বিল দিতে না পারায় যমজ শিশুকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ, এক শিশুর মৃত্যু

টাকা দিতে না পারায় রাজধানীর শ্যামলীর ‘আমার বাংলাদেশ’ হাসপাতাল থেকে ছয় মাস বয়সী দুই যমজ শিশুকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে হাসপাতাল মালিকের বিরুদ্ধে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে যমজ শিশুদের একজন মারা যায়।

বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ৭টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হলে যমজ শিশুদের একজন আহমেদকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। আরেক শিশু আব্দুল্লাহকে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শিশুদের মা আয়েশা বেগম অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ১ জানুয়ারি বাচ্চা দুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের দু’জনকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে জায়গা খালি না থাকায় পরদিন ২ জানুয়ারি এক দালাল কম টাকায় ভালো চিকিৎসার কথা বলে শ্যামলীর আমার বাংলাদেশ হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালে ৭২ ঘণ্টায় ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা বিল আসে। আমি গরিব মানুষ, এতো টাকা দিতে পারবো না জানালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে মারধর করে। তাদের পায়ে ধরলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। আমার কাছে থাকা ৪০ হাজার টাকা নিয়ে অসুস্থ বাচ্চাসহ আমাকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়। পরে ফার্মেসিতে থাকা ওষুধের টাকা নেওয়ার জন্য শাহিন নামের একজনকে আমার সংগে ঢাকা মেডিকেলে পাঠায়। আসার পথে আমার ছেলে আহমেদ মারা যায়। 

আয়েশা বেগম আরও জানান, শিশুদের বাবা জামাল সৌদি আরব প্রবাসী। সেখানে তিনি দিনমজুরের কাজ করেন।

তিনি বলেন, আমার স্বামী বিদেশ থেকে অনেক কষ্টে টাকা পাঠিয়েছেন। তারা ভুয়া বিল করে আমার কাছ থেকে টাকা দাবি করে। আমার একটা ছেলেকে হারিয়েছি। আরেক সন্তান আব্দুল্লাহকে ঢামেক হাসপাতালে পুলিশ ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। তার অবস্থাও ভালো না। 

তিনি জানান, তারা সাভারের রেডিও কলোনির বাতপাড়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, আমার সংগে কেউ নেই, আমি একা। আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।

তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, ওই মা নিজের ইচ্ছায় সন্তানদের নিয়ে যান। তিনি হাসপাতালের পুরো বিলও পরিশোধ করেননি। 

এ ঘটনায় শিশুদের মা আয়েশা বেগম আজ শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) মোহাম্মদপুর থানায় মামলায় করেছেন। মামলায় হাসপাতালের মালিক গোলাম সরোয়ার ও পরিচালক সোয়েব খানকে আসামি করা হয়েছে। 

দুপুরে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে হাসপাতালের সব নথি জব্দ করে ও এক সেবিকাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়। হাসপাতালের মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে এসএমএস-এ জানিয়েছে র‌্যাব। 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পের পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানিয়েছেন, শিশুদের মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে শাহিন নামে ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।