• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

তিমির প্রেম নিয়ে যত বিতর্ক

প্রকাশিত: ১৩:২৫, ২৩ এপ্রিল ২০২১

আপডেট: ২২:১৫, ২৩ এপ্রিল ২০২১

ফন্ট সাইজ
তিমির প্রেম নিয়ে যত বিতর্ক

সম্প্রতি কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে পরপর দু'টি তিমির মৃতদেহ ভেসে এসেছে। কীভাবে তিমি দু'টির মৃত্যু হয়েছে তা জানতে চলছে গবেষণা। কারণ অনুসন্ধানে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তেও। সবাই যখন ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় তখন কয়েকটি গণমাধ্যমে ‘পুরুষ সঙ্গীর মৃত্যুশোকে স্ত্রী তিমি আত্মহত্যা’ করেছে বলে সাক্ষাতকার দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন এক মৎস্য বিজ্ঞানী।

বুধবার (২১ এপ্রিল) দেশের শীর্ষ একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুল হক এই তথ্য দেন। তিনি বলেন, গভীর পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে মৃত তিমি দু'টি ‘দম্পতি’ (কাপল)। পুরুষ সঙ্গীর মৃত্যুর শোকে স্ত্রী তিমিটি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।

তাঁর মতে, সৈকতে আসা প্রথম তিমিটি স্ত্রী এবং দ্বিতীয়টি পুরুষ ছিলো। পুরুষ তিমির শরীরে পচন ধরেছে বেশি, মারাত্মক জখমের চিহ্নও ছিলো। ধারণা করা হচ্ছে, ১০ থেকে ১৫ দিন আগে বড় কোনো জাহাজের ধাক্কায় পুরুষ তিমির মৃত্যু হয়।

[media type="image" fid="134277" layout="normal" caption="1" infograph="1" parallax="0" popup="1"][/media]

[media type="image" fid="134278" layout="normal" caption="1" infograph="1" parallax="0" popup="1"][/media]

[media type="image" fid="134279" layout="normal" caption="1" infograph="1" parallax="0" popup="1"][/media]

সংবাদটি প্রকাশের পর আলোচনা-সমালোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে। কেউ কেউ এটাকে ‘মুখরোচক গল্প’ আখ্যা দিয়ে জানতে চেয়েছেন মন্তব্যের ভিত্তি কী? কেউ মজা করে চেয়েছেন তিমি দু'টির কাবিনের কপিও।

পরিবেশবাদীরা মনে করছেন, একজন বিজ্ঞানীর এমন ধারণামূলক মন্তব্য তিমির মৃত্যু নিয়ে সরকারি সংস্থাগুলোর উদাসীনতার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। এতে তিমি দু'টির মৃত্যুর মূল কারণ উদঘাটনে অনাগ্রহও প্রকাশ পেয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

এ বিষয়ে সমুদ্র বিষয়ক পরিবেশবাদী সংগঠন সেভ আওয়ার সি-এর পরিচালক ও মেরিন আন্ডারওয়াটার এক্সপ্লোরার এস এম আতিকুর রহমান বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, তিমি'র মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক বিষয়। সায়েন্টিফিক ব্যাখ্যা ছাড়া এ বিষয়ে মনগড়া গল্প ফাঁদার সুযোগ নেই। যেহেতু ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়াধীন, ধারনাবশতঃ কথা না বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করাই উত্তম।

যিনি আত্মহত্যার কথা বলেছেন, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য তথ্য হতে পারে না। বরং এসব তথ্য বিভ্রান্তি ছড়াবে। যদি তর্কের খাতিরেও মেনে নিই, স্ত্রী তিমি আত্মহত্যা করেছে, তাহলে কীভাবে করেছে সেই ব্যাখ্যা প্রয়োজন। তিমিরা সাধারণত আত্মাহুতি দিলে সৈকতে নিজেকে তুলে দিয়ে আত্মাহুতি দেয়। তাই গবেষকদের উচিত তথ্য ছাড়া কথা না বলা।

[media type="image" fid="134270" layout="normal" caption="1" infograph="1" parallax="0" popup="1"][/media]

সেভ দ্যা ন্যাচার, বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ বলেন, ধারণা থেকে মন্তব্য সবাই করতে পারে। একজন বিজ্ঞানী ধারনাবশতঃ মন্তব্য করবেন, এটা কাম্য নয়। তদন্তাধীন অবস্থায় এমন হাস্যকর মন্তব্য তিমি'র মৃত্যুর বিষয়টিকে হালকা করে দিয়েছে। এতে মনে হচ্ছে, সমুদ্রে প্রাণী মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের বিষয়টি সরকারি সংস্থাগুলো এখনো আন্তরিকতার সংগে নিতে পারেনি।

তিমি দু'টি ভেসে উঠেছিলো কক্সবাজারের হিমছড়ি সৈকতে। যা কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন এলাকা। ফলে তিমি দু'টির মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানসহ সবকিছু সমন্বয় করছেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, তিমি দু'টির মরদেহ উঠে আসার পর থেকে দেখছি অনেকে ইচ্ছামতো মন্তব্য করছেন, যার কোনো ভিত্তি নেই। কেউ বলছেন, মাছ ধরার নৌকার ধাক্কায় মারা গেছে, অথচ তিমির সাইজ নৌকার চেয়ে বড়। এছাড়া তিমি বাস করে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে, সেখান পর্যন্ত যাওয়ার সক্ষমতা আমাদের মাছ ধরার ট্রলারের নেই। অনেক আজব মন্তব্যও দেখছি।  তিমি'র মৃত্যুর পেছনে অবশ্যই বিজ্ঞানভিত্তিক কারণ রয়েছ। সেটা নিশ্চিত হওয়া যাবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের পর। তাই তথ্য ছাড়া গবেষকরাও সাধারণ মানুষের মতো মন্তব্য করবেন, তা কাম্য হতে পারে না।

তিনি আরো বলেন, প্রতিবেদনটিতে দেখেছি গবেষক বলেছেন পুরুষ তিমির মৃত্যুতে নারী তিমি আত্মহত্যা করেছে। অথচ প্রথম তিমি'র লিঙ্গ শনাক্ত হলেও, বেশি পচে যাওয়ায় দ্বিতীয়টির লিঙ্গের বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, দ্বিতীয়টি পুরুষ, কিন্তু এটি নিশ্চিত হবে ময়নাতদন্তের মাধ্যমে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা কি ধারণার ওপর মন্তব্য করতে পারেন?

তিমি নিয়ে তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে গবেষক ও পরিবেশকর্মীদের আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান এই বন কর্মকর্তা।

[media type="image" fid="134271" layout="normal" caption="1" infograph="1" parallax="0" popup="1"][/media]

কিসের ভিত্তিতে তিমি'র আত্মহত্যার তথ্য দিয়েছেন, জানতে সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুল হককে বারবার ফোন করা হলেও তাঁর মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, ৯ এপ্রিল সকালে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি সৈকতে ভেসে আসে ১৫ টন ওজনের একটি মৃত তিমি। এটি লম্বায় ছিলো ৪৪ ফুট, পেটের বেড় ২৬ ফুট। পরদিন সকালে ১০ টন ওজনের আরেকটি মৃত তিমি একই সৈকতে ভেসে আসে। এটি ছিলো লম্বায় ৪৬ ফুট এবং পেটের বেড় ১৮ ফুট। গবেষকরা মৃত তিমি দু'টিকে ‘ব্রাইডস হোয়েল’ (Bryde’s Whale) প্রজাতির বলে চিহ্নিত  করেছেন।

বিভি/কেএস/এসডি

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2