কিষাণীর মেয়ে ধর্ষিত হলে রাষ্ট্রের যেন কোন দায় নেই!

মেয়েটি গরিব কিষাণ-কিষাণীর চোখের মনি! গতরাতে টাঙ্গাইলে বাসে ডাকাতি এবং ধর্ষণের ঘটনার শিকার তিনি।
মেয়েটি তার বাবা-মায়ের কষ্ট দূর করার জন্য চোখে স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় আসছিলেন গার্মেন্টসে চাকরি নেবেন বলে!
কত বড় অমানুষের দেশ হয়ে গেছে এই বাংলা! কেবল টাঙ্গাইলের এই মেয়েটির জীবনে ঘটে যাওয়া গত রাতের ঘটনাটি দেখলেই বুঝতে পারা যায়!
মেয়েটিকে যারা ধর্ষণ করেছেন তারাও আহামরি ধনি নয়-তারা ডাকাত। ডাকাতি করে খায়-নিম্ন শ্রেণির লোক। তাদের কারও ঘরে যদি মেয়ে থেকে থাকে সেও একদিন বড় হবে। তারও পরিণতি হবে এই মেয়েটির মতো। বেশিরভাগ গরিব ঘরের মেয়েদের যা হয়! সেও হয়তো একদিন গার্মেন্টে কাজ করার জন্য ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হবে। এই বর্বর ডাকাতগুলো কি একবারও ভেবেছে যে, তার মেয়েটিও এমন পরিণতির শিকার হতে পারে!
এই ডাকাত দলের কেউ কি পারবে কোনো ধনির দুলালীর, যারা ব্যক্তিগত গাড়িতে নিরাপদে এসির হাওয়া খেয়ে চলাফেরা করেন তাদের কেশাগ্রও স্পর্শ করতে? ধর্ষণ করা তো দূরে থাক!
তারা একটি গরিবের মেয়ের সর্বনাশ করতে গিয়ে একবারও ভাবে এ কথা? আসলে ভাববে কিভাবে-ভাবার মতো সামান্যতম জ্ঞানও তো তাদের নেই।
তাহলে এমন মানুষ কি আমাদের সমাজে আদৌ দরকার?
এগুলো কি আসলে মানুষ? না কি মানুষ রূপে এগুলো কেবল জন্তু। এসব জন্তুকে সমাজ থেকে দূর করা খুব দরকার। মস্তিস্কবিহীন, মানবতাবিবর্জিত, দেহসর্বস্ব মানবরূপী ভয়ংকর প্রাণী কি আদৌ দরকার?
রাষ্ট্রব্যবস্থাকে বলবো, গরিবের সম্মান বজায় রাখতে এজন্য বেশি কাজ করা দরকার রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য থাকা সর্বোচ আইন যা সংবিধান নামে পরিচিত। পবিত্র গ্রন্থটির অনেক অনুচ্ছেদে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য রাষ্ট্রকে তথা সরকারকে কাজ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সব বাদ দিয়ে কেবল ১৪ নং অনুচ্ছেদটির কথা যদি বলি, সেখানে বলা হয়েছে: ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে মেহনতী মানুষকে-কৃষক ও শ্রমিককে-এবং জনগণের অনগ্রসর অংশসমূহকে সকল প্রকার শোষণ হইতে মুক্তি দান করা৷’
গরিবের প্রতিনিয়ত শোষিত হচ্ছে! এই যে বাসটি, দূর পাল্লার বাস। সেটি কেন লোকাল যাত্রী নিতে গভীর রাতে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়ালো? অহরহ দাঁড়াচ্ছে। কারণ, এই অনিয়মই এখন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। যাত্রীদের জিম্মি করে এমনকি দূরপাল্লার বাসের স্টাফরা এভাবে লোকাল যাত্রী তোলে। যাত্রীরা কিছু বললে যাত্রীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়-তারা গরিব যে!
অথচ এই লোকাল যাত্রী যদি না তোলা হতো এই দুর্ঘটনাটি ঘটতো না। ডাকাতি, ধর্ষণ কিছুই হতো না। কাজেই এই দুর্ঘটনার জন্য কেবল ডাকাতদল নয়, বাসের স্টাফ, কর্তৃপক্ষ সবাই দায়ী। রাষ্ট্রব্যবস্থা কি সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিবে?
এই গরিব মানুষেরা কি রাষ্ট্রের অগ্রগতিতে অবদান রাখেন না? হযরত আবু বকর (রা.)-এর মতো তারা তো সবটুকু দেন রাষ্ট্রকে। এই যে মেয়েটি গ্রাম থেকে শহরে আসছিলেন কাজ করতে, তার টাকা কি সরকার নেবে না? নিতো না? তার প্রতি, তার নিরাপত্তা নিয়ে কি কোনো দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেই? তার নিরাপত্তা কেন লঙ্ঘিত হলো তবে? কে দেবে জবাব! সবাই তো ব্যস্ত রাজনীতি নিয়ে, ক্ষমতা নিয়ে! কোথাকার কোন কিষাণ-কিষাণীর মেয়ে ধর্ষণের শিকার হলো কি হলো না তাতে কি যায় আসে!
(ছবিতে আটক ব্যক্তি বাস ডাকাতদের সদস্য রাজা মিয়া-সে ডাকাতি ও ধর্ষণের সময় গাড়ি চালিয়ে সহায়তা করেছিল।)
লেখক : জ্যেষ্ঠ সহ সম্পাদক, বাংলাভিশন।
(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)
মন্তব্য করুন: