• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

১০০ শতকের পুকুর ভরাট করে জমি বিক্রি, ভাগাভাগি হচ্ছে টাকাও

এইচ এম প্রফুল্ল, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:৩৭, ৭ মে ২০২৩

আপডেট: ২৩:৩৩, ১১ মে ২০২৩

ফন্ট সাইজ
১০০ শতকের পুকুর ভরাট করে জমি বিক্রি, ভাগাভাগি হচ্ছে টাকাও

দুই মাস আগেও এখানে ছিল বিশাল পুকুর। এখন মনে হয় বিশাল মাঠ

মো. আক্তার হোসেন। তিনি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নাগরিক পরিষদের ব্যানারে তিনি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক পদে দায়িত্বও পেয়েছেন তিনি। সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে তিনি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার গঞ্জপাড়া এলাকায় প্রায় একশ শতকের পুকুর ভরাট করেছেন। তবে আক্তার হোসেনের দাবি, তিনি ৩০ লাখ টাকার চুক্তিতে এই পুকুর ভরাট করেছেন, এখানে কোন স্বার্থ নেই। 

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মাত্র এক মাস আগেও গঞ্জপাড়া আল আমিন বারিয়া মাদ্রাসার (এম এ হক) পাশে তিন রাস্তার মোড়ে একটি বিশাল পুকুর ছিল। এ পুকুরে মাছ চাষ হতো, স্থানীয়রা গোসল করতেন, গরমের দিনে শিশুরা দাপাদাপি করতো। কিন্তু এখন পুকুরের কোন চিহ্ন নেই। এখন যেন বিশাল এক ফুটবল মাঠ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরো এপ্রিল মাস জুড়ে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আক্তার হোসেন প্রকাশ্য দিনের আলোতে বালু ও মাটি ফেলে পুকুর ভরাট করেন। খাগড়াছড়ি শহরের গঞ্জপাড়ায় এমন ঘটলেও প্রশাসন চোখ বন্ধ করেছিল।

জানা গেছে, পুকুর ভরাট করা ওই গঞ্জপাড়ায় বর্তমানে প্রতি গণ্ডা জমি বিক্রি হচ্ছে প্রায় ১৬ লাখ টাকা করে। সে হিসেবে ভরাট করা একশ শতক পুকুরে বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা। তবে এ নিয়ে স্থানীয় ক্ষোভ থাকলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, পুরো এপ্রিল মাস জুড়ে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পুকুরটি মাটি ফেলে ভরাট করেন। শেষ মুহুর্তে প্রশাসনের বাঁধা আসায় পুকুরের সামন্য অংশ ভরাট না করে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। 

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মো. ইব্রাহিম বলেন, এখানে তাদের ১০ জনের জায়গা রয়েছে। প্রত্যেকের ১০ শতক করে। তবে আব্দুল কাইয়ুম নামে বাসিন্দা বলেন, এখানে সব জায়গা তার একার। তিনি নিজেই ৬৮ শতক জায়গার মালিক। এছাড়া মাদ্রাসার জন্য ১০ শতক ও মসজিদের ১০ শতক জায়গা রাখা হয়েছে। 

মো. ইব্রাহিমের জায়গা থাকা প্রসঙ্গে আব্দুল কাইয়ুম বলেন, জায়গাটি কেনার সুবিধার্থে এলাকার কিছু লোককে নাম মাত্র রাখা হয়েছে। আব্দুল কাইয়ুমের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে মো. ইব্রাহিম পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন, আমরা কি তাহলে আব্দুল কাইয়ুমের ক্যাডার বাহিনী নাকি? শুধু বিএনপি নেতা ইব্রাহিম নয় এখানে কয়েক কোটি টাকার জায়গা ভাগ-বাটোয়ারা হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মফিজসহ অনেকে প্রভাবশালী মহলের মধ্যে। তবে নেপথ্যে ছিলেন আব্দুল কাইয়ুম।

গঞ্জপাড়া আল আমিন বারিয়া মাদ্রাসার (এম এ হক) সহকারী শিক্ষক মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ট্রেনিংয়ে ছিলেন। ট্রেনিংয়ে যাওয়ার আগে পুকুর ছিল। এসে দেখি পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এ পুকুরটি এলাকার একমাত্র পানির উৎস। মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গোসলসহ এ পুকুরের পানি ব্যবহার করতো। 

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. এরফান উদ্দিন  বলেন, গঞ্জপাড়ায় কোন পুকুর ছিল কিনা জানা নেই। যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ভাইস চেয়াম্যান মো. আক্তার হোসেন বলেন, শেষ মুহূর্তে প্রশাসনের বাধার কারণে পুকুরের প্রায় ৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রায় একশ শতক পুকুর ভরাট ও ভাগাভাগিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও কতিপয় যুবদল নেতার যৌথ যোগসাজশ ছিল। তার মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মফিজুর রহমান, সদর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মো. ইব্রাহিমসহ অনেকে রয়েছেন। এলাকাবাসী পুকুর ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানিয়েছেন। 

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: