• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

আপন পরের খেলা

জসিম মল্লিক

প্রকাশিত: ১৭:৪৮, ৭ জানুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
আপন পরের খেলা

সংগৃহীত ছবি

পুরুষদের জন্য ষাটোৰ্ধ্ব বয়সটা সাৰ্কাসেৱ তারের উপর দিয়ে হাঁটার মতো বিপদ্জনক। এই বয়সটা খুবই নিৰ্জনতার, একাকীত্বের এবং অভিমানের। কি যেনো একটা থাকার কথা এই বয়সে কিন্তু নেই। থাকলে ভাল হতো। সংসারের মধ্যে থেকেও মনে হয় কোথাও নেই। মনে হয় অতিথি, যেনো বেড়াতে এসেছে, আবার চলে যাবে। নিজের মধ্যে নিজে গুটিয়ে থাকার বয়স, গুটিয়ে যাওয়ার বয়স। একাকী হয়ে যাওয়ার বয়স। চারিদিকে সবই আছে, সন্তান আছে, স্ত্রী আছে, বন্ধু আছে, আত্মীয় আছে কিন্তু মনে হয় আসলে তারা নেই। যেনো কাছে থেকেও দূরে। সন্তানেরা নিজের জগত, নিজের সংসার, নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। জীবন নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা থাকে তাঁদের। বাবা মায়ের সাথে সম্পৰ্কটা হয়ে পড়ে লৌকিক। স্ত্রীর সাথে এক ধরণের জীবন যাপন থাকে শুধু এর বেশি কিছু না। তাদের সহ্য ক্ষমতা কমে যায়। তাদের প্রায়োরিটি তখন সন্তান, নাতি পুতি, নিজের মা-বাবা, ভাই-বোন। স্বামী তখন একটা বাড়তি মানুষ, বিরক্তিকর। এই বয়সে বেশিরভাগ মানুষ টুপ করে চলেও যায়। অনেকেই চলে গেছে। যারা গেছে তারা আর ফিরবে না।



প্রতিদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে মনে ভাবি আর একটা বাড়তি দিন পাওয়া গেলো। এই বয়সে একাকী থাকা খুবই ঝুঁকিপূৰ্ণ। যদি ঘুমের মধ্যে চলে যাই কেউ জানবে না। প্রিয়জনের হাতের স্পৰ্শ পড়বে না। মুখে পানি দেওয়ারও কেউ থাকবে না। কত আপনজন দূরে সৱে গেছে। এমন হওয়াৱ কথা ছিল না। সমস্যাটা কোথায় বুঝতে পারি না। এজন্য কে দায়ী তাও বোধগম্য হয় না। আমি কী একটু অপ্রয়োজনীয় হয়ে গেছি! অবচেতনে কোনো আত্মঅহমিকায় ভুগছি! তা যদি হয় তাহলে নিজেকে নিজে ধিক্কার দেই। ছিঃ জসিম ছিঃ! যদি অন্যের জন্য হয় তাহলে আমার কিছু করার নেই। আমি বারবার তাদের কাছে যেতে ৱাজী আছি। তখন নিজের আত্মসম্মানের কথা ভাবব না। সম্পৰ্ক  টিকিয়ে রাখার জন্য যতটুকু করা দরকার করতে দ্বিধা করব না আমি।ভাঙ্গনকে আমি ভয় পাই। আমার প্রিয়জন যদি দশবারও আমার ডাকে সারা না দেয়, আমার ফোন না উঠায় তাহলেও আমি তাঁকে মুছে ফেলব না। আশায় থাকব একদিন ফিরবে। যদি আমি ভুল করি একদিন আমি আমার ভুল বুঝতে পারব।

সব পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছি। নিজেকে না ঘরকা না ঘাটকা মনে কৱতে চাইনা। কিছুই সুচারুরূপে করতে পারিনি। সব কিছুতে নিজেকে এডজাষ্ট করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। অভিমান অনেক তীব্র আমার। স্বপ্নের মতো কিছুতেই উজান ঠেলে সামনের দিকে এগুতে পারি না। সবকিছু মেনে নিতে পারি না। নিতে পারলে ভাল হতো। নিজেকে নিজে অনেক বুঝাই। মনকে প্রবোধ দেই। নিজেকে বলি, জসিম, সবকিছু তোমাৱ চাওয়ার মতো ঘটবে না। সবকিছু তোমাৱ হাতে নেই। নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য নিয়মিত প্রে করি, গান শুনি, মুভি দেখি, বই পড়ি, লিখি, ভ্রমণ করি। কোনটার সাথে কোনোটাৱ বিরোধ হয় না। এর বাইরে আর কিছু করার ক্ষমতা আমার নাই। মানুষের মন জয় করা অনেক কঠিন কাজ। নিরবচ্ছিন্নভাবে কারো প্রিয় হয়ে উঠতে পারা সহজ কাজ না। যাদের আপন মনে করতাম তারা পর হয়ে যায়।আবাৱ যারা দূরের তারা আপন হয়ে উঠে। এই পৃথিবী অনেক রহস্যময় জায়গা। আপন পরের এই জট কিছুতেই খোলে না। একটা গোলক ধাঁধা যেনো। ষাটোৰ্ধ্ব বয়সটা এমনই বোধকৱি। এই বয়সে দরকার নিরবচ্ছিন্ন ভালবাসা, কেয়ার আর আপনজনের সান্নিধ্য।

মন্তব্য করুন: