দখলদারকে মাঠ রক্ষায় পুনরায় দায়িত্ব দিলো ডিএনসিসি, পবার নিন্দা

শহীদ তাজউদ্দিন স্মৃতি পার্ক পুনরায় দখলদার গুলশান ইয়ুথ ক্লাবকে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। সিটি কর্পোরেশনের সোশ্যাল মিডিয়া পেইজের বিবৃতিতে জানা যায়, ৫ম কর্পোরেশন সভায় গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের সাথে ডিএনসিসির শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ স্মৃতি পার্ক রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ক দ্বিপাক্ষিক চুক্তিটি বাতিল করা হয়েছিলো। ক্লাবের আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল ৮ম সভায় চুক্তিটি পুনর্বহাল করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের তত্ত্বাবধানেই পরিচালিত হবে গুলশানের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ স্মৃতি পার্ক। আদালতের নির্দেশনা এবং মাঠ, পার্ক ও জলাধার আইন লঙ্ঘন করে দখলদার একটি ব্যবসায়িক ক্লাবকে জনগণের মাঠ প্রদানের সিদ্ধান্তে তীব্র নিন্দা জানায় পবা।
বুধবার (৩০ জুলাই) এক বিবৃত এ নিন্দা জানায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)
বিবৃতিতে বলা হয়, বিগত সময়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র কর্তৃক শহীদ তাজউদ্দিন স্মৃতি পার্কসহ ৪টি মাঠ অপারেটর নিয়োগের নামে ইজারা দেওয়ার ব্যবস্থা বাতিল করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন পরিবেশবাদীরা। বিগত সময়ে অপারেটর নিয়োগের নামে এই মাঠগুলো বিভিন্ন ক্লাব, প্রতিষ্ঠানের কাছে তুলে দেয় সিটি কর্পোরেশন। শহীদ তাজউদ্দিন স্মৃতি পার্ক- ইয়ুথ ক্লাবকে, চেয়ারম্যান বাড়ী মাঠ- শহীদ যায়ান চৌধুরী ব্যবস্থাপনা পরিষদকে, কামাল আতাতুর্ক পার্ক- গ্লোবাল ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এন্ড কনসালটেন্সী লিমিটেডকে, বনানী সি ব্লাক পার্ক- এস বি মার্বেল কর্পোরশনকে দেওয়া হয়। ক্লাব ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণ মানুষের প্রবেশ বন্ধ করে মাঠ ভাড়া দিয়ে ব্যবসা শুরু করে। এ প্রক্রিয়ায় সিটি কর্পোরেশন এবং ক্লাবসমুহ মাঠ-পার্ক আইন লঙ্ঘন এবং আদালতের নির্দেশনা অমান্য করেছে।
শহীদ তাজউদ্দিন স্মৃতি পার্কের দখলকারী গুলশান ইয়ুথ ক্লাব মাঠ দখল করে বেআইনী স্থাপনা নির্মাণকাজ শুরু করলে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো তীব্র আন্দোলন শুরু করে। কিন্তু তৎকালীন সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ জনদাবী উপেক্ষা করে ক্লাবকে তাদের বেআইনী কাজ চালিয়ে দিতে সমর্থন দেয়। মাঠের বিভিন্ন স্থাপনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গুলশান ইয়ুথ ক্লাব বিভিন্ন ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে এই মাঠটি দখল করে ব্যবহার করে আসছে। এই পার্ক ও মাঠ নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তথা বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টে ৩টি মামলা দায়ের এবং নিস্পত্তি হয়। যার ৩ টিতেই মহামান্য আপীল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগ রাজউককে দখল উচ্ছেদের এবং সিটি কপোরেশনকে কোনভাবে লীজ বা দখল দেওয়া বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে। সর্বশেষ মাঠ হতে ক্লাব উচ্ছেদের বিষয়ে রাজউকের নোটিশের বিরুদ্ধে গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের রীট আদালত খারিজ করে দেয় এবং মাঠটি উম্মুক্ত করার নির্দেশনা প্রদান করে। কিন্তু ক্লাব কর্তৃপক্ষ তৎকালীন সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় মাঠ দখল করে নেয়। ইতিমধ্যে রাজউক মাঠটি উদ্ধারে সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশনা দিলেও এখনো কোন পদক্ষেপ গ্রহণ হয়নি।
মাঠ ও পার্কটি গুলশান ইয়ুথ ক্লাব ধ্বংস করে কিছু লোকের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে রূপান্তর করছে। বৃষ্টির পানি শোষণের জন্য রাখা উম্মুক্ত স্থানটি তারা ঢালাই দিয়ে বন্ধ করে ফুটবলের টার্ফ বানাচ্ছে। এভাবে পার্কের ঘাসে ঢাকা সবুজ চত্ত্বর তারা ধ্বংস করছে এবং এই পরিবর্তনে মাধ্যমে তারা পার্কটিকে নিজেদের দখলে নিয়েছে। মাঠ ও পার্কের সকল প্রবেশ পথে নিজেদের নিরাপত্তা প্রহরী বসিয়ে জনসাধারণের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করছে। উম্মুক্ত জায়গা দখল করে ফুটবল টার্ফ বানিয়ে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য করেছে। এভাবে পার্ক ও মাঠ দখল, অবৈধ স্থাপনা তৈরিসহ বেআইনিভাবে এর প্রকৃতি ও শ্রেণীর পরিবর্তন করে ভাড়া বা ইজারা প্রদানের মাধ্যমে বানিজ্যিক কাজে ব্যবহার সুস্পষ্টভাবে আইন পরিপন্থী।
বিবৃতিতে উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে অপারেটর নিয়োগের নামে মাঠ দখলের সকল চুক্তি বাতিলে আহবান জানায় পবা। একই সাথে মাঠ হতে ক্লাবের সকল অবৈধ স্থাপনা অপসারণ, মাঠটি মাষ্টার প্লান অনুসারে সংস্কার, মাঠে সিটি কর্পোরেশনের নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ, শিশুদের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত, মাঠসমূহ দখল করে সরকারী সম্পত্তি ক্ষতি এবং ভোগকারী প্রতিষ্ঠান হতে ক্ষতিপুরণ আদায়ের আহবান জানায়। রাজউক এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে মাঠ, পার্ক জলাধার আইন সংশোধনের দাবিও জানান তারা।
বিভি/এআই
মন্তব্য করুন: