• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

Drama: Jamai Bou Chor
Drama: Jamai Bou Chor

দায়িত্ববোধের কারাগারে বন্দি পুরুষ, তবুও...

ইমতিয়াজ মেহেদী হাসান 

প্রকাশিত: ১৮:০৩, ২৪ জুলাই ২০২৫

ফন্ট সাইজ
দায়িত্ববোধের কারাগারে বন্দি পুরুষ, তবুও...

প্রতীকী ছবি

পুরুষ কাঁদে না, পুরুষের কাঁদতে নেই। যত যা কিছু হয়ে যাক, ভেতরে ঝড়-বৃষ্টি-সাইক্লোন-জ্বলোচ্ছ্বাস বয়ে গেলেও মুচকি হেসে বলতে হয়, ভালো আছি, দিব্যি আছি। না খেয়েও বলতে হয়, ভরপেট খেয়েছি। এই দেখো ঢেঁকুর তুলছি। আসলে কি জানেন তো, পুরুষ এমনই। তাদের অভিযোগ করার কোনো জায়গা নেই। কখনও ভাই, কখনও বাবা, কখনও স্বামী আবার কখনও বা বাড়ির কর্তা হয়ে নিজেই নিজের আমিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। 

অপ্রিয় হলেও এটাই সত্যি, পুরুষ নিজের জন্য বাঁচে না। বাঁচে পরিবার ও প্রিয়জনদের জন্য। তাইতো খাঁ খাঁ রোদ্দুরে দু ক্রোশ পথ রিকশায় না গিয়ে সেই টাকাটা আলাদা করে রাখে, ভাবে এর সঙ্গে আরও কিছু টাকা যোগ করে ঘরে ফেরার সময় দু আঁটি লাল শাক, ৫০০ গ্রাম আলু, ১ হালি ডিম ও প্রয়োজনীয় সদাই নিয়ে ফিরবে। অনেকের আবার চা-সিগারেট-পানের নেশা থাকে, তারাও ভাবে- হাত খরচটা যদি কোনোভাবে কমানো যেতো, তাহলে দুধের শিশুটার এক কৌটা দুধ কেনা যেতো। শুধুমাত্র পারিবারিক দায়িত্ববোধের কারণে অনেক পুরুষকে তাদের ভালোবাসার মানুষকে ছেড়ে আসতে হয়েছে। বুকে পাথর চাপা দিয়ে বলতে হয়েছে, আমি ওকে মনেই রাখিনি, ভোলার প্রশ্ন আসে কোত্থেকে? পরে ঠিকই আবার  দেখা গেছে, তারা চোখ মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে। 

এরপরও বলবেন পুরুষ খারাপ?

যদি খারাপই হতো, তাহলে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে মেধাবী ও সম্ভাবনাময় ছেলেটা আজ মা-ভাই-পরিবারের মুখে দু মুঠো ভাত তুলে দেওয়ার জন্য নিজে নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও সারাক্ষণ অফিসের বসের গালমন্দ শুনতো না। ঠিকই চাকরির মুখে লাথি মেরে চলে আসতো।

খুব ভালো গান-কবিতা লেখা কিংবা আবৃত্তি-বিতর্কের এমন অনেক ছেলেও মা-বাবার চিকিৎসা খরচ জোগানোর তাগিদে নিজেকেই বিসর্জন দিয়েছে। কোনোমতে কিছু করে খাচ্ছে। কিন্তু এমন কি হওয়ার কথা ছিল?

আবার এমনও দেখা যায়, এলাকার বা ক্যাম্পাসের সেই তুখোড় ছাত্রনেতা এখন রাজনীতি থেকে ১০০ হাত দূরে। কেন জানেন? ওই একটাই শব্দ, দায়িত্ববোধ।

অথচ দায়িত্ব নামের পিছুটান না থাকলে তারা হয়তো দেশকে অনেকাংশেই ভালো কিছু দিতে পারতো।

অনেক পুরুষকে অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। কিন্তু কেন সে এই পথ বেছে নিল, তা জানতে চাওয়া হয় না। উল্টো কথিত এই সিভিল সমাজ আঙুল তুলে বলে, তুমি খারাপ।

আচ্ছা মানলাম সে খারাপ। কিন্তু যখন সে দিনের পর দিন না খেয়ে ছিল, ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল, বোনের বিয়ে দিতে পারছিল না, ঘরের বৌয়ের কথা শুনছিল, তখন আপনারা কোথায় ছিলেন? নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন?

কাউকে বোঝার চেয়ে ভুল বোঝা খুব সহজ, এটা আবারও প্রমাণ হলো। আরেকটা কথা, নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে কখনও আরেকজনের পরিস্থিতি বোঝা যায় না। এটাই বাস্তব, ধ্রুব সত্য।

পৃথিবীর সব পুরুষকে স্যালুট, টুপি খোলা শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তবে এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ধর্ষকও কিন্তু পুরুষ, সভা-সমাবেশে নারী অধিকার নিয়ে গলা ফাটিয়ে বক্তব্য দিয়ে ঘরে ফিরে বউ পেটানো মানুষটাও পুরুষ।

এদের প্রতি ঘেন্না, একরাশ থুথু। হাতের পাঁচ আঙুল যেমন পাঁচ রকম, তেমনি এরাও।  তাই সবাইকে এক দাঁড়িপাল্লায় মাপার আগে ব্রেকে পা দেওয়ার অনুরোধ রইল। নইলে কিন্তু সেই সংলাপ বেজেই যাবে, মুরুব্বি উহু, উহু...।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী ও গীতিকার

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার বাংলাভিশন নিবে না।)

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: