• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

একুশের সংস্কৃতি, চেতনা ও আমাদের কবিতা-০১

প্রকাশিত: ১১:০০, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১২:৫০, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ফন্ট সাইজ
একুশের সংস্কৃতি, চেতনা ও আমাদের কবিতা-০১

(পর্ব-০১)

 রফিকউল্লাহ খান

১৯৫২ থেকে ১৯৭১ কালপর্ব বাংলাদেশের কবিতার আত্মসংস্থিত হওয়ার কাল। কেননা, এ সময়ে কবিরা সামাজিক-রাজনৈতিক আকাক্সক্ষা ও সংক্ষোভকে যেমন কবিতায় রূপায়িত করেছেন, ব্যক্তিসত্তা বিকাশের বহুমুখী সম্ভাবনা নিয়েও তেমনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন। সমাজ-অন্তর্গত ব্যক্তি-অস্তিত্বের যে হতাশা, পরাভবচেতনা, নৈঃসঙ্গবোধ ষাটের দশকের নবোদ্ভূত কবিদের কবিতায় লক্ষ করি, সেখানেও বৃহত্তর সমাজমানসবিচ্ছিন্ন নগরজীবনের অব্যাহত বিনষ্টি, অবক্ষয় সম্ভাবনাহীনতার অনুভব কাজ করেছে।

সংস্কৃতির সীমা যেমন বহুবিচিত্র, তেমনি এর শক্তি-উৎস এবং প্রেরণাদায়ী ক্ষমতাও অপরিসীম। এই শক্তির ব্যাপকতা ও গভীরতা নির্ভর করে কোনো জাতির ভাষা ও সাহিত্যের ঐতিহ্যের চরিত্র অনুসারে। ইউরোপীয় রেনেসাঁস, ফরাসি বিপ্লব ও রুশ বিপ্লবের ভিত্তি ও কার্যকারণ সৃষ্টিতে ঐসব ভাষা ও সাহিত্য মহাশক্তিধর ভূমিকা পালন করেছিলো। সমাজ ও রাজনীতির বস্তুগত পরিবর্তনের ঘনত্ব এসব ভূমিকার গুরুত্বকে কখনো সামনে নিয়ে আসেনি। বিশেষ করে রেনেসাঁসের যুক্তি ও তত্ত্ব এবং ফরাসি বিপ্লবের সাহিত্যিক প্রেক্ষাপট ও ঘোষণার (উবপষধৎধঃরড়হ ড়ভ জরমযঃং) ভাষাচরিত্র এমন বিপ্লবাত্মক ও যুগান্তকারী ছিলো যে, ইউরোপ থেকে শুরু করে সমগ্র সচেতন বিশ্বকে তা প্রবলভাবে নাড়া দিতে সক্ষম হয়। এ থেকেই বুঝা যায়, প্রতিটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতির গভীরে থাকে অবিনাশী বিপ্লবী শক্তি। এই শক্তি পারে যুগান্তর সাধন করতে কিংবা সংগ্রামের কার্যকর চালক হয়ে উঠতে। বাঙালি জীবনের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে ভাষা আন্দোলনের ভূমিকা রেনেসাঁসের মতোই তাৎপর্যবহ ও সুদূরপ্রসারী। এই আন্দোলনের অনিঃশেষ চেতনা আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনের মতো শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রেও যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধন করেছে।

বাঙালির সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনে ভাষা আন্দোলনের ভূমিকা তাৎপর্যবহ ও সুদূরপ্রসারী। ১৯৪৮ সাল থেকে সাংস্কৃতিক অধিকার আদায়ের আন্দোলন হিসেবে অঙ্কুরিত হয়ে, ১৯৫২ সালে একটা গণ-আন্দোলন ক্রমান্বয়ে গণজাগরণে রূপ নেয় এবং পরিণামে অবরুদ্ধ জাতীয় চৈতন্যের আত্মসন্ধান, সত্তাসন্ধান ও জাতিসত্তাসন্ধানের রক্তিম প্রতীকে পরিণত হয়। বাঙালির স্বাধীনতাকামী ও সংগ্রামশীল অস্তিত্বের এই আত্মপ্রকাশ বিগত পঞ্চাশ বছরে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী দীর্ঘ সংগ্রাম, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্বগত আন্দোলন প্রভৃতি ঘটনাক্রমের মধ্য দিয়ে চেতনার রূপ ও রূপান্তরের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছে।

একুশের বৈপ্লবিক চেতনার স্পর্শে এক অপরিমেয় সম্ভবনায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠে আমাদের সাহিত্যলোক। সেই উজ্জীবনী শক্তি একাত্তরের রক্তস্নাত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে বর্তমান সময়েও বহমান। সংগতকারণেই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমাদের জীবনে ও সাহিত্যে ভাষা আন্দোলনের অবদানকে নতুন করে মূল্যায়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। স্মৃতি ও বিস্মৃতির দোলাচলে বাঙালি জাতিসত্তা যেরূপ বিভ্রান্তি ও সংকটের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, জাতীয় জীবনের এই পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের সেই রেনেসাঁসীয় গতি ও শক্তির পুনঃপর্যবেক্ষণ প্রাসংগিক হয়ে উঠেছে। কেবল বর্তমান প্রজন্মের জন্যই নয়, বিভ্রান্তিপ্রবণ সমাজমানসের জন্যও এই পর্যবেক্ষণের উপযোগিতা কম নয়।

১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর এ ভূখণ্ডের সমাজমানস এক অন্তঃশীলা যন্ত্রণা ও দুঃখদহনে অবসন্ন, গতিচ্যুত হয়ে পড়ে। স্বাধীন আবাসভূমির জন্য দীর্ঘদিনের লালিত সুখস্বপ্নের যে বিকৃত মুখচ্ছবি পাকিস্তান নামক রষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে, স্বাভাবিকভাবেই তা সংবেদনশীল চিত্তে অনিবার্য করে তোলে গভীরতর ব্যর্থতাবোধ, রক্তক্ষরণ ও স্বপ্নভঙ্গের অনিঃশেষ যন্ত্রণা। প্রগতি ও গণতন্ত্রবিমুখ পাকিস্তান রাষ্ট্র বাঙালি জাতিসত্তার ভিত্তিমূল পর্যন্ত বিনষ্ট করতে সচেষ্ট হয়। ফলে, উনিশ শতক থেকে সূচিত আত্মসন্ধান, সত্তাসন্ধান ও জাতিসত্তাসন্ধানের প্রশ্নটি নতুন পরিস্থিতিতে নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করে। এই পটভূমিতেই সংঘটিত হয় ভাষা আন্দোলন। ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই ক্ষুব্ধ, অগ্নিগর্ভ সমাজসত্তার শিল্পিত আত্মপ্রকাশের পথ সুপ্রশস্ত হয়। আত্মত্যাগ ও রক্তদানের অভিজ্ঞতা থেকে দ্বন্দ্বোত্তরণের শিল্পশক্তি অর্জন করে জীবনলগ্ন ও প্রগতিপরায়ণ কবিমানস।

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি এ কারণেই বাঙালি জাতির ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। কেননা, এই ঘটনার মধ্য দিয়েই সূচিত হয় বাংলাদেশের সাহিত্যের নবযাত্রা। বিশ শতকের বিশ এবং তিরিশের দশকের সাহিত্যের নেতিবাদী জীবনতন্ত্র থেকে, চল্লিশের দশকের সমাজবাদী ধারাবিমুখ সামন্তাদর্শ অনুসারী সাহিত্যধারা থেকে এক স্বতন্ত্র ধারার জন্ম হলো। ‘জীবনের বিচ্ছিন্ন অংশগুলোকে ফিরে পাবার ও চূর্ণিত সত্তার পূর্ণ অবয়বটিকে বোধ-কল্পনার পরিধি সীমায় আকর্ষণের আকাক্সক্ষায় এবং ব্যক্তিচেতনার খণ্ডদ্বীপে দাঁড়িয়ে সমষ্টি ও সমগ্রতার মূল ভূ-ভাগের দিকে বাহু বিস্তারের উজ্জ্বল-করুণ উৎকণ্ঠায় স্পন্দিত’ হয়ে ওঠে এ সময়ের সমাজ ও শিল্পী-মানস।

দেশ বিভাগের পর আবহমান বাংলা সাহিত্যের মূলধারা থেকে বিচ্ছেদের যে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিলো, ভাষা আন্দোলনের পর সেই মূলধারার সংগে পুনরায় যুক্ত হলো এ ভূ-খণ্ডের সাহিত্য। সাংস্কৃতিক নবজাগরণের রাজনৈতিক চরিত্র বাংলা সাহিত্যের ধারায় যে মাত্রা সংযোজন করলো, তা অভূতপূর্ব ও যুগান্তকারী। ব্যক্তিতন্ত্রের যে আত্মমুখিতা ঔপনিবেশিক সমাজকাঠামোতে পলায়নবাদী চেতনায় রূপ নেয়, তা থেকেও বহুলাংশে বেরিয়ে এলো বাংলাদেশের সাহিত্য।

ব্যক্তির স্বাধীন বিকাশের শর্ত মেনে নিয়েও বলা যায়, যে কোনো সমাজের সাহিত্য যদি সেই সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চেতনার প্রতিনিধিত্ব না-করে, তাহলে সেই কবিতার আবেদন দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। বিশেষ করে যে মধ্যবিত্ত-মন শব্দশিল্পের পাললিক ভূখণ্ড, বাংলাদেশে সেই মধ্যবিত্তের বিকাশও স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত নয়। ইংরেজ বণিকের মানদণ্ডের সংস্পর্শে যে মধ্যবিত্তের যাত্রা সূচিত হয়েছিলো, প্রায় দু’শো বছরেও বাংলাভাষী ভূখণ্ডে সেই মধ্যবিত্তের শ্রেণিচরিত্র কোনো সুস্পষ্ট রূপ পায়নি। বরং সামান্তাদর্শ, কুসংস্কার, প্রচলিত মূল্যবোধ প্রভৃতির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে এ দেশের মধ্যবিত্ত চরিত্র বিমিশ্র স্বভাব নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ ভূখণ্ডের মধ্যবিত্ত শ্রেণিবিকাশের স্বতন্ত্র ও জটিল রূপ তার ব্যক্তিসত্তার বৈশিষ্ট্যকে গোড়া থেকেই ভিন্নধারায় প্রবাহিত করেছে। দেশ বিভাগের পর সেই ব্যক্তিসত্তায় যে দ্বন্দ্ব, অনিশ্চয়তাবোধ ও অস্থিরতার জন্ম হয়েছিলো, ভাষা আন্দোলন সেখানে নিয়ে এলো মুক্তচেতনার পথ-নির্দেশনা। ভাষা আন্দোলনের নবজাগরণসুলভ চারিত্র্য বাংলাদেশের সাহিত্যে যে ব্যক্তি ও সমষ্টিচেতনার জন্ম সম্ভব করে, বিগত পঞ্চাশ বছরে তা বহুমুখী স্বভাবধর্ম নিয়ে বিকশিত ও পল্লবিত হয়েছে।

গণতন্ত্র, সাম্যবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রগতিশীল জীবনদৃষ্টি, রাজনৈতিক অধিকার অর্জনের প্রশ্নে উচ্চকণ্ঠ আত্মপ্রকাশ আমাদের কবিতা-নাটক-উপন্যাস-গল্প ও প্রবন্ধে শিল্পিত অভিব্যক্তি পেয়েছে। এর ফলে সাহিত্যের চরিত্র যে রাজনৈতিক হয়ে উঠলো তা বলা যাবে না। বরং রাজনীতি-সচেতনতা আমাদের অধিকাংশ লেখকের শিল্পব্যক্তিত্ব ও মানসগঠনকে করে তুললো পরিপক্ক ও স্বাবলম্বী।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কবিতার ইতিহাস থেকে আমরা জানি, একটি জাতির আত্মবিকাশের ক্ষেত্রে প্রকৃত দিকনির্দেশনা দান কবিতার অন্যতম প্রধান ধর্ম। বিশেষ করে উনিশ ও বিশ শতকের পুঁজিবাদী বিশ্ব এবং সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীন স্বপ্রতিষ্ঠ হওয়ার আকাক্সক্ষায় জাগ্রত দেশগুলোর কবিতার চরিত্র আলাদা হয়ে গেছে। ইংল্যান্ডের কবি টিএস এলিয়ট যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলার সামনে দাঁড়িয়ে চরম হতাশায় লন্ডন ব্রিজের পতনদৃশ্যকে কবিতায় রূপ দিচ্ছেন, তখন সাম্রাজ্যবাদ-কবলিত এই ভূখণ্ডের কবি কাজী নজরুল ইসলাম একই সময়ে (১৯২২) লিখেছেন, ‘বল বীর, বল উন্নত মম শির’। ভাষা আন্দোলনের পরে উপনিবেশ-কবলিত বাংলাদেশের কবিতাও এ কারণেই তীব্র অহংবোধ ও সমষ্টিচেতনার বহুমুখী অভিব্যক্তিতে এবং ব্যক্তিসত্তার সমাজলগ্ন আকাক্সক্ষা রূপায়ণের ঐকান্তিকতায় নবতর চারিত্র্য বৈশিষ্ট্য লাভ করলো।

পঞ্চাশ দশকে আবির্ভূত যেসব কবি সমাজ-সচেতনতার মধ্য দিয়ে কাব্যরচনা শুরু করেন, দেশ বিভাগজনিত সামাজিক-রাজনৈতিক অব্যবস্থা তাঁদের মধ্যেও একধরনের পলায়নমুখী দ্বন্দ্বময় ও বিষণ্ন মানসিকতার জন্ম দিয়েছিলো। কিন্তু ভাষা আন্দোলন সেই বিশিষ্ট দ্বন্দ্বদীর্ণ ও হতাশা-আক্রান্ত কবিদেরও স্বাবলম্বী ও আত্মবিশ্বাসী কাব্য প্রেরণায় উদ্দীপ্ত করে তোলে। এ সময়ে রচিত আহসান হাবীব, আবুল হোসেন এবং সিকান্দার আবু জাফরের কবিতা পাঠ থেকেই আমরা তা অনুধাবন করতে পারি। যেমন আহসান হাবীবের ভাষা আন্দোলন-পরবর্তীকালে রচিত একটি কবিতা-

‘রক্তের অক্ষরে পথে স্বাক্ষরিত বহু ইতিহাস;

আর সেই ইতিহাস-বিন্যাসের পথে

অন্ধকারে মুখ রেখে কান্নায় ভেঙেছে বহু বুক।’ (ইতিহাস বিন্যাসের পথে, ছায়া হরিণ)।

রক্তাক্ত ও অবরুদ্ধ অভিজ্ঞতার স্মৃতি কবিকে এখন আর আশাহত করে না, বরং তাঁর চেতনায় জন্ম নেয় নতুন প্রত্যাশার আলো। কবি লক্ষ করেন, জনারণ্যে এক সম্ভাবনাময় আলোর জোয়ার উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছে। কবিতা যে এ সময় রাজনৈতিক সচেতনতার সমাস্তরালে ভাষণধর্মী ও উচ্চকণ্ঠ হয়ে ওঠেনি, তার কারণ ভাষা আন্দোলনের চেতনাবীজ এ পর্যায়ে কবিমানসকে কাব্যভাষার প্রশ্নেও সজাগ ও আত্মসচেতন করে তুলেছিলো। দেশপ্রেম, মানবমুখিতা, আত্মসন্ধান ও আত্ম-আবিষ্কারের আকাক্সক্ষা কবিতার বক্তব্য, উপমা, রূপক, প্রতীক ও চিত্রকল্পে ব্যঞ্জনাময় রূপ লাভ করলো। যেমন:

‘দেশের মানুষ একটি দণ্ডে

একাত্ম হয়েছিল,

স্নায়ুগ্রন্থিতে পাঁজরে ও পেশীতে

মেনে নিয়েছিল একটি অঙ্গীকার-

সেদিন প্রথম।

এবং প্রথম নতুন দিগ্বলয়ে

সঞ্চরমান এ দেশের ইতিবৃত্ত।’ (একুশে ফেব্রুয়ারি, বৈরী বৃষ্টিতে)।

ভাষা আন্দোলনের অংগীকার কবির চেতনাকে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চেতনার সংগে একাত্ম করে দিয়েছে এই বোধ ‘একত্র অস্তিত্ব’-এর অনুভব জাগ্রত করেছে কবির মধ্যে। প্রতিবাদ ও সংগ্রামশীল জীবন আকাক্সক্ষা কতোটা প্রাণময় হয়ে উঠতে পারে তার একটি দৃষ্টান্ত:

‘আমাদের চোখে চোখে লেলিহান অগ্নি

সকল বিরোধ বিধ্বংসী

এই কালো রাত্রির সুকঠিন অর্গল

কোনদিন আমরা যে ভাঙবোই

মুক্ত প্রাণের সাড়া জানবোই

আমাদের শপথের প্রদীপ্ত স্বাক্ষরে

নতুন সূর্যশিখা জ্বলবেই

আমাদের সংগ্রাম চলবেই।’ (সংগ্রাম চলবেই, কবিতা: ১৩৭২)।

এ সময়ে রচিত আবুল হোসেনের কবিতার মধ্যেও গভীর মানব ও জীবনমুখিতা সামূহিক চেতনায় অভিব্যক্তি লাভ করলো। সমাজ ও রাষ্ট্রের উপনিবেশ-কবলিত রূপ কবিমানসকে কতোটা সচেতন ও প্রতিবাদী করে তুলেছিলো, আবদুল গনি হাজারীর কবিতায় তার প্রমাণ পাই:

‘ছত্রভঙ্গ মিছিল

দুমড়ানো ঝাণ্ডা

দেয়ালের গায়ে বিমর্ষ পোস্টার

মায়েদের কান্নায় ইস্তাহার বিলুপ্ত

এবং রাষ্ট্রের শূন্য খোলে

আত্মহননের সারী

তবুও অন্বিষ্ট শিশুর কান্নার আভাসে

হৃদপিণ্ড অস্থির।’ (গতরাত্রির দুঃস্বপ্ন, প্রত্যেক রাত্রি)।

জীবনের এই মর্মন্তুদ অভিজ্ঞতা থেকে কবি কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হন না বটে, কিন্তু শোণিতে, রক্তে, ঘামে ও বেদনার বিষণ্ন শরীরে অবগাহন করে কবির অন্বেষা চলে একটি স্বাধীন জীবন পটভূমি নির্মাণের- ঐতিহ্যের বিপুলা স্রোতস্বিনীতে বিস্তৃত ও স্পন্দিত হতে থাকে কবিচেতনার অণু-পরমাণু।

বিভি/ইই/এমএইচকে

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2