• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

বগুড়ার মোহাম্মদ আলী বনাম লারকানার নবাব জুলফিকার আলী ভূট্টো

প্রকাশিত: ১৪:০৬, ২৭ জানুয়ারি ২০২১

আপডেট: ১৪:০৬, ২৭ জানুয়ারি ২০২১

ফন্ট সাইজ
বগুড়ার মোহাম্মদ আলী বনাম লারকানার নবাব জুলফিকার আলী ভূট্টো

আব্দুর রহিম বোগরা

বগুড়ার মোহাম্মদ আলী

বগুড়ার মোহাম্মদ আলী বনাম লারকানার নবাব জুলফিকার আলী ভূট্টোর অজানা কথা

এক সময় পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে বগুড়ার নবাব ও লারকানার নবাবের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছিল। বগুড়ার নবাব মোহাম্মদ আলীকে, লারকানার নবাব জুলফিকার আলী ভুট্টো কোনভাবেই টপকাতে পারছিলেন না। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে বড় কৌশলী হয়ে উঠেছিলেন মোহাম্মদ আলী। ফলে ১৯৫৩ সালে বগুড়ার মোহাম্মদ আলী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করলে ভূট্টোর মনে ঈর্ষার বীজ বপন হয়। ১৯৬২সালে ফের পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভায় বড় পদ পেলে ভূট্টো সত্যাসত্যই মুষড়ে পড়েন। তিনি হিসেব কষে দেখেন, বগুড়ার মোহাম্মাদ আলী বেঁচে থাকতে তার পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে ও মন্ত্রী সভায় স্থান নেই।

মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুর পর, ভূট্টোর ভাগ্যের চাকা ঘোরে

১৯৬৩ সালের ২৩ জানুয়ারি ঢাকায় ধানমন্ডির বাসায় মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সত্যই ভূট্টোর কপাল খোলে। মোহাম্মদ আলী পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় মারা যান।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভার ঐ শূন্য পদে ভূট্টো পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হন। তখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান। ভূট্টো পাকিস্তানের রাজনীতিতে রাস পুতিনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দ্রুত লাইমলাইটে চলে আসেন। ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের উভয় অংশে আন্দোলন ও গণ অভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব খানের পতন ও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়া খানের ক্ষমতা গ্ৰহণ। তারপর দ্রুত লয়ে ঘটতে থাকে পাকিস্তানের রাজনীতিতে নানা নাটকীয় ঘটনা। সে সব ঘটনা মোটা দাগে আমাদের সবার জানা।

১৯৭০সালের জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগের নিরুঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কেন্দ্রে সরকার গঠন করবে তারা। কিন্তু বাঁধ সাধলো ভূট্টো ও তার দল পিপলস পার্টি। সেই পরিস্থিতি ঘনীভূত হয়ে "নো- রিটার্ন"পথে চলে যায়। এবার ইয়াহিয়া খান শুধু সামরিক আইন জারী নয় ,পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের উপর সামরিক বাহিনীকে লেলিয়ে দিল। পৃথিবীর বর্বোচিত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করল তারা।

তারপরের ইতিহাস সকলের জানা।

খন্ডিত পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী হলো ভূট্টো

১৯৭২সালে সিন্ধু প্রদেশের লারকানার নবাব জুলফিকার আলী ভুট্টো, বগুড়ার নবাব মোহাম্মদ আলীর সাথে হিংসা করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হলেন বটে , কিন্তু সেটা খন্ডিত পাকিস্তানের ।

বুদ্ধির দৌড়ে ভূট্টোর চেয়ে, বগুড়ার মোহাম্মদ আলী এগিয়ে থাকতেন। মোহাম্মদ আলীর বুদ্ধি ও বিচার বিবেচনার কাছে ভূট্টো সবসময় হার মেনেছে। তাই মোহাম্মদ আলী যতদিন বেঁচেছিলেন ততদিন ভূট্টো পাকিস্তানের রাজনীতিতে বড় বেশি নাক গলাতে পারেনি।

মারা গেলে বগুড়ার মাটিতে কবর হবে- তাঁর পক্ষেই এমন অছিয়ত করা সম্ভব। যিনি তার জন্মভূমিকে ভালবাসেন, জন্মভূমির প্রতি কৃতজ্ঞ থাকেন।

আমরা মোহাম্মদ আলীকে দেখি, তিনি বগুড়ার মাটিকে এতোটাই ভালবাসতেন যে ,তার পক্ষেই বলা সম্ভব হয়েছিল, তিনি মারা গেলে তার কবর বগুড়ার মাটিতে হবে। মোহাম্মদ আলী যদি বলতেন, তার কবর পাকিস্তানের করাচী, লাহোর, রাওয়ালপিন্ডি বা ইসলামাবাদ হবে। তা হলে হয়তো তাই হতো। কিন্তু নিজভূমিতেই তিনি চিরনিদ্রায় যেতে চেয়েছেন।

মোহাম্মদ আলী প্যালেস

১৯৬৩ সালের ২৩ জানুয়ারি রাতে তার মৃত্যুর খবর বগুড়া পৌঁছলে, পরদিন বড় জামে মসজিদ (নিউ মার্কেট, কাঁঠালতলা)-এর সামনে কবর খনন করা হয়। কিন্তু তৎকালীন ডিসির কাছে জরুরি তার বার্তা আসে, কবর খোলামেলা ও ফাঁকা জায়গায় হতে হবে। তার কবরের উপর স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পর্যাপ্ত জায়গা যেনো থাকে। বড় মসজিদের সামনে বগুড়ার নবাববাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে সেই জায়গা না থাকায়, কবর নবাব বাড়ির আমবাগানে স্থানান্তর করা হয়। এখন যেটা বগুড়া সুপার মার্কেটের এককোণায় শোভা পাচ্ছে।

আব্দুর রহিম বোগরা

সিনিয়র সাংবাদিক, বগুড়া।

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2