• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

আমাকে আমার মতো থাকতে দাও

জসিম মল্লিক

প্রকাশিত: ১৪:৫৪, ৬ নভেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
আমাকে আমার মতো থাকতে দাও

আমার কিছু সমস্যা আছে। জটিল সমস্যা।  সেটা হচ্ছে নিজেকে সঠিক মূল্যায়ন করতে না পারা। নিজের ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা না থাকা। আমি নিজেকে যতটা ভীতু মনে করি আমি আসলে ততটা ভীতু নই। আমি নিজেকে ভদ্রলোক বলে মনে কৱি তাই অন্যকে নিয়ে মাথা ঘামাই না। নষ্টকে নষ্ট বলতে আমার দ্বিধা হয়। আমি কাৱো কুৎসা গাইতে লিপ্ত হইনা। আমি সবসময় সত্যেৱ পক্ষে। আপাত আমাকে ভীতু মনে হলেও আমি জীবনে অনেক সাহসী কাজ করেছি, সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

 

ভীতু হলে এইসব সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারতাম না। আমি যা কিছু অর্জন করেছি সবই নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে, নিজের সাহসীকতায় এবং নিজের চেষ্টায়। আমাকে কেউ কিছু করে দেয়নি। আমি কারো কাছে কখনও হাত পাতিনি। চেয়ে নেইনি। চাইলে আমি জীবনে অনেক কিছু অর্জন করতে পারতাম, সে সুযোগ আমার ছিল। কিন্তু আমি তা করিনি। আমি কখনও অসৎ হইনি, কারো তাবেদারি করিনি। আমি যখন কারো জন্য কিছু করি ভালবেসে করি, বিনিময় চাই না। কেউ আমার সাথে চালাকি করলে আমি ঠিকই বুঝতে পারি কিন্তু কখনও তাকে সেটা বুঝতে দেই না। এটাকে কেউ  আমার বোকামি বা দুর্বলতা মনে করলে সেটা ভুল।

আমার সন্তানদের আমি অনেক কষ্ট করে বড় করেছি। পরম ভালবাসায় বড় করেছি। আমি অনেক সংগ্রাম করেছি, কঠোর পরিশ্রম করেছি। সহজে আমার জীবনে কিছু ঘটেনি। আমি কখনও কোনো অন্যায় সুবিধা নেইনি। কোনো অন্যায় কাজের সাথে আমি জড়িত নই। আমি উজান ঠেলে বড় হয়েছি। যা ঘটার কথা ছিলনা তাই ঘটেছে আমার জীবনে। বরিশালের মতো এক ছোট্ট শহর থেকে আমি একলা একদিন ঢাকায় এসেছিলাম। কুল কিনারাহীন জীবন ছিল তখন আমার। ঢাকা শহরে আমার কেউ নাই, কাউকে চিনিনা, খাওয়ার পয়সা থাকে না। সেই আমি একদিন ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয়ে ভর্তি হলাম। অথচ এর আগে আমি কখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখিনি। তখনও জানিনা কিভাবে পড়ব, কোথায় থাকব, আদৌ এটা সম্ভব কিনা আমার পক্ষে জানা ছিলনা কিছুই। বস্তুতঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই আমার জীবনটাকে বদলে দিয়েছিল। সাহসী করে তুলেছিল। সেখানে দেশের সব মেধাবীরা, টগবগে তরুন, যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তারাই শিক্ষার্থী। শিক্ষকরাও দেশের সেরা সব ব্যাক্তিত্ব। মহসিন হলে থেকেছি এবং ছাত্রাবস্থায়ই একদিন দেশের সেরা নিউজ ম্যাগাজিন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় কাজ করার সুযোগ পাই আমি। 

বিচিত্রার কারনেই দেশের বড় বড় লেখক, কবি, সাংবাদিক, রাজনীতিক, আমলা, শিল্পী, ব্যারিষ্টারদের সাথে চেনা জানা হয় যারা ছিল আমার কল্পনার মানুষ, স্বপ্নেৱ মানুষ। জাতীয় প্রেসক্লাবের মেম্বার হলাম যা সব পেশাদার সাংবাদিক বা জনসংযোগ কর্মীদের জন্য আরাধ্য। বিচিত্রায় অনেক সাহসী রিপোর্ট করেছি। স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে বিচিত্রার অনেক কাজ আছে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। জেসমিনের মতো রুপসী মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে ক্যাম্পাসে। পরিচয় থেকে পরিণয়। এটাও ছিল বিরাট সাহসী সিদ্ধান্ত। জেসমিন আমার জীবন বদলে দিয়েছে। পাশে থেকেছে সবসময়। দেশ বিদেশেৱ সেরা পত্রিকাগুলোতে আমি লেখার সুযোগ পেয়েছি, সেরা প্রকাশনী থেকে আমার বই প্রকাশিত হয়। দেশ বিদেশের বইমেলায় আমি অংশ নেই। পত্রিকা বা টেলিভিশনে কথা বলার সুযোগ পাই। অনেক দেশ ঘুরতে পারি। 
১৯৯৫ সালে ঢাকা শহরে আমি প্রথম গাড়ির মালিক হই যা ছিল প্রায় স্বপ্নের মতো। কানাডা আসা ছিল আমার জীবনে সবচেয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত। শিকড় উপরে চলে আসাটা এতো সহজ কাজ নয়। কানাডা আসার আগেও আমি আমেরিকা, ইউরোপ ঘোরার সুযোগ পেয়েছি। ১৯৯৮ সালে সাহস করে আমেরিকান এম্বাসিতে দাঁড়িয়েছি এবং তারা আমাকে ভিসা দিয়েছে, ইউকে ভিসা দিয়েছে। সেবারই প্রথম প্লেনে চড়া আমার। ২০০৩ সালে কানাডা ইমিগ্রেশনের জন্য ইন্টারভিউ দিতে আমি লসএঞ্জেলেস গিয়েছিলাম এবং আমি কোয়ালিফাই করেছিলাম। জার্নালিষ্ট ক্যাটাগরিতে আমার ইমিগ্রেশন হয়েছিল। প্রথমে অটোয়া আসি স্বপরিবারে। সেখান থেকে ২০০৪ সালে টরন্টো পারি জামানোটাও ছিল সাহসী সিদ্ধান্ত। ২০১৯ এ হজ্জ কৱাটাও ছিল পৱম সৌভাগ্যেৱ আমাৱ জন্য।

আমার টিকে থাকার লড়াইটা এতো সহজ ছিল না। আমি আমার অতীত ভুলি না। অস্বীকার করি না। চ্যালেঞ্জ নেওয়াটাই আমার নিয়তি। তাই আমার অল্পতেই ভেঙ্গে পড়ার মতো কোনো কারণ ঘটেনি। যেসব বিষয় আমার হাতে নেই, আমার নিয়ন্ত্রণে নেই সেসব নিয়ে আমি মাঝে মাঝে উদ্বিগ্ন হই, মাথা ঘামাই। যেটা আমার হাতে আছে বর্তমান, সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করাই হচ্ছে বুদ্ধিমানের কাজ। বিদেশে গুটিকয় লোক আছে যারা আমার প্রতি অহেতুক ঈর্ষান্বিত, আমার সাথে শত্রুটা করার চেষ্টা করে অথচ তাদের সাথে আমার কোনো সখ্যতা নাই, বন্ধুত্ব নাই, উঠাবসা নাই। যাদের ধারে কাছেও আমি ঘেষিনা। আমি সবসময় মানবিক গুনাবলী সম্পন্ন মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব করি। আমার ভালমানুষিকে যারা দুর্বলতা মনে করে তারা ভুল করে। আমি আমার মতো থাকতে চাই। প্রকৃতি আমাকে সবসময় রক্ষা করে। বুকে আগলে রাখে। আমার সাথে মায়ের দোয়া এবং মানুষের ভালবাসা আছে। উজান ঠেলেই আমি সামনের দিকে এগিয়ে গেছি। প্রতিকুলতাকে জয় করে এগিয়ে যাওয়ার নামই জীবন। একজন যিনি আছেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তিনি সঠিক পথ দেখাবেন।
টরন্টোঃ ৪ নভেম্বর ২০২২

মন্তব্য করুন: