• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

প্রকান্ড অরণ্যে একাকী আমি

জসিম মল্লিক

প্রকাশিত: ১৪:৪২, ৫ মে ২০২৩

ফন্ট সাইজ
প্রকান্ড অরণ্যে একাকী আমি

জসিম মল্লিক নিজের মায়ের সঙ্গে

নদীর জল স্থির, শান্ত। বহু দূর পর্যন্ত শান্ত মহা নীলাকাশ। দিগ্‌বলয়ে হস্তীযূথের মতো মেঘখন্ড চলে যাচ্ছে। ওপারে কাশবনে বাতাসের খেলা। শৈশবের অনেক স্মৃতি খেলা করে আজও। যখন মা ছিল, মায়ের সাথে যখন ঢাপরকাঠি যেতাম নৌকায় চড়ে। সেসব স্মৃতি সহজে ভোলা যায় না। অনেক এলেবেলে কথা, এলেবেলে শাসন. এলেবেলে আদরে ভরা ছিল আমার শৈশব। মনে পড়ে বিকেলবেলায় মা অল্প একটু সাজগোজ করতেন। উড়ুখুড়ো চুল টান করে খোঁপা বাঁধতেন, মুখ মেজে একটু ক্রিম দিতেন। পরিষ্কার একখানা শাড়ি পড়তেন। নিংসঙ্গ মা বিষন্ন মুখে রোদে দেওয়া জামা কাপড় তুলে এনে আলনা গুছোয়। তখন তাকে বড় অচেনা লাগে, যেন বাড়িতে কেউ বেড়াতে এসেছে।



অচেনা লাগে সব কিছুই। পূবের ভিটে ঘেঁষে ওঠা লাউডগা, বড় ঘরের বারান্দায় প্রকান্ড জাঁতাখানা, দক্ষিণের ঘরের বাইরে ঠেস দিয়ে রাখা সাইকেল। মনে হয়, এ সব জিনিস সঠিক জায়গায় নেই, কে যেন উলটেপালটে রেখে গেছে। হঠাৎ মনে হয়, দক্ষিণের ঘর বড় ঘরের জায়গায় চলে গেছে, বড় ঘর জায়গা পালটে বসেছে দক্ষিণের ঘরে। বাগানের পশ্চিম কোণে যে কলার ঝাড়, সেটা যেন ছিল উত্তরের দিকে। এমনি ওলট পালট লাগে সবকিছু। মনে হয় বিকেলের মায়াবী আলোয় যখন সব জায়গায় এক অপার্থিব হলুদ আলো এসে পড়ে, তখন বদল হয়ে যায় সব জায়গার চেহারা, সব চেনা চিন্হ মুছে যায়।


ছোটবেলায় আমার খুব জ্বর হত বলেই এমন মনে হতো। ভালই হতে চাইত না সে জ্বর। আমাদের ছিল টিনের দো চালা ঘর। সেখানে আমি জ্বর নিয়েই উঠে পরতাম মাঝে মাঝে। পাশেই লাগোয় পেয়ারা গাছ থেকে পেয়ারা পারতাম। চালে উঠলেই মনে হতো একটা আলাদা জগতে চলে এসেছি। কত দূর পৃথিবীকে দেখা যায় চাল থেকে। উঁচুতে ওঠার তীব্র আনন্দে আমি মুগ্ধ হয়ে চেয়ে দেখি। হাওয়া দেয়। লাউপাতার রোঁয়া পায়ে লাগে। এমন চমকে উঠি। এক ধরণের রোমাঞ্চকর শীতে শিউরে ওঠে গা। নীচের দিকে চেয়ে দেখি, এক অদ্ভুত অচেনা জগতে দাঁড়িয়ে আছি। লাউডগাৱ মাচায়- চারধারে অপার্থিব মায়াবী সবুজ। আমার বুক সমান উচু সব পাতা বাতাসে দোলে। আনন্দে দু’হাত তুলে নাচতে ইচ্ছে করে। চোখ বুজে আমি এক প্রকান্ড অরণ্যে একাকী গভীর চলার মধ্যে ডুবে গেছি।


কখন যে জ্বর আসবে তার কোন ঠিক ছিল না। জ্বর আসত ক্লাসঘরে, রাস্তায়, খেলার সময়ে। হু হু করে বয়ে আসত শীত। শরীর কাঁটা দিত, কাঁপতে থাকত। স্কুল থেকে ছুটি নিয়ে, কিংবা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ উলটো দিকে ঘুরে, কিংবা খেলার মাঝখানে খেলা থামিয়ে আমি বাড়ির দিকে দৌড়তে থাকতাম। গায়ে লেপ দিয়ে চেপে ধরত মা। কাঁপুনি থামত টই টুম্বুর জ্বর এসে গেলে। বাইরে তখন উত্তুরে হাওয়া মর্মর শব্দ তুলছে জলপাই গাছে। বারান্দায় কাঠের জাফরির তলায় ক্ষয়ে যাওয়া সিমেন্টের খাঁজে হেলে সাপ এসে ব্যাঙ ধরেছে। মর্মন্তুদ শেষ কঁ কঁ শব্দ করছে ব্যাঙটা। জ্বরের মধ্যে সেই ব্যাঙের ডাক, সাপ মারবার শব্দ, উত্তরের বাতাস- আমার আচ্ছন্নতার মধ্যে তীব্র ভয় হয়ে দেখা দিত। মনে হত, আমি বাঁচব না। তখন মা এসে আমার মাথাটা কোলে নিত।
 

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2