জেল জরিমানা করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না: তপন কান্তি ঘোষ

বিজয়ী দলের বিতার্কিকদের ট্রফি প্রদান করছেন তপন কান্তি ঘোষ, এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান ও হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ
মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে পণ্য মূল্য নজরদারী করা যায়, কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। শুধু জেল জরিমানা ও পুলিশ দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কোনো সমাধান নয়। ব্যবসায়ীসহ সকলের দায়িত্বশীলতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করা গেলে দ্রব্যমূল্য সহনীয় করা সম্ভব। অসাধু কারবারি ও মধ্যস্বত্তভোগিরা অতিলোভী হয়ে উঠলেই বাজার ব্যবস্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্যবসায়ীরা লাভ করলে আমরা দেখি কিন্তু লোকসান করলে তা দেখি না। সরকার ব্যবসায়িদের বিরুদ্ধে নয়। তবে ব্যবসায়িদেরকেও অতিলোভ পরিহার করে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে।
শুক্রবার (২৫ আগস্ট) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) “ভোক্তা-অধিকার নিশ্চিতকরণে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এসব কথা বলেন। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র যৌথভাবে প্রতিযোগিতাটির আয়োজন করে। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
এ সময় তপন কান্তি ঘোষ বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে ডিমের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা সম্ভব না হলে অচিরেই ডিম আমদানির চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে। পরিবহন ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি বন্ধ করাসহ সাপ্লাই চেইন নিশ্চিত করতে পারলে ভোক্তাদের ন্যায্যমূল্যে পণ্য ক্রয় সহজ হবে। তবে এক্ষেত্রে ভ্যাট-ট্যাক্স সহনীয় রেখে উন্মুক্ত আমদানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। কারণ আমাদের ভোজ্যতেল ৯০ শতাংশ, চিনি ৯৯ শতাংশসহ আদা, রসুন, পেঁয়াজ, ডাল ইত্যাদি আমদানি নির্ভর। উৎপাদক পর্যায়ে সমবায় শক্তি জোরদার করা গেলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে একই সাথে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবে না। তখন তারা নিজেরাই নিজেদের উৎপাদিত পণ্য ভোক্তা পর্যায়ে সরবরাহ করতে সমর্থ হবে। আমাদের আয় বাড়ার সাথে সাথে চাহিদা বেড়েছে, ভোগ আকাঙ্খাও বেড়েছে, যার প্রভাব পড়ছে বাজারের উপর। তাই আমাদের কিছুটা সহ্য করে নিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বিএসটিআই, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ভোক্তা-অধিকার আদায়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম সমন্বিতভাবে আরো জোরদার করা সম্ভব হলে জনগণ এর সুফল আরো বেশি পাবে। তবে বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সরকারের রাজনৈতিক দুর্বলতা রয়েছে। যার কারণে চিনি, ভোজ্যতেল, ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম প্রায়শই অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। সম্প্রতি চিনি ও ভোজ্য তেলের বাজার অস্থিতিশীল করায় সম্পৃক্ততার অভিযোগের প্রতিবেদন দেওয়ার পরও অভিযুক্ত কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কেনো অগ্রগতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এতেই বুঝা যায় বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বাজার ব্যবস্থাপণা জিম্মি হয়ে যাচ্ছে। যার পরিত্রাণের পথ খুঁজতে হবে।
এছাড়াও দামের উত্থান-পতনের পেছনে সাপ্লাই চেইনের দুর্বলতাও বড় একটা কারণ। পণ্যের উৎপাদন অর্থাৎ কৃষক পর্যায় থেকে শুরু করে আড়তদার, ফড়িয়া, পাইকার, খুচরা পর্যায় হয়ে ভোক্তার হাত পর্যন্ত পৌঁছানোর পুরো নেটওয়ার্কে কোনো সঠিক ব্যবস্থাপনার মধ্যে নেই। এসব প্রতিরোধে আরো শক্তিশালী বাজার মনিটরিং টিম গঠন করতে হবে। যে মনিটরিং টিম কোনো প্রাভাবশালী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রভাবে মাথা নত করবে না। তারা শুধু নিজের নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। তবে এখন পর্যন্ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণসহ বিভিন্ন সংস্থা বাজার নিয়ন্ত্রণে যে অভিযান চালিয়েছে তা যথেষ্ট প্রসংশনীয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে অভিযান পরিচালনায় নেতৃত্ব প্রদানকারী কোনো কর্মকর্তা যাতে প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তির আক্রোশের শিকার না হয়। সরকার তথা জনগণের হয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনোভাবেই যাতে কর্মজীবনে প্রতিহিংসার শিকার না হয়। যদি সম্ভব হয় আমি সরকারের কাছে সুপারিশ করছি ভোক্তা অধিকার স্বার্থে অভিযান পরিচালনাকারী সৎ কর্মকর্তা অথবা কর্মীকে সরকারিভাবে পুরস্কৃত করা। যাতে অভিযান পরিচালনাকারীরা তাদের অভিযান পরিচালনায় আরো বেশি উৎসাহ পায়।
“ভোক্তা-অধিকার নিশ্চিতকরণে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার সুফল পাওয়া যাচ্ছে” শীর্ষক ছায়া সংসদে বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজকে পারাজিত করে তেজগাঁও কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করে। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, প্রফেশনাল একাউন্টেন্ট আবুল বশির খান, সাংবাদিক সায়েদুল ইসলাম, সাংবাদিক অনিমেষ কর ও যুগ্ম কর কমিশনার মেহেদী হাসান তামিম। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
বিভি/রিসি
মন্তব্য করুন: