• NEWS PORTAL

বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

বন বিভাগে অনাস্থা জানিয়ে বন্যপ্রাণী রক্ষায় জাতীয় কমিশন গঠনের দাবি

প্রকাশিত: ২০:১১, ২৮ নভেম্বর ২০২১

ফন্ট সাইজ
বন বিভাগে অনাস্থা জানিয়ে বন্যপ্রাণী রক্ষায় জাতীয় কমিশন গঠনের দাবি

দেশে প্রতিনিয়ত বন্যপ্রাণী হত্যা হচ্ছে, উজাড় হচ্ছে অক্সিজেনের আধার বনভূমি। কিন্তু বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা সরকারি প্রতিষ্ঠান বন অধিদফতর তা ঠেকাতে বরাবরই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে কিছুদিন পরে ছবিতে আঁকা হাতি দেখিয়ে বলতে হবে দেশে এক সময় হাতি ছিলো।

রবিবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁও-এর বন অধিদফতরের ফটকে বন্যপ্রাণী রক্ষার দাবিতে আয়োজিত সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেন। দিনব্যাপী এই কর্মসূচির আয়োজন করে ৩৩টি পরিবেশবাদী সংগঠনের সম্মিলিত প্রয়াস ‘বাংলাদেশ প্রকৃতি সংরক্ষণ জোট’। এসময় তাঁরা গান, কবিতা ও হাতির চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমেরও প্রতিবাদ করেন। বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বন অধিদফতরের ব্যর্থতার জন্য এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে একটি জাতীয় কমিশন গঠনসহ আট দফা দাবি তুলে ধরেন তারা।

পূর্বঘোষিত সময় সকাল ৯টায় জোটের আহ্বায়ক পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার-এর সভাপতিত্বে ও সমন্বয়ক কেফায়েত শাকিল ও শামস ‍সুমন এর সঞ্চালনায় শুরু হয় বিক্ষোভ কর্মসূচি। এতে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) এর সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার এর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার, বিভিনিউজ২৪ ডটকম এর প্রধান সম্পাদক ইয়াসির ইয়ামীন, ওয়ার্ক  ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রজেক্ট অফিসার জিয়াউল হক লিটু, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এর কনসালটেন্ট আব্দুল ওহাবসহ জোটভুক্ত সংগঠনগুলোর নেতারা।

 

দিনব্যাপী এই কর্মসূচিতে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে জনসচেতনতা বাড়াতে দুপুরের পর অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে বাউল গান, গল্প এবং কবিতার ছন্দে তুলে ধরা হয় বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের আহ্বান। প্রতিবাদের অংশ হিসেবে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা স্থপতি রাকিবুল হক এমিলের নেতৃত্বে জীবিত ও মৃত হাতির ছবিও আঁকেন চিত্রশিল্পীরা। 

বিকালে জোটের আহ্বায়কের নেতৃত্বে বন অধিদফতরে অনাস্থাপত্র নিয়ে যান পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রধান বন সংরক্ষক সচিবালয়ে থাকায় তাঁর পক্ষে অনাস্থাপত্রটি গ্রহণ করেন বন সংরক্ষক (অর্থ ও প্রশাসন) হোসাইন মুহম্মদ নিশাদ ও সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক মো. আব্দুস ছালেক প্রধান।

অনাস্থাপত্রের পাশাপাশি আস্থা ফেরাতে জোটের পক্ষে দফা প্রস্তাবনা ও দাবি তুলে ধরেন নেতারা। দাবিগুলো হলোঃ  

১. হাতি হত্যার ঘটনাগুলোর বিষয়ে নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে তদন্ত করে দোষীদের চিহ্নিত ও শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।

২. হাতির কোরিডোর থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করে হাতির আবাসস্থল হিসেবে ফিরিয়ে আনতে হবে।

৩. দেশের বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় অবিলম্বে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি নিরপেক্ষ জাতীয় কমিশন গঠন করতে হবে।

৪. বন, বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত বিদ্যমান সবার আইনে প্রাকৃতিক বন ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় বন বিভাগের দায়িত্ব ও কর্তব্য স্পষ্টভাবে সন্নিবেশ করতে হবে এবং এই বিভাগের জনাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. বননীতি পরিবর্তন করে বনভূমিতে বাণিজ্যিকরণ এবং এরবিরুদ্ধ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং বনভূমিকে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল এবং সংরক্ষণের স্থানহিসেবে সুরক্ষিত করতে হবে।

৬.  প্রতিটি বন্যপ্রাণী সংক্রান্ত অপরাধের ঘটনা নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে এবং সেক্ষেত্রে বনবিভাগের ভূমিকা সবার কাছে স্পষ্ট করতে হবে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৭. এসডিজি-১৪ এবং ১৫ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

৮.নতুন করে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আর কোনো বনভূমি বরাদ্দ না দেওয়া এবং বন বিভাগের লোকবল ও বরাদ্দ বাড়িয়ে যুগোপযোগী এবং আধুনিক করে গড়ে তোলা।

অনাস্থাপত্রটি গ্রহণ করে আন্দোলনকারীদের সংগে এসে একাত্মতা ঘোষণা করেন বন অধিদফতরের বন সংরক্ষক (অর্থ ও প্রশাসন) হোসাইন মুহম্মদ নিশাদ ও সহকারী প্রধান বন সংরক্ষক মো. আব্দুস ছালেক প্রধান। এই সময় হোসাইন মুহম্মদ নিশাদ তাঁর বক্তব্যে সমস্যা সমাধানে নিজেদের তৎপরতা তুলে ধরে জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন।

এই সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আব্দুল্লহ আল নাঈম, সেভ আওয়রা-সি এর মহাসচিব আনোয়ারুল হক,  ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম ফর সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট-এর প্রধান সমন্বয়ক সাইদুল ইসলাম, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা,  সেইভ ফিউচার বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নয়ন সরকার, সবুজ আন্দোলন-এর অর্থ পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন রুপা,  গ্রীন ফাইটিং মুভমেন্ট-এর সভাপতি নাবিল আহমদ, সবুজ কুঁড়ি বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম উজ্জ্বল প্রমুখ।

 

বিভি/কেএস/রিসি 

মন্তব্য করুন: