বৃষ্টিৱ ঘ্রাণ আর সংসারের মায়া
ঢাকায় বৃষ্টি
আবার পুরনো জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। পুরনো নিয়মে বন্দী হয়ে গেছে জীবন। বেশ অনেকটা দিন বাংলাদেশে কাটিয়ে এসে আগের নিয়মে অভ্যস্ত হতে একটু সমস্যা হচ্ছে বটে কিন্তু সময় সবকিছু স্বাভাবিক করে দেয়। এখনও ঘুম ভাঙলে মনে হয় আমি মহাখালীর বাসায় শুয়ে আছি। নিজের চেনা বিছানাটা অচেনা লাগে। আরে মশাড়ি গেলো কই! এসির শব্দ পাচ্ছি না যে! বাইরে এতো শুনশান কেনো! মহাখালীতে সকাল হলেই লোকজনের কোলাহল, ফেরওিয়ালাদের হাক ডাক, ফজরের নামাজের সময় অবিরাম কুকরের ঘেউ ঘেউ, কৰ্পোরেশনের নারীদের রাস্তা ঝাট দেওয়ার ছরাত ছরাত শব্দ পাচ্ছি না তো! একটা আড় আড় ভাব এখনও আছে। একটা পিছুটান। কি যেনো ফেলে এসেছি। চোখ বন্ধ করলেই দৃশ্যের পর দৃশ্য ভেসে উঠে। বইমেলা, বাংলা একাডেমি, প্রেসক্লাব, রাস্তার জানজট, পদ্মাসেতু দিয়ে বরিশাল যাওয়া, বরিশাল ক্লাবের চেনা কক্ষ, মল্লিক বাড়ির গাছ গাছালি, মা বাবার কবর এইসব দৃশ্য। একেই হয়ত বলে এ্যাট হোম ফিলিং।
দেশ কেবলই টানে। আসার পর থেকেই মনে হচ্ছে কি যেনো নেই এখানে। কি যেনো থাকার কথা ছিল। এতো সুন্দর সাজানো গোছানো সবকিছু তারমধ্যেও একটা শূন্যতা বাদুরের মতো ঝুলে থাকে সারাক্ষন। স্মৃতিরা কিলবিল করে মাথার মধ্যে। ঘোর ঘোর লাগে। দেশে গিয়ে দুই দফায় অন্ততঃ বিশ দিন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে ছিলাম। দুই তিনবার ডাক্তারের কাছে গিয়েছি। প্রতিবারই এমন হয়। এটা এমন কিছু না অবশ্য। রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকেছি, ধুলা বালি আর গাড়িৱ বিকট হৰ্ণ মেনে নিয়েছি। এগুলোৱ মধ্যেই আমি বেড়ে উঠেছি তাই এসব আমার জন্য স্বাভাবিক ঘটনা। দেশে অনেকটা সময় নিঃসঙ্গ কাটিয়েছি বটে আবার অনেক আনন্দের মুহূৰ্তও ছিল। বন্ধুদের সান্নিধ্য আমাকে সবসময় সতেজ রেখেছে। কয়েকজন অতি প্রিয় বন্ধু আমার নিঃসঙ্গ সময়কে ভরিয়ে তোলার সবটুকু চেষ্টাই করেছে। তাদের কথা কখনো ভুলব না।
জানি বিদেশের এই শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন।
সংসারের মায়া এতোটাই দূৰ্নিবার যে এ মায়া ছিন্ন করা করা অসম্ভব প্রায়। এমন না যে সন্তানরা কাছে থাকে, এমন না যে মন চাইলেই তাদের সাথে দুটো কথা বলতে পারি, এমন না যে যখন তখন অরিত্রি বলবে বাবা চা বানাও আগে যেমন বলত, এমন না যে অৰ্ক বলবে বাবা ঢাকার টোষ্ট দিয়ে চা খেতে ভাল লাগে, এমন না জেসমিন যখন তখন পাশে এসে বসে গল্পে মেতে উঠবে। ওসব এখন হয় কদাচিৎ। পুরো পরিবার একসাথে হওয়াটাই একটা লটারির মতো। সময় মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। একলা করে দেয়। এখানে এখনও শীতের প্রকোপ রয়ে গেছে। এটা একটা ডিপ্রেসিং ব্যাপার। আজকাল এমন হয়েছে কোন জীবনটা ভাল বুঝতে পারি না। প্রতিবার ছুটে যাই দেশে, আবার ফিরে আসি। দেশেও অনেক বিচ্ছ্ন্নিতা আছে। লোনলিনেস আছে। মানুষ অনেক একলা হয়ে গেছে। তারপরও আমার কাছে দেশের টানটা প্রবল। এই দেশকেও আমি ভালবাসি। এই দেশ অনেক দিয়েছে। এই বৈপরীত্য কিছুতেই ঘোচে না। এসব সত্ত্বেও দেশের মাটি আৱ বৃষ্টিৱ একটা আলাদা ঘ্রাণ আছে। ওটাই টানে, শুধু টানে..
টরন্টো ২৪ মাচ ২০২৩
মন্তব্য করুন: