• NEWS PORTAL

  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

দেশে পরিবেশ দূষণজনিক রোগের চিকিৎসা ব্যয় বছরে ৩৪.৩৮ বিলিয়ন টাকা

প্রকাশিত: ১৬:৪৪, ৫ জুন ২০২২

ফন্ট সাইজ
দেশে পরিবেশ দূষণজনিক রোগের চিকিৎসা ব্যয় বছরে ৩৪.৩৮ বিলিয়ন টাকা

দেশে পরিবেশ দূষনজনিত কারণে অসুস্থায় বছরে গড়ে ১৭ দিন কর্মহীন কাটাতে হয় মানুষকে। এতে জনপ্রতি চিকিৎসা বাবদ গড়ে ব্যয় হয় প্রায় ১০ হাজার ৫৮৭ টাকা। জনগষ্ঠির হিসাবে চিকিৎসা ব্যয়ের বাৎসরিক গড় দাঁড়ায় ৩৪.৩৮ বিলিয়ন টাকা।

১০২৩ জন তরুণের ওপর জরিপ চালিয়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ। "পরিবেশ দূষণ ও সুরক্ষা বিষয়ক তারুণ্য জরিপ ২০২২" শীর্ষক এই প্রতিবেদনে রাজধানী ঢাকার মানুষ ৩৭.৭০% বায়ু দূষণজনিত রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানানো হয়। 

শনিবার (৪ জুন) প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ জানায়, মাসজুড়ে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ১০২৩ জন তরুণের মতামত সংগ্রহ করেছেন তারা। এতে অংশগ্রহণকারীরা জানিয়েছেন তারা প্রতিদিন গড়ে একটি প্লাষ্টিক ব্যাগ তথা বছরে প্রায় ১৯ বিলিয়ন প্লাষ্টিক ব্যাগ ব্যাবহার করেন। জরিপে তরুণরা তার এলাকায় একের অধিক দূষণের কথা বললেও ৩৫.৯৫% তরুণ মনে করে বাংলাদেশের বায়ু দূষণের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি, তরুণদের মতে পানি ও শব্দ দূষণের মাত্রা বলেছে যথাক্রমে ২৬.৮৪% ও ২৭%। 

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, বায়ু দূষণের প্রধান উৎস হলো মেরামতহীন ভাঙাচোড়া রাস্তাঘাট (১৮.৭১%), ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কালো ধোয়া (১৯%) রাস্তাঘাট ভবনসহ নির্মাণ ও সংস্কার কার্যক্রম (১৫%) এব গৃহস্থালীর বর্জ্য (১৩.৭%)। ৬৪% তরুণ দাবি করছে যে বায়ু দূষণের ফলে তার এলাকায় প্রায়ই মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। পক্ষান্তরে ৪৩% তরুণ মনে করে বায়ু দূষণ মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেই। মাত্র ২% তরুণ মনে করে পানি দূষণ নিয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ দৃশ্যমান। 

জরিপকৃত প্রতি ৪ জনের ১ জন তরুণ মনে করেন নদী দূষণের জন্য কলকারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য প্রধান দায়ী। প্রায় ৫০% তরুণ প্লাষ্টিকের দূষণের প্রভাবে জলাবদ্ধতা এবং জলাধারে নাব্যতা সংকটের কথা বলেছেন। প্রায় ৬১% তরুণ তার এলাকায় সাইকেল লেন না থাকার কথা বলেছেন। পরিবেশ দূষনজনিত অসুস্থায় গড়ে ১৭ দিন কর্মহীন কাটাতে হয়েছে এবং চিকিৎসা বাবদ গড়ে প্রায় ১০ হাজার ৫৮৭ টাকা ব্যায় হয়েছে। বছরে দূষণজনিত অসুস্থতায় ব্যয় হচ্ছে ৩৪.৩৮ বিলিয়ন টাকা।  নিয়ন্ত্রণহীন পরিবেশ দূষণের প্রায় ২ এর অধিক কারণের কথা বললেও প্রধান কারণ হিসাবে নাগরিক সচেতনতার ঘাটতি, আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকা এবং প্রয়োজনীয় আইন কাঠামোর অনুপস্থিতি, স্থানীয়  সরকারের নিষ্ক্রিয়তার কথা বলেছেন জরিপে অংশগ্রহণকারীরা।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমানে আমরা পরিবেশগত নানাবিধ সমস্যা মোকাবেলায় সংকটপূর্ণ সময় অতিবাহিত করছি এবং বর্তমানে এন্থ্রপসিয়ান যুগে প্রবেশ করছি। আমরা নিজস্ব প্রয়োজনে পরিবেশকে যেভাবে ব্যবহার করছি তাতে আমরা আমাদের সামাজিক টেকসই অবকাঠামোকে ব্যহত করছি। 

বায়ুদূষণকে প্রধান দূষণ হিসাবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আমরা দৈনিক যে পরিমান পানি সেবন করে থাকি তার থেকে অনেক গুণ বেশি আমরা প্রকৃতি থেকে বায়ু গ্রহন করে থাকি। দূষণ ও শারীরিক ক্ষতি কমাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীদের বাইসাইকেল ব্যবহারে উৎসাহিত করা উচিত। 

বাংলাদেশে স্যানিটারি বর্জ্যের ভাগাড় এবং পয় বর্জ্য বা সুয়ারেজ ট্রিটমেন্টপ্লান্ট নাই পানির স্বাস্থ্য সংকটাপন্ন করার এটি বড় কারণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

চেঞ্জ ইনিটিয়েটিভের প্রধান নির্বাহী এম জাকির হোসেন খান বলেন, প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় নীতি ও আইনের পাশাপাশি তরুণদের নেতৃত্বে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পরিবেশ সুরক্ষায় সবুজ উদ্যোক্তা তৈরির বিকল্প নেয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জরিপের আলোকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় চেঞ্জ ইনিটিয়েটিভের পক্ষ থেকে ১০ দফা সুপারিশও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। সেগুলো হলো-
১) প্রকৃতি ও পরিবেশের সুরক্ষা ও সংরক্ষণের পাশাপাশি সব ধরনের দূষণ ও দখল রোধে সমন্বিত পরিবেশ ও প্রতিবেশ আইন ও বিধি প্রণয়ন  এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাথে সামঞ্জস্য রেখে যেকোনো ধরনের প্রতিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংশকে ‘প্রকৃতির বিরুদ্ধে অপরাধ’ বলে আইনী সংস্কার 
২) পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মামলার দ্রুত নিস্পত্তিতে  অভিজ্ঞ ও প্রতিশ্রুতিশীল আইনজ্ঞের সমন্বয়ে বিশেষায়িত ‘সবুজ আদালত’ প্রতিষ্ঠা করা
৩) প্লাস্টিকসহ সব ধরণের বর্জ্য সংগ্রহ এবং এর পুনঃচক্রায়নে তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে কার্যকর কর ও সহনীয় শর্তে বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান
৪) বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে পরিবেশ সুরক্ষায় বেসরকারি বা ব্যক্তি খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান যাতে পিপিপি মডেল যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য কার্যকর আইনী ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রণয়ন
৫) সব ধরণের দুষণ ও মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ রোধে প্রযুক্তিভিত্তিক দূষণ পরিমাপ পদ্ধতির ভিত্তিতে দৃষ্টান্তমূলত আর্থিক  ‘দূষণ ও কার্বন কর’ চালু এবং তার প্রয়োগে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে তথ্যের সর্বোচ্চ উন্মুক্তকরণ 
৬) বিদ্যমান আইনের প্রয়োগ নিশ্চিতে পরিবেশ সুরক্ষা ও সংরক্ষণের সাথে সম্পৃক্ত প্রতিটি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট কর্মী/দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে আইসিটি-ভিত্তিক অটোমেটেড ও সময়াবদ্ধ কার্যক্রম প্রণয়ন ও তার কঠোর বাস্তবায়নে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে ‘পুরস্কার ও তিরস্কার’ ব্যবস্থা চালু
৭) বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট ঘনীভূত হওয়ার প্রেক্ষিতে জ্বালানি নিরাপত্তা ও টেকসই অগ্রযাত্রা নিশ্চিতে সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে উৎপাদিত নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের ব্যাবহার নিশ্চিত করা
৮) নদী কমিশনের চিহ্নিত পানির উৎস দখল ও দুষণকারীদের বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপের পাশাপাশি সব ধরনের সরকারি সুবিধা প্রাপ্তির অযোগ্য বলে ঘোষণা
৯) প্রতি নগর এবং শহরে বায়ু দূষণ রোধে ইলেকট্রিক এবং সৌরচালিত কলকারখানা, যানবাহন, ইলেকট্রনিকস পণ্য এর ব্যাবহারে সব ধরনের কর রেয়াত ও এ খাতে স্বল্প/বিনা সুদে বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে এবং এনজিওকে এগিয়ে আসা এবং 
১০) সবুজ উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ সংগ্রহে বিনা সুদে জামানতবিহীন দীর্ঘমেয়াদে কিস্তির সুবিধাসহ মূলধন প্রদানে  সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ। 

বিভি/কেএস

মন্তব্য করুন: