মিনহাজ আহমেদ প্রিন্সের মন্তব্য কলাম
‘আগামীর সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ ও তারেক রহমান’
১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর বাংলাদেশের রাজনীতির ভাগ্যাকাশে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র জন্মেছিলো। বাবা-মায়ের আদরের সেই ছোট্ট ‘পিনো’ আজ বাংলাদেশের কোটি মানুষের ভরসার নাম- তারেক রহমান। শুধু বাংলাদেশই নয়, বৈশ্বিক রাজনৈতিক অঙ্গনও অপেক্ষায় আছে তার গঠনমূলক নেতৃত্বপদ্ধতি, রাষ্ট্র-সংস্কারের ধারণা এবং বহুমাত্রিক উন্নয়ন ভিশন বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজ মাতৃভূমি থেকে যোজন যোজন দূরত্বে থেকেও দলীয় রাজনীতির পাশাপাশি এদেশের জন্য যে নতুন দিগন্তের ইঙ্গিত দিয়েছেন তা সত্যিই আলোচনার দাবিদার।
বাংলাদেশ বিনির্মানে তার যুগোপযোগী নেতৃত্ব, ভিশন, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও পরিকল্পনা এদেশের নতুন প্রজন্মের কাছেও এক সম্ভাবনাময় নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে অবিচল সংকল্প, রাষ্ট্র কাঠামো বিনির্মানে ৩১ দফার রূপরেখা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা তাকে বৈশ্বিক পরিমন্ডলে এক অনন্য আসন দিয়েছে।
বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের জনগণের রাজনৈতিক অধিকার সার্বিকভাবেই লঙ্ঘিত হয়েছে। তারেক রহমান এই রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে সর্বদা সরব থেকেছেন। তিনি বারবার বলেছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এর মাধ্যমে এদেশের জনগণের সত্যিকারের সিদ্ধান্ত প্রাধান্য পাবে।
বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত সভায় তিনি বলেছেন, ‘The BNP's main goal is now to restore the trend of multiparty democracy in the country to ensure the people's rights, mitigate their sufferings and safeguard the country's independence and sovereignty' (The Business Standard, 01 September, 2025)।
শুধু ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণই নয়, ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই তিনি রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের ৩১দফা পরিকল্পনা প্রদান করেন যেখানে জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ার পরিকল্পনা, বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের ব্যবস্থা গ্রহণ, শিক্ষা-অর্থনীতির ভঙ্গুর দশার উন্নয়ন পরিকল্পনা; এসকল কিছু প্রাধান্য পায়। জাতি-ধর্ম-ভাষার ঊর্ধ্বে এদেশের প্রতিটি মানুষকে তিনি বাংলাদেশি পরিচয়ে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে এক অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এখনও সংগ্রাম করে চলেছেন। ‘রেইনবো নেশন’ গড়ার মাধ্যমে এদেশের ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারিভাবে এক গঠনতান্ত্রিক কাঠামো প্রণয়নের পরিকল্পনা ব্যক্ত করেছেন (The Daily Star, 31st August, 2025)।
সার্বভৌমত্ব রক্ষার দাবিতে ‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ এই নীতিমালা গ্রহণের ব্যাপারে তিনি সর্বদা সচেষ্ট থেকেছেন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বিশেষত ভারতের সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ ও সার্বভৌমত্বের আলোচনা তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতার এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের মতে তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা অন্যতম একটি মূল স্তম্ভ।
তবে, তারেক রহমান এর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা শুধু বাক্যবাণেই আটকে থাকেনি; তার পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে স্পষ্ট একটি পথচিত্র রয়েছে, যা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পট পরিবর্তন করতে এক কার্যকরী দিকনির্দেশনা দিতে সক্ষম। এদেশের অর্থনৈতিক মুক্তি সাধনের লক্ষ্যে তিনি গার্মেন্টস সেক্টরের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে বহুমুখী অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। দেশে ই-কমার্স জায়ান্ট যেমন অ্যামাজন, আলিবাবা, ইবে ইত্যাদির জন্য একটি গ্লোবাল সাপ্লাই হাব তৈরি করার মাধ্যমে দেশে রপ্তানি বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও নতুন কর্মসংস্থান সুযোগ বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন (The Business Standard, 06 October, 2025)।
একইসাথে শিক্ষার্থীবান্ধব বাংলাদেশ গড়ার প্রতয়ে স্কুল পর্যায় থেকেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ভাষা শেখার কোর্স চালু, খেলাধুলা ও সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্র তৈরিসহ শিক্ষাখাতকে পুনরুজ্জীবিত করার পরিকল্পনা উল্লেখ করেছেন। বেকার ভাতা প্রদান, স্বাস্থ্যখাতে কর্মীদের মধ্যে নারী নিয়োগকে প্রাধান্য দেওয়া, ৩০-৩২ কোটি বৃক্ষ রোপণ এর মাধ্যমে বাংলাদেশকে সবুজায়নের করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন (বাংলা আউটলুক, ৪ আগস্ট, ২০২৫)।
এছাড়াও এদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য প্রয়োজনীয় আইনের শাসন বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনির্মানের রূপরেখা ও তিনি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘BNP's view is that no matter what language, tribe, religion or ideology, our first identity is that we are Bangladeshis. No matter where we live- mountains, plains, cities, ports or remote villages- every citizen of the state has equal rights.’ (The Daily Star, 31 August, 2025 ).
এক অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণে ও কোটি তারুণ্যের শক্তিকে দেশের শক্তিতে রূপান্তরে তারেক রহমানের রাজনৈতিক দর্শন সত্যিই যুগান্তকারী। যদিও বন্ধুর পথ এবং অনেকাংশেই দুর্গম, তবুও তার পরিকল্পনা এবং মন্ত্রণা আমাদের সকলের স্বপ্নের বাংলাদেশেরই এক সার্বিক চিত্র।
যথার্থরূপেই ‘তারেক রহমানের দেশে ফেরা যে কারণে জরুরি’ শীর্ষক প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেছিলেন, ‘..জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারার মতো নেতা এ মুহূর্তে বাংলাদেশে বেশি নেই। দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত খালেদা জিয়া অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে দেশে একতা ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় হাসপাতাল থেকেই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তার পরে এমন নেতা একজনই আছেন, যার আহ্বানে জাতি সাড়া দেবে, তিনি তারেক রহমান। শত ষড়যন্ত্র ও আক্রমণ মোকাবিলা করে তিনি বিএনপির মতো ব্যাপক ও বিস্তৃত রাজনৈতিক দলকে অক্ষত ও অটুট রেখেছেন সুদূর লন্ডন থেকে।
সত্যিই, বাংলাদেশ আজ এক তারুণ্যদীপ্ত নেতৃত্বের অপেক্ষায়; যিনি গণমানুষের প্রতিনিধি ও পিতা-মাতার যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবেই এদেশের অমিত সম্ভাবনাকে অপরাজেয় শক্তিতে রূপান্তর করে স্বনির্ভর ও নিরাপদ বাংলাদেশ বিনির্মাণে তার নিজস্ব স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হবেন বলে কোটি মানুষের বিশ্বাস।
লেখক: সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ
(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)
বিভি/পিএইচ




মন্তব্য করুন: