• NEWS PORTAL

  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪

বড়দিন কেন বড়দিন

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ২৭ ডিসেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
বড়দিন কেন বড়দিন

প্রাচীনকাল থেকে উৎসব মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যে কোনো উৎসব মানুষকে জীবনের ইঁদুর দৌড়ের চূড়ান্ত ব্যস্ততা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে দেয়। উৎসব যে ধরনের হোক না কেন প্রত্যেকটি উৎসবের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য থাকে। যেমন প্রত্যেক উৎসবে মানুষ প্রতিদিনকার ব্যস্ততা দূরে সরিয়ে রেখে আনন্দে মেতে ওঠে। পৃথিবীতে এমন বেশ কিছু উৎসব রয়েছে যেগুলোর উদযাপনকালে বিশ্বজুড়ে মানুষ জাতি-ধর্ম ভুলে একই দিনে একই সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠে। খ্রিস্টান ধর্মের উৎসব বড়দিন এ ক্ষেত্রে অন্যতম। প্রতিবছর ২৫শে ডিসেম্বর বিশ্ব জুড়ে এই দিনটি পালন করা হয়। প্রাচ্য দেশগুলিতে এই দিনটি বড়দিন নামে পরিচিত হলেও পাশ্চাত্যে এটি ক্রিসমাস নামে পরিচিত।

বড়দিনের ইতিহাস:
সাধারণভাবে খ্রিস্টান সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বিশ্বাস করে এই দিনেই ঈশ্বরপুত্র যীশু খ্রীষ্টের জন্ম হয়েছিল। এই উপলক্ষে প্রতি বছর ২৫শে ডিসেম্বর তারিখটিকে যীশুর জন্ম জয়ন্তী হিসেবে পালন করা হয়। তবে এখনও যিশুখ্রিস্টের ঐতিহাসিক সত্যতা সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। তবে আদিযুগীয় খ্রিস্টানদের বিশ্বাস এই দিনে যীশুখ্রীষ্ট মাতা মেরির গর্ভে প্রবেশ করেছিলেন। ২৫শে ডিসেম্বর দিনটি বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত হওয়ার পিছনে রয়েছে এই নামগুলির শব্দগত ব্যুৎপত্তি। সাধারণভাবে ইংরেজিতে ক্রিসমাস বা খ্রিস্টমাস শব্দটির উৎপত্তি ‘খ্রিষ্টের মাস’ শব্দবন্ধ থেকে।

এখানে মাস বলতে অর্থ হিসেবে উৎসব বোঝানো হয়। এর আদিমতম ইংরেজি হলো Cristes mæsse. আবার অন্যদিকে প্রাচীন গ্রীক ভাষায় ‘X’ হলো ‘Christ’ শব্দের প্রথম অক্ষর। ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে খ্রিস্ট শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ বোঝাতে ‘X’ অক্ষরটি ব্যবহৃত হতে থাকে। সেই থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে এই দিনটি ‘এক্স মাস’ নামেও পরিচিতি পায়।ইতিহাস কিংবা শব্দগত ব্যুৎপত্তি যাই হোক না কেন কোনো উৎসবের প্রকৃত প্রাণ লুকিয়ে থাকে সেই উৎসবটির উদযাপনের মধ্যে। বিশ্বজুড়ে ২৫সে ডিসেম্বর তারিখে দিনটির ব্যাপকভাবে উদযাপন বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় এইদিন নানা অনুষ্ঠান পালন করা হয়ে থাকে।

কোথাও মহাসমারোহে পালন করা হয় যীশুর জন্মোৎসব, আবার কোথাও বা নানা জাঁকজমকপূর্ণ কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়। বিশ্বজুড়ে সকল গির্জা গুলিকে অতি সুন্দর সাজে সাজিয়ে তোলা হয়। কোথায় আবার আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মীয়-পরিজন এর মধ্যে চলে উপহার দেওয়া-নেওয়া।

বড়দিন পালনের প্রকারভেদ:
বিশ্বজুড়ে বড়দিনের প্রচলিত সাধারণ সংস্কারগুলির সঙ্গে লোকাচার জড়িত হয়ে এই দিনটি উদযাপন এর মধ্যে বৈচিত্র্য এনে দেয়। এই বৈচিত্রের কারণেই পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বড়দিন উদযাপনের ধরনগুলিও ভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন ক্যাথলিক দেশগুলিতে বড়দিনের আগের দিন ধর্মীয় শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়।

বড়দিনের স্যান্টাক্লজ:
বড়দিনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে স্যান্টাক্লজ-এর নাম। ছোটদের কাছে উপহার পৌঁছে দেওয়ার প্রবাদ নিয়ে এই ব্যক্তিত্ব বড়দিন উদযাপনে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। অনেকের মতে স্যান্টাক্লজ নামটি ডাচ সিন্টারক্লাস নামের অপভ্রংশ, যার সাধারণ অর্থ হলো সেন্ট নিকোলাস। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে তুরস্কের মীরার বিশপ সেন্ট নিকোলাস শিশুদেরকে অত্যন্ত পছন্দ করতেন।

তিনি প্রতিনিয়ত তার অঞ্চলের শিশুদের পোশাক আশাক, পড়াশোনা এবং স্বাস্থ্য সম্বন্ধে খোঁজখবর নিতেন। এই খোঁজখবরের দ্বারা শিশুটির মূল্যমান যাচাই করে তিনি নির্ধারণ করতেন সেই শিশু পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য কি না!

বড়দিন বিশ্বজুড়ে আনন্দ উদযাপনের ক্ষেত্রে প্রকৃতই খুব বড় একটি দিন। ধর্মগতভাবে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে এই দিনটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। কিন্তু বড়দিন উদযাপন শুধুমাত্র খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা।

জাতি-ধর্ম-বর্ণ ভেদ ভুলে সকল মানুষ এই দিনটির উদযাপনে অংশগ্রহণ করে। সুদূর অতীতে যীশু খ্রীষ্ট সকল মানুষের মধ্যে প্রেম ও ভালোবাসার যে বাণী প্রচার করতে চেয়ে ছিলেন বড়দিন উদযাপনের মধ্য দিয়ে যিশুখ্রিস্টের সেই স্বপ্নই সার্থকভাবে রূপায়িত হয়।

বিভি/এনএ

মন্তব্য করুন: