• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

`অপরিকল্পিত নগরায়ণ জলবায়ু বিপর্যয়ের ভয়াবহতা বাড়াচ্ছে`

প্রকাশিত: ১৮:২৫, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ
`অপরিকল্পিত নগরায়ণ জলবায়ু বিপর্যয়ের ভয়াবহতা বাড়াচ্ছে`

জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্ববাসীর দুই-তৃতীয়াংশ বিভিন্ন বড় বড় নগর বা শহরে বাস করবে। অর্থাৎ পুরো মানবগোষ্ঠী নগরায়িত হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ জলবায়ু বিপর্যয়ের প্রভাবে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। অপরিকল্পিত নগরায়ণ জলবায়ু বিপর্যয়ের ভয়াবহতা বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। অপরিকল্পিত দ্রুত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। যান্ত্রিক যানবাহনের ধোঁয়া, শিল্প-কারখানার ধোঁয়া, কলকারখানার বর্জ্য, আবাসিক বর্জ্য পরিবেশকে দূষিত করে চলেছে প্রতিনিয়ত। মোট কার্বন নিঃসরণের ৮০ শতাংশই করে থাকে নগরগুলো। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সংগে সংগে যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। সেই সংগে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা, যানজট, শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণের ভয়াবহতা। সমগ্র বিশ্ব এখন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ, টেকসই উন্নয়ন, অন্তর্ভুক্তিতা, সামাজিক সমতার দিকে জোরারোপ করছে। সেখানে বাংলাদেশ ফ্লাইওভার, এক্সপ্রেসওয়ের মত বড় বড় প্রকল্পকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এগুলো আপাত দৃষ্টিতে উন্নয়ন মনে হলেও আমরা পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু বিপর্যয় বিবেচনায় অনেক বড় ঝুঁকিতে দাঁড়িয়ে আছি। 

বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ইকোসিটি স্যাটেলাইট কনফারেন্স ২০২১ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এই অভিমত ব্যক্ত করেন।
 
নেপালের সেন্টার ফর ডিজাস্টার স্টাডিজ এর ডেপুটি ডিরেক্টর প্রফেসর ড. সঙ্গীতা সিং-এর সভাপতিত্বে ও ওয়ার্ক ফর অ্যা বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট-এর প্রকল্প কর্মকর্তা নাঈমা আকতার এর সঞ্চালনায় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, নেপালের ধুলিখেল মিউনিসিপাল সিটির মেয়র অশোক ব্যানজু এবং হেলথব্রীজ ফাউন্ডেশন অব কানাডা'র আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন। এছাড়াও ইকোসিটি বিল্ডার্স-এর নির্বাহী পরিচালক একটি ভিডিও বার্তা প্রদান করেন।  
 
হেলথব্রীজ ফাউন্ডেশন অব কানাডা এর আঞ্চলিক পরিচালক এবং ইকোসিটি স্যাটেলাইট কনফারেন্সের সহ-আহ্বায়ক দেবরা ইফরইমসন বলেন, দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে নগর পরিকল্পনা, সবুজায়ন, নগরকৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, নিরাপদ খাদ্য, উন্মুক্ত গণপরিসর, অন্তর্ভুক্তিতা হেঁটে ও সাইকেলে যাতায়াত সর্বোপরি অযান্ত্রিক যানের ব্যবহার বৃদ্ধি, অর্থাৎ বসবাসযোগ্য নগরী বা ইকোসিটি নিশ্চিতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের কী ধরণের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন সে বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন ও পরবর্তী ধাপে অ্যাডভোকেসি করা হবে।

গাইবান্ধা-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি বলেন, বাংলাদেশ কার্বন নিঃসরণ করে খুবই কম কিন্তু যে সকল দেশ জলবায়ু বিপর্যয়ের জন্য ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। বিশেষত আমাদের দেশের উপকূলীয় এলাকার প্রান্তিক মানুষগুলো নদী ভাঙ্গন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, বন্যা ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। আমরা এখন বলছি গ্রাম হবে শহর। শহরে পরিণত করতে গিয়ে গ্রামীণ এলাকার খাল-জলাশয়, উন্মুক্ত স্থান প্রভৃতি হারিয়ে যাক তা আমাদের কাম্য নয়। আমাদের নীতিমালাগুলো এমন হওয়া প্রয়োজন, যাতে শহরগুলোতে মানবসৃষ্ট দূষণ কমে আসে। উন্নয়ন প্রয়োজন, কিন্তু তা পরিবেশ ও প্রকৃতির বিনিময়ে নয়। তিনি সম্মেলনের ঘোষণাপত্র সংসদে উপস্থাপন করবেন বলে জানান।

নেপালের ধুলিখেল মিউনিসিপাল সিটির মেয়র এবং মিউনিসিপাল এসোসিয়েশন নেপালের প্রেসিডেন্ট অশোক ব্যানজু বলেন, নেপালের প্রাকৃতিক সম্পদ অতুলনীয়। আমাদের বিভিন্ন ধরণের সমস্যা আছে। পানি আমাদের একটি বড় সমস্যা। এই কারণে আমরা একটি বাড়ি একটি নল-এই উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি ধুলিখেল মিউনিসিপ্যালিটিতে কৃষি সম্প্রসারণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে উন্নয়ন নিশ্চিতের মাধ্যমে আমরা জনকল্যাণ ও শহরের বসবাসযোগ্যতা নিশ্চিতে কাজ করছি।

সভাপতির বক্তব্যে নেপালের সেন্টার ফর ডিজাস্টার স্টাডিজ-এর ডেপুটি ডিরেক্টর প্রফেসর ড. সঙ্গীতা সিং বলেন, নেপালে নগরায়ণ অত্যন্ত দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়াতে দ্রুত নগরায়ণের ক্ষেত্রে নেপাল দ্বিতীয় অবস্থানে আছে। এই কারণে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে নেপাল সরকার চেষ্টা করছে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের। এই কারণে নেপালের নগর পরিকল্পনায় সামাজিক ও অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তিতা, প্রবেশগম্যতা, টেকসই উন্নয়ন- এই বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আমরা যদি পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু বিপর্যয়ের বিষয়ে সতর্ক না হই তবে কোভিডের থেকেও ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে আমাদের।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট, ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ, হেল্থ ব্রীজ ফাউন্ডেশন অব কানাডা, ইনস্টিটিউট অব ইনঞ্জিনিয়ারিং, ফুলচক ক্যাম্পাস, দিগোবিকাশ ইনস্টিটিউট এবং সোস্যাইটি অব এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার্স ইন নেপাল এর সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এই কনফারেন্সের প্রথম দিনে একটি প্ল্যানারি, একটি বিশেষ সেশন এবং ৬ টি সমান্তরাল সেশনে মোট ১৯ টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।  

 

বিভি/কেএস/এমএস

মন্তব্য করুন: