ফেনী নদীর উপর নির্মিত মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন, অবকাঠামোগত কাজ এখনো বাকি
খাগড়াছড়ির সাবেক মহকুমা শহর সীমান্ত শহর রামগড়ে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ এর উদ্বোধন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করেন। একই সময়ে ত্রিপুরার সাবরুমে একটি ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্টেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়।
দু’দেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি রামগড়ে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ উদ্বোধন করলেও কার্যক্রমে আরও আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। স্থলবন্দরটি চালু করার জন্য বন্দর টার্মিনাল, অফিস, গুদামসহ অন্যান্য অবকাঠামো এখনো নির্মিত হয়নি। অধিগ্রহণ করা হয়নি জমি। শুধুমাত্র মালামাল পরিমাপের জন্য সাড়ে ৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
গত ৫ মার্চ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন রামগড় মৈত্রী সেতু পরিদর্শন কালে সাংবাদিকদের জানান, আগামী ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সুবর্ন জয়ন্তীতে অনেকগুলো স্থাপনার সাথে খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১’ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হতে পারে। কিন্তু চার দিনের মাথায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেতুর উদ্বোধন করলেন।
একটি সূত্র জানায়, ত্রিপুরা রাজ্যের বিধান সভায় বিজেপি সরকারের তিন বছর পূর্তি উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সেতুর উদ্বোধনের উদ্যোগ নেন। মৈত্রী সেতু রামগড়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরার সাবরুমে যুক্ত হয়েছে। এই সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে ত্রিপুরার সাবরুম থেকে মাত্র ৮০ কিলোমিটার দূরের বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠার পাশাপাশি ‘উত্তর পূর্বের প্রবেশ দ্বার’ হয়ে উঠবে। সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হবে ভারতের ত্রিপুরা।
ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েস অ্যান্ড ইনফ্রাস্টাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড (এনএইচআইডিসিএল) এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তানিশ চন্দ্র আগারভাগ ইনপাকন প্রাইভেট লিমিটেডের তত্ত্বাবধানে ৮২ দশমিক ৫৭ কোটি রুপি ব্যয়ে রামগড়ের মহামুনিতে ২৮৬ একর জমির ওপর ৪১২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪ দশমিক ৮০ মিটার প্রস্থের দু’লেন বিশিষ্ট এক্সট্রা ডোজড, ক্যাবল স্টেইড আরসিসি মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করে।
২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে নির্মাণকাজ শুরু করে দীর্ঘ ৩ বছর পর গত জানুয়ারিতে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ১২টি পিলার সম্বলিত স্বপ্নের মৈত্রী সেতুটির বাংলাদেশ অংশে নির্মাণ করা হয়েছে আটটি এবং ভারতের অংশে চারটি পিলার। এছাড়া স্প্যান রয়েছে ১১টি। এরমধ্যে বাংলাদেশ অংশে সাতটি ও ভারত অংশে চারটি। নদীর অংশে ৮০ মিটারের স্প্যান এবং নদীর দু’পাড়ের ৫০ মিটারের দুটিসহ মোট ১৮০ মিটার দৈর্ঘ্যের তিনটি স্প্যানই হচ্ছে মেইন স্প্যান।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্য বাড়ানোর লক্ষ্যে গেল ১৮ আগস্ট ২০২০ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় খাগড়াছড়ির রামগড় থেকে হেয়াকো-বারৈয়াইয়ারহাট সড়কের জন্য ৮৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পসহ সাতটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্পটিতে সরকার দেবে ২৬৪ কোটি ৩৩ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৫৮১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। এরইমধ্যে রামগড়-বারৈয়ারহাট সড়কের বেশ কয়েকটি দু’লেন বিশিষ্ট ব্রিজ নির্মাণাধীন রয়েছে।
২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিলি সফরকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠকে রামগড়-সাবরুম স্থলবন্দর চালুর যৌথ সিদ্ধান্তে পর বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের মধ্যে ট্রানজিট সুবিধা, যাতায়াত ব্যবস্থা সহজতর করা এবং আমদানি-রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৬ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১ নামে ফেনী নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির ভিত্তি প্রস্থর ফলক উন্মোচন করেন। ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
বিভি/এনজি
মন্তব্য করুন: