে পারবে? পারবে কিনা তিন বছর পারবে, চার বছর পারবে, তাহলে কী হবে? দেশের আরেকটা ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে আমরা পড়ে যাবো। আমাদের ভয়ঙ্কর একটা যাত্রা হবে। যেখান থেকে আমাদের বের হওয়া কঠিন। যার লক্ষণ ইতোমধ্যে আমরা এখনই দেখতে পাচ্ছি। যে শক্তির উত্থান ঘটেছে, যে শক্তি প্রকাশ্যে যে ধরনের বক্তব্য তারা দিচ্ছেন, যে ধরনের কার্যক্রম তারা করছেন, যেভাবে সারাদেশে একটা মবতন্ত্র তৈরি হয়েছে, যুক্তি তর্কের বাইরে গিয়ে।
মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের ভিত্তির ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের যে ভিত্তিমূল যার পক্ষে বিএনপি শক্তিশালী অবস্থান নিয়েছে- একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার পরিবর্তন। এটাই একমাত্র সমাধান সকল অনৈক্য, বিভেদ, বৃহৎ সংকট থেকে বের হয়ে আসার। আমি আশা করবো বিএনপির সাম্প্রতিক সময় যে বক্তব্য, যে রাজনৈতিক অবস্থান নিয়েছে এটা যদি তারা অব্যাহত রাখে, তাহলে আমি মনে করব সেটাই হয়তো আমাদের জন্য নতুন করে আশাবাদ হওয়ার এবং গণতন্ত্রের যাত্রার পথের একটা সম্ভাবনা আমরা দেখতে পারবো।
জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে মতিউর রহমান বলেন, দেশ বিভক্ত হয়ে গেছে বিগত ৫০ বছর ধরে। বিগত ১৬ বছর ধরে স্বৈরাতান্ত্রিক আমলে এ বিভক্তিটা আরো বেশি হয়েছে। এর থেকে বের হয়ে আসা কঠিন। সেখানে শুধু সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করলে সেটা হয়ে যাবে, তেমন তো মোটেই না। এটা যিনি সরকার গঠন করবেন— যদি বিএনপি সরকার গঠন করে, যদি তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হন—তাহলে কিন্তু একটা জাতীয় ঐক্য সমঝোতা পরিবেশ তৈরি করা বিষয়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এতো বিরোধ, এতো বিভেদ, এ সংকট নিয়ে কোনো দেশ চলতে পারে না।
ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি বিএনপিকে সতর্ক করে বলেন, অনলাইন এবং ডিজিটাল এবং ফেসবুক এবং ইউটিউব ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে সারা দুনিয়াতে বাংলাদেশে একদম ছিন্ন ভিন্ন বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একটা বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়ে গেছে। কোনটা বিশ্বাস করবো, কোনটা বিশ্বাস করবো না— নিজেরাই বিভ্রান্ত হয়ে যাই। সে জায়গাতে আপনারা, সরকার- আপনাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো কিন্তু একটু সবল। তারা অতি বিশেষ সক্রিয়। এ সোশ্যাল মিডিয়াতে বা ডিজিটাল মিডিয়াতে তারা কিন্তু আপনাদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। সেটাও কিন্তু আপনাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে কিছুটা সংশয় প্রকাশ করলেও তিনি আশাবাদী হতে চেয়ে বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্নের কথা বলি খুবই কঠিন। আমি তেমনভাবে খুব আশাবাদী না, আমি আশাবাদী হতে চাই যে আমরা নতুন করে আবার শুরু করি।
বিভি/এআই




মন্তব্য করুন: