• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ১১ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

পদ্মা সেতু; বাঙালির দৃঢ় প্রত্যয়ের প্রতিফলন

রাইয়ান আজমি

প্রকাশিত: ১২:১৪, ২৫ জুন ২০২২

ফন্ট সাইজ
পদ্মা সেতু; বাঙালির দৃঢ় প্রত্যয়ের প্রতিফলন

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে নির্মাণাধীন একটি সেতু। এই সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযােগ ঘটাবে। এই সেতুকে কেন্দ্র করে মনে মনে স্বপ্ন বুনছে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ। সকলের আশা এই পদ্মা সেতু বদলে দেবে দেশের অর্থনীতি; উন্নত হবে মানুষের জীবনযাত্রা । স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় এই প্রকল্প খুলে দেবে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার।

ভৌগােলিক প্রেক্ষাপটে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব:
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের বুক চিরে বয়ে চলেছে অসংখ্য নদ-নদী। তাই যাতায়াত ব্যবস্থায় আমাদের প্রতিনিয়ত নৌ পথের আশ্রয় নিতে হয়। এতে যােগাযােগ ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রিতা ও মন্থর গতি পরিলক্ষিত হয়। এই যাতায়াত ব্যবস্থাকে গতিশীল করার জন্য প্রয়ােজন হয় সেতুর। সেতু থাকলে নদীর দুই দিকের মানুষের যােগাযােগ ব্যবস্থায় যেমন উন্নতি হয়, তেমনি ব্যবসায়-বাণিজ্য ভালাে হওয়ায় মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটে।

পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রেক্ষাপট:
পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। এজন্য এই অঞ্চলের মানুষ স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকারের কাছে তাদের দাবি বাস্তবায়নের কথা জানিয়ে এসেছে। অবশেষে এই সেতুর সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় এনে ১৯৯৮ সালে প্রথম সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সমীক্ষা যাচাইয়ের পর ২০০১ সালে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কিন্তু অর্থের জোগান না হওয়ায় সেতুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। পরবর্তীতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে । পরে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে এই সেতুতে রেলপথ সংযুক্ত করে।

প্রতিবন্ধকতা ও বাংলাদেশের সক্ষমতা:
পদ্মা সেতু স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। বিভিন্ন সময় নানা প্রতিবন্ধকতার মুখােমুখি হয়েছে এই প্রকল্প। ২০০৯ সালের পর বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়। কিন্তু ২০১২ সালে ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক। অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প। পরবর্তীতে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘােষণা দেয়। ষড়যন্ত্রের বাধা জয় করে এগিয়ে চলে পদ্মা সেতুর কাজ; নিজস্ব অর্থায়নে দৃশ্যমান হতে থাকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

পদ্মা সেতুর বর্ণনা:
পদ্মা সেতু বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলােমিটার এবং প্রস্থ ২১ দশমিক ১০ মিটার। এই সেতুটি দ্বিতল; উপর দিয়ে চলবে যানবাহন এবং নিচে চলবে ট্রেন। সেতুটি নির্মিত কংক্রিট এবং স্টিল দিয়ে। সেতুর দুই পাড়ে ১২ কিলােমিটার সংযােগ সড়ক নির্মিত হয়েছে। নদীশাসনের জন্য চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন কাজ করেছে। দুই পাড়ের সংযােগ সড়ক ও অবকাঠামাে উন্নয়নের জন্য কাজ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের আবদুল মােনেম লিমিটেডকে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বুয়েট এবং কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন অ্যান্ড অ্যাসােসিয়েটস সেতুর নির্মাণ কাজ তদারকি করবে।

পদ্মা সেতুর রেল সংযােগ প্রকল্পে ১৪টি নতুন স্টেশন নির্মাণ এবং ৬টি বিদ্যমান স্টেশন উন্নয়ন ও অবকাঠামাে নির্মাণ করা হবে। নতুন ১৪টি স্টেশন হলাে— কেরানীগঞ্জ, নিমতলা, শ্রীনগর, মাওয়া, জাজিরা, শিবচর, ভাঙ্গা জংশন, নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লােহাগড়া, নড়াইল, জামদিয়া ও পদ্ম বিল। এছাড়া অবকাঠামাে উন্নয়নের ৬টি স্টেশন হলাে— ঢাকা, গেণ্ডারিয়া, ভাঙ্গা, কাশিয়ানী, রূপদিয়া ও সিঙ্গিয়া।

মূল সেতুর পিলার হবে ৪২টি। এর মধ্যে নদীর মধ্যে ৪০টি ও নদীর দুই পাড়ে ২টি পিলার থাকবে। নদীর ভেতরের ৪০টি পিলারে ৬টি করে মােট ২৪০টি পাইল। এছাড়া সংযােগ সেতুর দুই পাশের দুটি পিলারে ১২টি করে মােট ২৪টি পাইল। পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসানাে হয়েছে। মূল সেতুর কাজ করেছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। এই সেতুর স্থায়িত্ব হবে ১০০ বছর।

পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যয়:
২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প পাস করে। এরপর ২০১১ সালে প্রকল্পের সংশােধিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। এরপর ২০১৬ সলে পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যয় দ্বিতীয়বারের মতাে সংশােধন করা হয়। সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারিত হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। প্রথম দিকে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, আইডিবি এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রকৃতির শক্তিকে মান্য করে প্রয়োজনীয় বড় ধরনের অবকাঠামোগত প্রকল্পের পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন-বিনির্মাণ করতে হবে ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে-নিজস্ব অর্থায়নে।

এসব কারণেই বৈশ্বিক পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ-করপোরেট জুলুমবাজি এবং এ জুলুমবাজির ‘দক্ষ এজেন্ট’-বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা ধরনের প্রতিষ্ঠানের বহু প্রতিকূল ও দীর্ঘমেয়াদে দেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী শর্তাবিষ্ট ঋণজালের খপ্পর থেকে দেশকে মুক্ত করে অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালন করতে হবে-নিষ্ঠা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে।

বিশ্বব্যাংকের কোনো ঋণ ও খবরদারি ছাড়া দেশের অর্থে-দেশের সম্পদে পদ্মা সেতু-উন্নয়নের এ সমীকরণ দেশে ব্যাপক জনসম্মতি পেয়েছিল। আর ২০১১-১২ সালের দিকে এ জনসম্মতি-জনমতের দৃশ্যমান প্রতিফলন ঘটেছিল, যখন নিজস্ব অর্থে পদ্মা সেতু বিনির্মাণের প্রশ্ন হাজির হলো। সে কারণেই ‘নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বিনির্মাণ’ প্রসঙ্গ এলে প্রথমেই নিঃসঙ্কোচ-নিঃশর্ত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে এ দেশের সাধারণ মানুষের কাছে।

এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, পদ্মা সেতু এ দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক উন্নয়নের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে ও জাতীয় একতা বৃদ্ধিতে এ সেতু মেলবন্ধন হিসাবে কাজ করবে।

দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে, কুচক্রী মহলের সমালোচনা ব্যর্থ প্রমাণ করে ও তির্যক মন্তব্য উপেক্ষা করে পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান বাস্তবতা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসীম সাহসিকতা ও সুদৃঢ় প্রত্যয়ের সোনালি ফসল, সতেরো কোটি বাঙালির গর্ব ও অহংকার পদ্মা সেতু শনিবার (২৫ জুন) উদ্বোধন করা হলো। দেশের সাধারণ মানুষ তাদের টাকায় প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত এ সেতুর ওপর দিয়ে যাতায়াতের অপেক্ষায় এখন অধীর আগ্রহে প্রহর গুনছে।

বিভি/এনএ

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2