• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

‘এবারের সাহিত্যে স্বাধীনতা পদক জাতির জন্য অসম্মানজনক’

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ১৮ মার্চ ২০২২

ফন্ট সাইজ
‘এবারের সাহিত্যে স্বাধীনতা পদক জাতির জন্য অসম্মানজনক’

এবারে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার উপযুক্ত ব্যক্তিকে দেয়া হয়নি। এ নিয়ে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা জাতির জন্য অসম্মানজনক। কিভাবে এমন একজন ব্যক্তি পুরস্কার পেলেন যা দুঃখজনক। মোঃ আমির হামজা নামক ব্যক্তিকে ঘোষিত সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব কথা বলেন।

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি স্বাধীনতা দিবস বিতর্ক প্রতিযোগিতা-২০২২ এর গ্র্যান্ড ফাইনালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হল রাজাকারদের প্রকৃত তালিকা করা। রাজাকার ছাড়া বাকি সবাই কোন না কোন ভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এটা ছিল জনযুদ্ধ। 

সুশাসন আর গণতন্ত্র নিয়ে এই ইমেরিটাস অধ্যাপক বলেন, আমাদের অনেক উন্নয়ন হয়েছে সত্য কিন্তু সমসুযোগ ও সুশাসন বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে স্বাধীনতার মূলনীতি থেকে আমরা এখনো অনেক দূরে। প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা এখনো পায়নি। কেবল ভোটের গণতন্ত্র নয়, সমসুযোগ ও সামাজিক নিরাপত্তাই হল প্রকৃত গণতন্ত্র। 

এফডিসিতে আয়োজিত ওই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পক্ষ বিপক্ষের চেয়েও বর্তমানে বড় সমস্যা হল ক্ষমতা দখল ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মানসিকতা। স্বাধীনতার জন্য আমাদের যে দেশপ্রেম ছিল, আজ সে দেশপ্রেম নাই, আজ কেবল আত্মপ্রেম। আজ সমাজের উন্নয়ন হচ্ছে না, হচ্ছে ব্যক্তির উন্নয়ন। যখনই সমাজে বিপদ আসছে তখনই ধনীদের আরো উন্নয়ন হচ্ছে। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রো-ভাইস চ্যান্সলর প্রফেসর ড. গণেশ চন্দ্র সাহা। 

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল পেতে শুধু রাজনৈতিক মুক্তি পেলেই চলবে না। দরকার সামাজিক, অর্থনৈতিক, গণতান্ত্রিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি। সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা। শোষণ, বঞ্চনা, নির্যাতন, নিপীড়ন বন্ধ সহ বৈষম্যহীন, অসম্প্রদায়িক ও ন্যায় বিচার ভিত্তিক দুর্নীতি মুক্ত রাষ্ট্র গড়ে তোলা। তাহলেই স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। 

জনাব কিরণ আরো বলেন, আমি জানি না এবারের স্বাধীনতা পদক প্রদান কমিটিতে কারা জুরি ছিলেন। এবারের স্বাধীনতা পদকের মতো রাষ্ট্রীয় মর্যাদার একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্মাননা একজন অচেনা ও অখ্যাত সাহিত্যিক কিভাবে পেলেন তা এখন সবার কাছে প্রশ্ন। আমির হামজা নামক উক্ত ব্যক্তির বই পড়েননি বা তার সম্পর্কে জানেন না বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন সহ প্রায় সকল বিশিষ্টজনরা। ইতিপূর্বে ২০২০ সালেও রইজ উদ্দিন নামক একজনকে সাহিত্যে স্বাধীনতার পুরস্কারের জন্য নাম ঘোষণা করা হলেও, পরবর্তিতে নানা সমালোচনায় রইজ উদ্দিনকে এই পুরস্কার দেয়া হয়নি। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার প্রদানে এই ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা পরিহারের জন্য এর নির্বাচন প্রক্রিয়া বদলানো উচিত। 

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরো বলেন, উন্নয়ন মানে কেবল দালানকোঠা ও রাস্তাঘাট গড়া নয়, মেধাকে মুক্ত করা ও মেধার বিকাশ। আজ বিশ্ববিদ্যালয়েও গণতান্ত্রিক চর্চা নাই, ছাত্র সংসদ নাই, সংস্কৃতিচর্চা ও খেলাধুলা নাই। ফলে ছাত্রদের মেধার বিকাশ হচ্ছে না। তারা বিপথগামী হচ্ছে। বর্তমানে আর একটি উদ্বেগের বিষয় হল আমাদের সম্পদ পাচার হয়ে যাচ্ছে। শুধু সম্পদ নয় তার সাথে মেধাও পাচার হয়ে যাচ্ছে। দেশে উপযুক্ত মূল্যায়ন না হওয়ায় আমাদের মেধাবী সন্তানেরা বিদেশে যেয়ে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, দেশ তাদের সেবা থেকে হচ্ছে বঞ্চিত। পাকিস্তান থেকে আমরা স্বাধীন হলেও পাকিস্তানের মতো পুজিবাদ ও আমলাতান্ত্রিকতা থেকে আমরা এখনো পুরোপুরি মুক্ত হতে পারিনি। 

স্বাধীনতার দিবস বিতর্ক প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড ফাইনালে ঢাকা সিটি কলেজকে পরাজিত করে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজের বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। চ্যাম্পিয়ন দলের বিতার্কিকদের নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং রানার-আপ দলকে নগদ ৩০ হাজার টাকাসহ ট্রফি, ক্রেষ্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। 

প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম, ড. মোহাম্মদ শাহ আলম চৌধুরী ও সাংবাদিক পার্থ সঞ্জয়। ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: