• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

বিশ্ব সর্বহারার মহান নেতা কমরেড লেনিন

মনজুরুল হক

প্রকাশিত: ১৫:০০, ২২ জানুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ১৫:০১, ২২ জানুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
বিশ্ব সর্বহারার মহান নেতা কমরেড লেনিন

সংগৃহীত ছবি

বিশ্ব সর্বহারা শ্রেণির মহান নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন-এর মৃত্যু বার্ষিকী ২১ জানুয়ারি। মাত্র ৫৩টি বছর স্বশরীরে আমাদের সাথে ছিলেন তিনি। এর পর থেকে চেতনায় আছেন এবং থাকবেনও। আজ বিশ্বের সকল সর্বহারার জন্য বেদনার্ত দিন। সেই সঙ্গে নতুন করে শপথ নেবারও দিন।

 

 রাশিয়ার বুকে জার স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে বলশেভিক পার্টি গড়ে তোলা, শোষিত শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবকে সফল করে তোলবার জন্য সংগ্রাম, ট্রটস্কিবাদের বিরুদ্ধে তীব্র আদর্শগত সংগ্রাম, বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিতে সোভিয়েত সমাজতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখবার সংগ্রাম করেছেন কমরেড লেনিন। তার জীবনাবসানের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক অগ্রগতিকে অব্যাহত রাখবার সংগ্রাম এবং সর্বোপরি হিংস্র উন্মত্ত ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মানবজাতিকে রক্ষার সংগ্রামে ব্যাপৃত ছিল কমরেড স্তালিনের সমগ্র জীবন। শুধু তাই নয়, সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন ও জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে অটুট রাখতে তিনি পুঁজিবাদী ও ঔপনিবেশিক দেশগুলোতে কমিউনিস্ট পার্টি গঠনে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনে এক অনবদ্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

কমরেড স্তালিনই সর্বপ্রথম কমরেড লেনিনের শিক্ষা ও তত্ত্বগুলোকে সূত্রবদ্ধ করে সৃষ্টি করেন — ‘লেনিনবাদ’

 কমরেড স্তালিনই সর্বপ্রথম কমরেড লেনিনের শিক্ষা ও তত্ত্বগুলোকে সূত্রবদ্ধ করে সৃষ্টি করেন — ‘লেনিনবাদ’। এর সংজ্ঞা নির্ধারিত করে তিনি বলেছিলেন : লেনিনবাদ হলো সাম্রাজ্যবাদ ও শ্রমিক-বিপ্লবের যুগের মার্কসবাদ। আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, লেনিনবাদ হলো সাধারণভাবে শ্রমিক-বিপ্লবের মতবাদ ও রণকৌশল এবং বিশেষভাবে এ হলো শ্রমিকশ্রেণীর মতবাদ ও রণকৌশল।

 লেনিনবাদকে মার্কসবাদের আরও বিকশিত রূপ হিসেবে উল্লেখ করে তার অসামান্য বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন কমরেড স্তালিন। সর্বহারারা যখন বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, শ্রমিক-বিপ্লব যখন কার্যক্ষেত্রে আশু ও অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠেনি সেই প্রাক্-বিপ্লব যুগে মার্কস আর এঙ্গেলস তাঁদের কার্যকলাপ চালাতেন। আর মার্কস-এঙ্গেলসের উত্তরসূরি কমরেড লেনিন তাঁর কাজ চালিয়েছেন বিকশিত সাম্রাজ্যবাদের যুগে, শ্রমিক বিপ্লবের বিকাশের যুগে — যখন শ্রমিক বিপ্লব একটি দেশে ইতোমধ্যেই জয়যুক্ত হয়েছে, বুর্জোয়া গণতন্ত্রকে চূর্ণ করে, শ্রমিকশ্রেণীর গণতন্ত্রের, সোভিয়েততন্ত্রের যুগের সূত্রপাত করেছে।

 মাওবাদ নিয়ে অনেকের বিরূপ মতামত থাকলেও মার্কসবাদ-লেনিনবাদ নিয়ে কারো 'দ্বিমত' নেই। লেনিনকে নিয়ে কমিউনিস্ট, বামপন্থী, প্রগতিশীলদের উপলব্ধি যা-ই থাকুক সাধারণ মানুষ এবং মতলববাজ মিডিয়ার ভূমিকা তীব্র বিরোধীতাকারী। 

বাংলাদেশের জাতীয় প্রকাশনা স্তরে লেনিনকে নিয়ে কোনো গ্রন্থ নেই। বাংলা একাডেমিরও নেই! এই শূণ্যতা পুরণের জন্য কয়েকটি প্রকাশনী লেনিনের রচনাবলী ভেঙ্গে ছোট ছোট পুস্তিকা প্রকাশ করেছে। দামও বেশি নয়। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে এইসব পুস্তিকায় লেনিনকে অসমাপ্ত খন্ডিত বিকৃত করা হয়েছে! লেনিনের বলশেভিক পার্টি যে তীব্র সশস্ত্র দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ করেই শ্রমিক শ্রেণির নেতৃত্বে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছে এই সাধারণ তথ্যটিও চেপে যাওয়া হয়েছে! এই সব পুস্তিকা পড়লে মনে হবে লেনিন এক 'সান্তাক্লস'! এই কাজ শুধু ভুল নয় রীতিমত অপরাধ। 

 এরমধ্যেও আমরা সেই লেনিনকে স্মরণ করব, যে লেনিন তীব্র বল প্রয়োগের মাধ্যমে রাশিয়ার জনগণকে সামন্ত নিগড় থেকে মুক্ত করেছিলেন। বাংলাদেশে কার্যত এখন আর কোনো কমিউনিস্ট পার্টি নেই। যেসব পার্টি কমিউনিস্ট নাম নিয়ে আছে তারা নির্বাচনপন্থী বুর্জোয়া পার্টিগুলোর ‘প্রগতিশীল’ ফ্যাকশন। তাই মহান শিক্ষক কমরেড লেনিনকে নিয়ে এদেশে যা কিছু আয়োজন তার পেছনে আছে প্রচার ফ্যাশন। কৃষিভিত্তিক দেশে সর্বহারা শ্রেণির নেতা শ্রমিক শ্রেণির বিপ্লব হবে না কৃষি বিপ্লব হবে সেই প্রশ্নের উত্তর মাও সেতুঙ দিয়ে গেছেন। প্রয়োগ করে গত ৫১ বছর ধরে সমাধান দিয়ে চলেছেন কমরেড চারু মজুমদারের কৃষক বিপ্লবের লাইন। সুতরাং নতুন করে তত্ত্ব নির্মানের কিছু নেই। এখানে বিপ্লব হয় না মানে কেউ বিপ্লব করার জন্য প্রস্তুন নন। সোজা কথায়-এরা বিপ্লববিরোধী। 

 এরকম বৈরী পরিবেশে বিশ্ব সর্বহারার মহান নেতা কমরেড লেনিনকে স্মরণ করাটাও আজ 'শত্রু বেয়োনেট রুখে দাঁড়ানোর মত! আমরা অন্তত সে কাজটি করে যেতে চাই।
…………………..........

২১ জানুয়ারী, ২০২৩

(বাংলাভিশনের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, বাংলাভিশন কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার  বাংলাভিশন নিবে না।)

 

মন্তব্য করুন: