• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪

বদলে যাচ্ছে মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানা (ভিডিও)

প্রকাশিত: ০৯:২৭, ১৬ নভেম্বর ২০২১

আপডেট: ১৩:২৫, ১৭ নভেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ

রাজধানীর জাতীয় চিড়িয়াখানা দেশ-বিদেশ থেকে ঢাকায় আসা দর্শনার্থীদের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আছে বিস্তর অভিযোগ। প্রাণীদের ছোট খাঁচায় বন্দী রেখে বিনোদন দেওয়াকে অমানবিক দাবি করে বিভিন্ন সময় চিড়িয়াখানার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছেন প্রাণিপ্রেমীরা। প্রতিবাদের মুখে বিভিন্ন সময় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নতুন মাস্টারপ্ল্যানে প্রাণিবান্ধব করে গড়ে তোলা হচ্ছে চিড়িয়াখানাকে। 

ঢাকা ও রংপুর চিড়িয়াখানার মাস্টারপ্ল্যান তৈরিতে ২০১৮ সালের আগস্টে প্রকল্প শুরু করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। ৩৪ কোটি টাকা বাজেটের এই প্রকল্পের শেষ সময় ধরা হয় ২০২০ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত। মাস্টারপ্ল্যান তৈরির কাজ দেওয়া হয় সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বার্নার্ড হ্যারিসন অ্যান্ড ফ্রেন্ডস লিমিটেডকে। নির্ধারিত সময়ের ১৬ মাস পর দুই চিড়িয়াখানার মাস্টারপ্ল্যানের খসড়া তৈরি করেছে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।

গত দু’দিন রাজধানীর একটি হোটেলে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় ঢাকা ও রংপুর চিড়িয়াখানার জন্য তৈরি মাস্টারপ্ল্যান তুলে ধরে বার্নার্ড হ্যারিসন অ্যান্ড ফ্রেন্ডস লিমিটেড। এই মাস্টারপ্ল্যানে পুরো চিড়িয়াখানাকে ১০ ভাগে ভাগ করেছেন তারা।

মাস্টারপ্ল্যানের খসড়া পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ৭৬ দশমিক ৯ হেক্টর ভূমির মালিক মিরপুর জাতীয় চিড়িয়াখানায় স্থান পাবে ২২৩ প্রজাতির প্রাণী। যার মধ্যে অঞ্চল ভেদে থাকবে ১০২ প্রজাতির দেশীয়, ৬৬ প্রজাতির ট্রপিকাল (গ্রীষ্মমণ্ডলীয়), ৪০ প্রজাতির আফ্রিকান এবং ১৫ প্রজাতির নিশাচর প্রাণী। এসব প্রাণীদের খাঁচায় রাখলেও দর্শনার্থীরা দেখবেন না খাঁচার অবয়ব। ফলে মনে হবে পুরোপুরি ছাড়া রয়েছে প্রাণীটি। মিরপুর এবং বেড়িবাঁধের দু’টি ফটক দিয়ে প্রবেশের পাশাপাশি সুযোগ থাকবে নৌকা এবং গাড়িতে চড়ে প্রাণী প্রদর্শনের। তবে কর্তৃপক্ষ এই মাস্টারপ্ল্যানকে প্রাণিবান্ধব বলে উল্লেখ করলেও কোন প্রাণীর বিচরণ এলাকার পরিমাণ কতোটুকু হবে সেটি প্রকাশ করা হয়নি খসড়া পরিকল্পনায়।

চিড়িয়াখানা বাংলাদেশের পরিবেশে বিচরণকারী প্রাণীদের জন্য নির্ধারিত স্থানের নাম হবে বাংলাদেশ হ্যাবিটেট। এখানে ১০২ প্রজাতির দেশীয় প্রাণীর জন্য ভূমি রাখা হয়েছে ১৭.৬৮ হেক্টর। দেশীয় প্রাণিদের জন্য নির্ধারিত এলাকাকে সাজানো হবে সুন্দরবনের মতো ম্যানগ্রোভ ফরেস্টের আদলে। জলাভূমির মাঝে মাঝে থাকবে বিভিন্ন প্রাণীর আবাসস্থল। ২১টি খাঁচায় থাকবে একটি অমেরুদণ্ডী, ২৬টি মাছ, ৯টি সরীসৃপ, ৫৪টি পাখি এবং ১২টি স্তন্যপায়ী প্রজাতির প্রাণী। 

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় বিচরণকারী প্রাণীদের জন্য নির্ধারিত এলাকার নাম হবে ট্রপিক্যাল হ্যাবিটেট। এখানে ৬৬ প্রজাতির প্রাণীর জন্য গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বন অর্থাৎ চিরসবুজ এবং শাল বনের আদলে সাজানো হবে ১৪ দশমিক ৪৮ হেক্টর। এতে ২৬টি খাঁচায় ৭টি প্রজাতির সরীসৃপ, ৪৫টি প্রজাতির পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণী থাকবে ১৪ প্রজাতির।

আফ্রিকার পরিবেশে বিচরণকারী প্রাণীদের জন্য নির্ধারিত স্থানের নাম হবে আফ্রিকান হ্যাবিটেট। সর্বোচ্চ ভূমি বরাদ্দ রাখা হয়েছে এই অংশের জন্য। যাকে ঢেলে সাজানো হবে আফ্রিকার ওকাভাঙ্গো অঞ্চলের আদলে। এখানে ২৩.১৬ হেক্টর এলাকায় ২০টি খাঁচায় রাখা হবে ৪০ প্রজাতির প্রাণী। যার মধ্যে থাকবে ৩টি সরীসৃপ, ১৬টি পাখি এবং ২১টি প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।

অপরদিকে নিশাচর প্রাণীদের জন্য রাখা হচ্ছে আলাদা এলাকা। যার নাম হবে নকটার্নাল হ্যাবিটেট। তাদের জন্য ঘন জঙ্গলের আদলে গড়ে তোলা হবে ৩.৭৫ হেক্টর এলাকা। যাতে ১৫টি খাঁচায় থাকবে ১৫ প্রজাতির প্রাণী। এর মধ্যে ২টি সরীসৃপ, একটি পাখি এবং ১২টি স্তন্যপায়ী প্রজাতির প্রাণী রাখা হবে।

শিশুদের বিনোদন, অ্যাডভেঞ্চার এবং শিক্ষামূলক প্রদর্শনীর জন্য থাকবে ৫.৩৮ হেক্টর এলাকা। যার নাম হবে অ্যাক্টিভ জোন। এতে ১০টি খাঁচায় রাখা হবে ৪ প্রজাতির পাখি এবং ৬ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।

এছাড়া জাতীয় চিড়িয়াখানায় আলাদাভাবে ৩.৪৮ হেক্টর এলাকায় জলাভূমি তৈরি, ১.১ হেক্টর এলাকায় নার্সারি, প্রধান প্রবেশ পথের জন্য মিরপুর-১ অংশে ১.৭৭ হেক্টর, দ্বিতীয় প্রবেশপথের জন্য মিরপুর বেড়িবাঁধের অংশে ১.৭৭ হেক্টর ভূমি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বের হওয়ার পথ এবং পার্কিং মিলিয়ে রাখা হয়েছে আরও ৪.৭ হেক্টর এলাকা।

নতুন মাস্টারপ্ল্যানের বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় চিড়িয়াখাাঁর পরিচালক ডা. আব্দুল লতিফ বাংলাভিশন ডিজিটালকে বলেন, নতুন পরিকল্পনায় পুরো চিড়িয়াখানাকে প্রাণিবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে। এখানে প্রাণী ও মানুষের মাঝে ইনভিজিবল বা প্রাকৃতিক খাঁচা রাখা হবে। যা দেখে দর্শনার্থী মনে করবেন প্রাণীটি উন্মুক্ত রয়েছে।

আগামী ডিসেম্বরে মাস্টারপ্ল্যানটি পাস হলেই উন্নয়ন কাজের প্রস্তুতি শুরু হবে। যা শেষ হতে সময় লাগবে অন্তত ৬ বছর। পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরো চিড়িয়াখানার আধুনিকায়নে প্রায় ১৩শ’ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলেও জানান তিনি।

পরিকল্পনা প্রণয়নকারী দলের সদস্য ড. রেজা খান বলেন, এই মহাপরিকল্পনা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে এটি বাস্তবায়ন হলে চিড়িয়াখানার কোনো অংশে গেলে মনে হবে সুন্দরবনে আছি, কোনো অংশকে মনে হবে আফ্রিকার ওকাভাঙ্গো ব-দ্বীপ। দর্শনার্থীরা একেক সময় একেক অনুভূতি পাবেন। 

পুরো পরিকল্পনায় কোথাও বিদেশী উদ্ভিদে বনায়নের সুযোগ রাখা হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম বলেন, বাংলাদেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে সরকার আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে চায়। এ ধারাবাহিকতায় জাতীয় চিড়িয়াখানা ও রংপুর চিড়িয়াখানার আধুনিকায়নে মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা’র নেতৃত্বে আমরা বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা ও রংপুর চিড়িয়াখানা বিশ্বমানে রূপান্তরের প্রক্রিয়ায় রয়েছি। বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব এগিয়ে যাওয়ার গতির সাথে আমরাও সমান্তরালভাবে এগিয়ে চলেছি। আমরা চিড়িয়াখানা দেখতে দুবাই, সিঙ্গাপুর, হংকং কিংবা বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় যাব না। বাংলাদেশের চিড়িয়াখানা বিশ্বমানে পৌঁছে যাচ্ছে। এখন বিশ্বের অন্যান্য প্রান্ত থেকে মানুষ আসবে বাংলাদেশের চিড়িয়াখানা দেখতে। পরিকল্পিতভাবে ও পরিবেশসম্মত উপায়ে চিড়িয়াখানার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।

বিভি/কেএস/এসডি

মন্তব্য করুন: