• NEWS PORTAL

বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

বস্তি এলাকার শিশুদের খেলা-বিনোদন পরিসর তৈরিতে উদ্যোগ প্রয়োজন

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ৩১ জানুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
বস্তি এলাকার শিশুদের খেলা-বিনোদন পরিসর তৈরিতে উদ্যোগ প্রয়োজন

ঢাকাসহ বাংলাদেশের নগর এলাকাসমূহে শিশু-কিশোরদের বিনোদন সুবিধা ও খেলার মাঠের তীব্র সংকট আছে। তথাপি নগর এলাকার বস্তিসহ অনানুষ্ঠানিক বসতির শিশুদের জন্য এ ধরনের শিশুবান্ধব স্থানের সংকট সবচেয়ে তীব্র। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন বস্তি এলাকায় শিশুদের বেড়ে উঠবার জন্য অপরিহার্য খেলার মাঠ, বিনোদন সুবিধাদির সুযোগ না থাকবার কারণে শিশু-কিশোরদের অনেকেই বিভিন্ন অপরাধের সাথেও জড়িত হয়ে পড়েছে। সরকারি উদ্যোগের সাথে উন্নয়ন সহযোগীদের কার্যকর সম্পৃক্ততা থাকলে বস্তি এলাকায় স্বল্প পরিসরেই ছোট আকারের হলেও শিশুবান্ধব স্থান তৈরি করবার মাধ্যমে এই সকল শিশুদের বিনোদনের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব। 

তবে এক্ষেত্রে এ ধরনের সুযোগ সুবিধাদির পরিকল্পনার ক্ষেত্রে স্বল্পবিত্ত মানুষের চাহিদাকে আমলে নিয়ে অন্তর্ভূক্তিমূলক ডিজাইন, টেকসই পরিচালন ও সংরক্ষণ কৌশল গ্রহণ এবং স্থানীয় কমিউনিটি ও কাউন্সিলকে সম্পৃক্ত করে স্থানটির কার্যকর ও টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব। উপরোক্ত মতামতগুলো উঠে এসেছে মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি), সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ, ভূমিজো ও সিপ আয়োজিত “নগরের অনানুষ্ঠানিক বসতির প্রান্তিক শিশুদের জন্য শিশুবান্ধব বিনোদন স্থানের পরিকল্পনা” শীর্ষক “অংশীজন পরিকল্পনা সংলাপ” এ। 

সংলাপে অংশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঢাকা শহরসহ বাংলাদেশের নগর এলাকার বস্তিসহ অনানুষ্ঠানিক বসতিতে স্বল্প ব্যয়েই শিশুদের উপযোগী ছোট আকারের হলেও শিশুবান্ধব খেলা ও বিনোদনের পরিসর তৈরি করা সম্ভব থাকা সত্বেওশহরে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত এলাকায় খেলার মাঠের জন্য কিছু কিছু পরিকল্পনা নেয়া হলে ও বস্তি এলাকার শিশুরা এ ধরনের উদ্যোগ ও প্রয়াসের বাইরে থেকে যাচ্ছে। স্থানীয় সরকারসহ সিটি কর্পোরেশন, ওয়ার্ড কাউন্সিল এগিয়ে আসলে বিভিন্ন নগর সংস্থাসমূহকে সহযোগিতা দিতে কমিউনিটি ভিত্তিক সংগঠনসহ উন্নয়ন সহযোগীদের অনেকেই আগ্রহী। একই সাথে বস্তি ও অনানুষ্ঠানিক এলাকার জনগণ ও এ ধরনের উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত থাকতে নিজেদের দাবী ও আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করে প্রায়শঃই। ফলে এ ধরনের শিশুবান্ধব পরিসর করবার পরিকল্পনা ও উদ্যোগ এখনই নিতে হবে, না হলে টেকসই নগর ও জনবসতি গড়বার লক্ষ্যমাত্রায় আমরা পৌঁছতে পারব না। 

সংলাপে অংশ নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক  অধ্যাপক আকতার মাহমুদ বলেন, ঢাকা শহরের অনেক গণপরিসর ও বিনোদন সুবিধাদির উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পর আগের ব্যবহারকারীরা কেন আর এই সকল খেলার মাঠ, পার্ক অবাধে ব্যবহার করতে পারছে না সে ব্যাপারে এ ধরনের প্রকল্পের নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সাথে সম্পৃক্ত পেশাজীবিদের দায় দায়িত্ব নিতে হবে। 

আইপিডি’র নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকা শহরের সকলবস্তি এলাকায় ন্যূনতম একটি করে হলেও শিশুবান্ধব পরিসর তৈরি করবার জন্য একট পরিকল্পনা এখনই প্রণয়ন করা দরকার। সরকারের আন্তরিক আগ্রহ থাকলে স্বল্প ব্যয়েই প্রকৃতি ভিত্তিক ডিজাইনকে প্রাধান্য দিয়ে এই ধরনের টেকসই ও কার্যকর পরিসই তৈরি করবার মাধ্যমে প্রান্তিক শিশুদের বিনোদন ও স্বাভাবিক বিকাশ নিশ্চিত করা সম্ভব। 

সংলাপে সেভ দ্য চিলড্রেন ও আইপিডি’র উদ্যোগে মিরপুর এর বাউনিয়াবাঁধ এলাকায় শিশুদের জন্য ব্যবহৃত খেলার মাঠের সম্ভাব্য নকশা উপস্থাপন করেন ভূমিজো’র প্রধান নির্বাহী স্থপতি ফারহানা রশিদ। সংলাপে অংশ নিয়ে ইউএনডিপি’র টাউন ম্যানেজার মারুফ হোসেন বলেন, শিশুদের খেলার মাঠকে দেয়াল দিয়ে অনেক ক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার সংকুচিত করা হচ্ছে। এ ধরনের ডিজাইন গণপরিসরের সার্বজনীনতা অনেকাংশেই নষ্ট করে দেয়। 

সেভ দ্য চিলড্রেন এর পরিচালক (হিউম্যানিটারিয়ান) মো. মোশ্তাক হোসেন বলেন, বস্তি এলাকায় পরিবেশ বান্ধব ও অন্তর্ভূক্তিমূলক অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিশুবান্ধব পরিসর ডিজাইন করতে পারলেই তা টেকসই করা সম্ভব। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাশেম বলেন, ঢাকা শহরে গণপরিসর তৈরিতে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের আন্তরিক আগ্রহ রয়েছে নগরের প্রান্তিক শিশুদের জন্য বিনোদন সুবিধা ও পরিসর তৈরি করবার। স্থানীয় কাউন্সিল ও সহযোগী সংগঠনসমূহের অংশগ্রহণে স্বল্পবিত্ত কমিউনিটিতে কার্যকর উপায়ে শিশুবান্ধব পরিসর তৈরি করা সম্ভব। 

অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আর ও বক্তব্য রাখেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের গাউস পিয়ারী, সিপ এর আফসানা আসাদ, সেভ দ্য চিলড্রেন এর পরিচালক রিফাত বিন সাত্তার, ব্র্যাক-ইউডিপি’র আবু সায়েম আরিফ, এসসিআই এর কামরুন নাহার আহমেদ, ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশে এর আশিষ দাস গুপ্ত প্রমুখ। 

বিভি/এসএমএফ/এজেড

মন্তব্য করুন: