• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ১৩ মে ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

সব কিউট সুন্দর নয়!

কামরুল ইসলাম

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ১৪ জুন ২০২২

আপডেট: ২০:০০, ১৪ জুন ২০২২

ফন্ট সাইজ
সব কিউট সুন্দর নয়!

প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের মূল্য ১১১ টাকা! এটি এমন একটি সংখ্যা যা এয়ালাইন্স ব্যবসাকে থমকে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

কথিত আছে, ভাইস অ্যাডমিরাল নেলসন যুদ্ধে আহত হন। তার একটি পা, একটি হাত এবং একটি চোখ হারান। তার সেই হতভাগ্য পরিণতির কথা স্মরণ করেই ১-১-১-এর এই বিশেষ নামকরণ। এরই ধারাবাহিকতায় ২২২ বা ৩৩৩-কেও কেউ কেউ 'আনলাকি'র কাতারে ফেলে থাকেন। এ কারণেই '১১১' ক্রিকেটে একটি অপয়া স্কোর!

দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের এভিয়েশনে ক্রিকেটের অপয়া সংখ্যাটিকে বরণ করতে হয়েছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কিছুদিন আগে দেখতে পেয়েছিলাম বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন আরেকটি অপয়া সংখ্যা ‘১৩’ যা সর্বজন স্বীকৃত, সেই সংখ্যাটিও বেছে নিয়েছিল। গত এপ্রিলে একসঙ্গে প্রতি লিটার জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছিল ১৩ টাকা। যা ছিল অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি।

আপনারা জেনে থাকবেন, বিভিন্ন এয়ারলাইন্স এয়ারক্রাফটে আসন সংখ্যার যে সিরিয়াল থাকে সেখানে ১৩ সিরিয়ালকে ইচ্ছাকৃতভাবে পরিহার করে থাকে।  কথিত ১৩ সংখ্যাটি আনলাকি হিসেবে চিহ্নিত থাকায় বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ১৩ সিরিয়ালকে পরিহার করে থাকে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন জ্ঞাতসারে কিংবা অজ্ঞাতভাবেই অপয়া সংখ্যাগুলোকেই বাংলাদেশ এভিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত করে দিচ্ছে, যা কাম্য হতে পারে না।

গত চার মাসে জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৩১ টাকা প্রতি লিটারে আর কোভিডকালসহ গত ১৯ মাসে জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে প্রতি লিটারে ৬৫ টাকা। যা এভিয়েশন ব্যবসাকে দূর্বিসহ করে তুলেছে। এভিয়েশন খাতে বিনিয়োগ বাংলাদেশে সব সময় অতিমাত্রায় ঝুঁকি বহন করেছে। এজন্য গত ২৫-২৬ বছরে বেসরকারি বিমান পরিবহনের সময়কালে মাত্র ১০ থেকে ১১টি বিমানসংস্থা বাংলাদেশ এভিয়েশনে বিনিয়োগ করে। তার মধ্যে ৮ থেকে ৯টি বিমান সংস্থা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এর  পিছনে অনেক কারণের মধ্যে জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আছে।

কোভিডকালে পৃথিবীজুড়ে সকল এয়ারলাইন্স চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রত্যেকটি দেশের সরকার কিংবা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এভিয়েশন ও ট্যুরিজমকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এয়ারলাইন্স ও ট্যুরিজম কোম্পানির পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। নানা ধরনের প্রনোদনা, ভর্তুকি, চার্জ মুওকুফসহ নানাবিধ কার্যক্রম দেখেছি। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে উল্টোচিত্র চোখে পড়েছে। করোনা মহামারির সময়ে এয়ারলাইন্সগুলোর পক্ষ থেকে মাত্রাতিরিক্ত এ্যারোনটিক্যাল ও নন-এ্যরোনটিক্যাল চার্জ কমানোর অনুরোধ উপেক্ষা করা হয়েছে। দফায় দফায় জেট ফুয়েলের মূল্য বৃদ্ধি করে, এয়ারপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফি, সিকিউরিটি চার্জ যুক্ত করে এভিয়েশন খাতকেই হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। 

ব্যাকলক চার্জগুলোর সারচার্জ বছরে ৭২ শতাংশ। যা সহজেই অনুমেয় এয়ারলাইন্সগুলোর ব্যবসাকে অনগ্রসর হতে ভূমিকা রাখছে। যে সব এয়ারলাইন্স ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে, তাদের একটি অন্যতম দাবি ছিল সারচার্জ কমানোর। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, দাবিগুলো চিরন্তন সত্যের মতো বাংলাদেশ এভিয়েশনে রয়ে যাচ্ছে। আর এয়ারলাইন্সগুলো ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছে না। 

এই এভিয়েশনের সঙ্গে ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি, হোটেল ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে লাখো কর্মচারী-কর্মকর্তা জড়িত। জড়িত তাদের পরিবার। প্রো-একটিভ হয়ে এসব বাস্তব সমস্যা সমাধানে কেউ নেতৃত্ব নেওয়ার দাবি এখন সময়ের প্রয়োজনে উল্লেখ করতে হচ্ছে। 

বাংলাদেশের এক বৃহৎ জনগোষ্টী যারা কাজের প্রয়োজনে, শিক্ষার প্রয়োজনে, ভ্রমন কিংবা চিকিৎসার প্রয়োজনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আকাশ পথে যাতায়াত করছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ারের প্রায় ৭০ ভাগ চলে যাচ্ছে বিদেশি এয়ারলাইন্সের কাছে। জেট ফুয়েলসহ অন্য চার্জগুলো এযারলাইন্সগুলোর অনুকূলে না থাকলে এভিয়েশন মার্কেট শেয়ার পুরোটাই চলে যাবে বিদেশি এয়ারলাইন্সের কাছে। তখন আমাদের জিডিপির অংশীদারিত্ব কমে যাবে। যা দেশের আয়ের উপর প্রভাব ফেলবে। দেশের ট্যুরিজম চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বেকার সমস্যার সৃষ্টি হবে।

যে কোনো অপয়া সংখ্যা কিংবা অপয়া সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে এভিয়েশন সেক্টরকে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে সুস্থ প্রতিযোগিতা করার পরিবেশ তৈরি করে দিন। সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ পেলে এভিয়েশন সেক্টর বাংলাদেশে উন্নয়নের সোপানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

লেখক মো. কামরুল ইসলাম ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এভিয়েশন সেক্টরের উন্নয়ন ও সমস্যা নিয়ে তিনি নিয়মিত লেখালেখি করে থাকেন।

বিভি/এনএ

মন্তব্য করুন: