• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

দেশে শিশুদের সীসা বিষক্রিয়া রোধে কাজ শুরু করলো এসডো-ইউনিসেফ

প্রকাশিত: ২২:২৩, ৩ এপ্রিল ২০২৪

ফন্ট সাইজ
দেশে শিশুদের সীসা বিষক্রিয়া রোধে কাজ শুরু করলো এসডো-ইউনিসেফ

সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে সীসার সংস্পর্শে আসার ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তার অবনতি ঘটছে। সমীক্ষায় উঠে এসেছে বাংলাদেশে ৯ দশমিক ৬ মিলিয়নেরও বেশি শিশুর রক্তে অতিরিক্ত মাত্রায় সীসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যার বাৎসরিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০ মিলিয়ন আইকিউ পয়েন্ট। এসডো এবং ইউনিসেফ-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ঢাকার শৈলপ্রপাত কনফারেন্স রুম, পর্যটন ভবনে আয়োজিত বাংলাদেশে শিশুদের সীসা বিষক্রিয়া মোকাবিলা শীর্ষক ইন্সেপশন ওয়ার্কশপে এ বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়।       

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী  প্রধান অতিথি হিসেবে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার বক্তব্যে শিশু স্বাস্থ্যের উপর সীসা বিষক্রিয়ার ক্ষতিকারক প্রভাব এবং এই সমস্যাটির সমাধানের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, 'বর্তমানে, বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে আমাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।'

বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব এবং এসডোর সম্মানিত চেয়ারপারসন সৈয়দ মার্গুব মোর্শেদ এই অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, বিশ্বব্যাপী অন্যান্য অনেক অঞ্চলের মতো বাংলাদেশেও শিশুরা সীসার সংস্পর্শে আসায় ক্ষতিকারক প্রভাবের মুখোমুখি হচ্ছে। সীসা বিষক্রিয়ার সমস্যা মোকাবিলায় দ্রুত উদ্যোগ নেওয়ার উপর তিনি জোর দিয়েছেন।     

অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসকে রফিকুল ইসলাম, চিফ কন্ট্রোলার (অতিরিক্ত সচিব), অফিস অফ চিফ কন্ট্রোলার অফ ইম্পোর্ট এন্ড এক্সপোর্টস। তিনি বলেন, বর্জ্য অব্যবস্থাপনা বিশেষ করে ই-ওয়েস্ট থেকে নির্গত সীসা শিশুদের স্বাস্থ্যেকে হুমকির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ সমস্যা মোকাবেলায় রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া এবং সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. আব্দুল হামিদ বলেন, যা কিছুই শিশু স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলে তা থেকে তাদের নিরাপদ রাখায় আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

মহিলা বিষয়ক অধিদফতরের মহাপরিচালক কেয়া খান বলেন, শিশুদের সীসা বিষক্রিয়া নিয়ে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সার্বিক সহযোগিতা করার আশা ব্যক্ত করেন।  

বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক আনজির লিটন অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। অনুষ্ঠানে তিনি "স্মার্ট বাংলাদেশ" গড়ার নিশ্চয়তায় সীসা দূষণ রোধের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, "আমাদের সন্তান এবং জাতির স্বাস্থ্য ও ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধির জন্য পরিবেশ রক্ষায় সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন।"

বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম বলেছেন যে, "সীসা দূষণ একটি উদ্বেগজনক সমস্যা। আমরা এসডো এবং ইউনিসেফ বাংলাদেশের উদ্যোগকে সমর্থন করি এবং তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে চাই।" এসডো দ্বারা পরিচালিত গবেষণার মাধ্যমে বিএসটিআই সীসা দূষণ নিয়ন্ত্রণে নিরাপদ মাত্রা নির্ধারণ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান মায়া ভ্যানডেনেন্ট বাংলাদেশের শিশুদের মধ্যে সীসা বিষক্রিয়ার জরুরি সমস্যা মোকাবেলায় এসডোর সক্রিয় প্রচেষ্টার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। শিশুদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের লক্ষ্যে নেওয়া এই সম্মিলিত উদ্যোগটি উল্লেখযোগ্য প্রদর্শন হিসেবে কাজ করবে বলে তিনি মনে করেন।  

এসডো’র সেক্রেটারি জেনারেল ড. শাহরিয়ার হোসেন বলেন, “মানুষের সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য একটি নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশের প্রয়োজন। তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।"   

এসডো’র নির্বাহী পরিচালক সিদ্দীকা সুলতানা উল্লেখ করেন, "এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আমরা সীসার ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে আমাদের শিশুদের নিরাপদ রাখার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি। তাই এই প্রকল্পটি আমাদের দেশের শিশুদের টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তার লক্ষ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।"    

সীসা দূষণ একটি গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষ করে শিশুরা এই সীসা বিষক্রিয়া দ্বারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এটি তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ, শারীরিক বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক সুস্থতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।এই দূষণ মোকাবিলায় দেশে নানান প্রচেষ্টা চলমান থাকা সত্ত্বেও, শিল্প কারখানা থেকে নিঃসৃত দূষিত পানি এবং সীসাযুক্ত রং দ্বারা শিশুরা সীসা বিষক্রিয়ার শিকার হচ্ছে। পরিসংখ্যান বলছে, এর কারণে বাংলাদেশ আনুমানিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে যা কিনা ২০১৯ সালের দেশের মোট জিডিপির প্রায় ৩.৫% এর সমান। অতএব, সীসা বিষক্রিয়া প্রতিরোধের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

থিমাটিক প্রেজেন্টেশনটি উপস্থাপন করেছেন এসডোর রিসার্চ এন্ড ক্যাম্পেইন এসোসিয়েট সাদমিন সাদাফ জাহান।

বিভি/কেএস/টিটি

মন্তব্য করুন:

Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2