• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

বন্যার্তদের মাঝে সেনাপ্রধানের ত্রাণ বিতরণ

প্রকাশিত: ২২:৩৮, ২৩ জুন ২০২২

আপডেট: ২২:৩৯, ২৩ জুন ২০২২

ফন্ট সাইজ
বন্যার্তদের মাঝে সেনাপ্রধানের ত্রাণ বিতরণ

ত্রাণ বিতরণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। ছবি: আইএসপিআর

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। পরিদর্শনকালে তিনি সুনামগঞ্জের সুরমা ইউনিয়নের মঈনপুর এলাকায় বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। 

এ সময় সেনাপ্রধান বলেন, ‘বন্যাদুর্গতদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বন্যা চলে যাওয়ার পরেও যতদিন জনগণের প্রয়োজন হবে ততদিন তাদের পাশে থেকে সেনাসদস্যরা সব ধরনের সহযোগিতা করবে। বন্যা পরবর্তী বিপর্যস্ত জনজীবনের দুর্ভোগ দূরীকরণের নিমিত্তে সরকারের সব সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করছে এবং সেনাবাহিনীও তাদের প্রয়োজনীয় সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। চলমান উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমে অধিকতর তৎপর হওয়ার জন্য তিনি সেনা সদস্যদের নির্দেশনা প্রদান করেন। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বন্যার্তদের প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ কার্যক্রম বিশেষ গুরুত্বসহকারে পরিচালিত হবে।’

এ সময় সেনাবাহিনী প্রধানের সফরসঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-ডাইরেক্টর জেনারেল অব মেডিক্যাল সার্ভিস মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান। এছাড়া সর্বস্তরের জনসাধারণকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান সেনাপ্রধান।

ত্রাণ বিতরণ করছেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। ছবি: আইএসপিআর

পরিদর্শনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন, মেজর জেনারেল মো. আবু সাঈদ সিদ্দিক, মাস্টার জেনারেল অব অর্ডন্যান্স মেজর জেনারেল মুহাম্মদ যুবায়ের সালেহীন, জিওসি ১৭ পদাতিক ডিভিশন মেজর জেনারেল হামিদুল হকসহ সেনাসদরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৭ এবং ১৯ পদাতিক ডিভিশনের সেনাসদস্যরা সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনা জেলার মোট ২০টি উপজেলায় বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় মোতায়েন রয়েছে। মোতায়েনরত সেনাসদস্যরা নিরলসভাবে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার ও দুর্গতদের মধ্যে খাবার বিতরণ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করে আসছে। 

ত্রাণ বিতরণ করছেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। ছবি: আইএসপিআর

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত সিলেট, সুনামগঞ্জ এবং নেত্রকোনার বন্যাকবলিত এলাকায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ২১৪৮ জন বন্যাদুর্গত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে প্রেরণ করেছে, ১৪ হাজার ৭৫০ জনকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, ২১ হাজার ৯৬৮ জনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, ৫৫ হাজার ১৩৬টি পরিবারের মধ্যে খাবার বিতরণের পাশাপাশি বন্যার্তদের মাঝে ৫৪ হাজার ৮২৮ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ বিতরণ করেছে। প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে। 

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করছেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। ছবি: আইএসপিআর

এছাড়া সেনাসদস্যরা বুধবার (২২ জুন) থেকে সিলেট জেলার সোনালী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখায় মজুদকৃত অর্থ নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের সহযোগিতা করছে। সেনাসদস্যরা সিলেট জেলার বড়ইকান্দি ও কুমারগাঁও বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রগুলোকে প্লাবন থেকে রক্ষা এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রবাহ নিশ্চিতকরণে কাজ করে যাচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখার নিমিত্তে সিলেটের তেলিখালের ওপর কাটাগঙ্গা ব্রিজ মেরামত করা হয়েছে। সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়ে পানি নিষ্কাশন ও ভূমি ধসরোধে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

সুনামগঞ্জ জেল কর্তৃপক্ষের অনুরোধের প্রেক্ষিতে জেল সদস্যদের এবং কয়েদিদের জন্য শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি ইউনিসেফ এর অনুরোধে সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুদের জন্য রক্ষিত মূল্যবান ভ্যাকসিন নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে মোবাইল ফোন কোম্পানির সরঞ্জাম সুরক্ষার মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষায় ভূমিকা রাখছে সেনাবাহিনী এবং নিজেদের পাশাপাশি অসামরিক প্রশাসনের জন্য ও ভি-স্যাট স্থাপনের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রেখেছে সেনাবাহিনী। 

ত্রাণ বিতরণ করছেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। ছবি: আইএসপিআর

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অন্য সব ফরমেশন নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে এবং অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এবং যতদিন প্রয়োজন ততদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে। সেনাপ্রধান বলেন, ‘সবাই মিলে কাজ করলে যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলা সম্ভব’।

বিভি/এনএ

মন্তব্য করুন: