চলন্ত ট্রেনের বগি হয়ে গেল হাসপাতালের কক্ষ, জন্ম নিল ফুটফুটে শিশু

ছবি: সংগৃহীত
দর্শনা থেকে রাজশাহী যাওয়ার পথে হঠাৎই প্রসববেদনা ওঠে স্বর্ণা আক্তারের (২০)। দিশাহারা হয়ে পড়েন সঙ্গে থাকা তার স্বজনেরা। বিষয়টি জানতে পেরে রেলের কর্মীরা মাইকিং করতে থাকেন চিকিৎসকের খোঁজে। মাইকিং শুনে এগিয়ে আসেন এক চিকিৎসক। মুহূর্তে চলন্ত ট্রেনের বগি হয়ে যায় হাসপাতালের কক্ষ। ওই নারী সুস্থভাবে জন্ম দেন ফুটফুটে এক সন্তান।
সোমবার (৮ এপ্রিল) দুপুর পৌনে ১২টার দিকে খুলনা থেকে রাজশাহীগামী আন্তঃনগর কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনের ‘ঙ’ নম্বর বগিতে এ ঘটনা ঘটে। ট্রেনটি তখন পাবনার ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন এলাকায় অবস্থান করছিল।
স্বর্ণা আক্তার (২০) ঝিনাইদহের মহেশপুরের পান্থপাড়া ইউনিয়নের ঘুগরী গ্রামের ইয়াসিন আরাফাতের স্ত্রী। তার স্বামী প্রবাসে রয়েছেন। দেবর ও দুজন আত্মীয়ের সঙ্গে দর্শনা থেকে রাজশাহী যাচ্ছিলেন তিনি। ট্রেনটি রাজশাহীতে পৌঁছার পর আগে থেকেই রাজশাহী স্টেশনে অপেক্ষায় থাকা বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার মা ও নবজাতককে উপহার দিয়ে বরণ করেন। পরে মা ও নবজাতককে রাজশাহীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস ট্রেনের দায়িত্বরত গার্ড ইলিয়াস কবীর জানান, সকালে ট্রেনটি খুলনা থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে যাত্রা করে। সকাল সোয়া ৯টার দিকে দর্শনা স্টেশনে পৌঁছালে ওই অন্তঃসত্ত্বা নারী তার স্বজনদের সঙ্গে ট্রেনের ‘ঙ’ বগিতে ওঠেন। বেলা পৌনে ১১টার দিকে ট্রেনটি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা স্টেশনে পৌঁছায়। এ সময় ওই নারীর প্রসববেদনা ওঠে। তিনি ট্রেনের মধ্যে ব্যথায় চিৎকার করতে থাকেন। এতে সঙ্গে থাকা স্বজনেরা দিশাহারা হয়ে পড়েন। ট্রেনের অন্য যাত্রীরাও ওই নারীর সাহায্যে ছোটাছুটি শুরু করেন। বিষয়টি ট্রেনের গার্ড তাপস কুমার দেকে জানানো হয়। পরে তিনি মাইকিং শুরু করেন। ট্রেনে কোনো চিকিৎসক থাকলে ‘ঙ’ বগিতে যাওয়ার অনুরোধ জানান। মাইকিং শুনে ট্রেনে থাকা ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের নবজাতক ও শিশুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নাজনীন আক্তার ‘ঙ’ বগিতে ছুটে আসেন। তিনি দ্রুত কাপড় দিয়ে ওই নারীকে ঘিরে ফেলতে বলেন। এ সময় ট্রেনে থাকা অন্য নারীরা শাড়ি বের করে ট্রেনের তিনটি আসন ঘিরে ফেলেন এবং সেখানে নারী যাত্রীদের রেখে সব পুরুষ যাত্রীকে সরিয়ে দেন। চিকিৎসক চেষ্টা করতে করতেই ট্রেন ঈশ্বরদী স্টেশনে চলে আসে। তখন চিকিৎসক বলেন, তাঁর গ্লাভস লাগবে। তিনি ওই নারীর দেবরকে দিয়ে দোকান থেকে গ্লাভস আনার ব্যবস্থা করেন। গ্লাভস এনে দেওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ওই চিকিৎসকের সহযোগিতায় স্বর্ণা আক্তার ফুটফুটে এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। পুরো ট্রেনে তখন স্বস্তি ফিরে আসে।
শিশুটি জন্মের পর চিকিৎসক নাজনীন আক্তার জানান, তিনি রাজশাহীতেই যাচ্ছিলেন। মাইকিং শুনে ছুটে আসেন। ওই নারীর অবস্থা তখন ভালো ছিল না। তিনি ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন। তবে খুব দ্রুতই স্বাভাবিকভাবে নবজাতকটি ভূমিষ্ঠ হয়েছে। মা ও শিশু দুজনই সুস্থ আছে।
রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানান, ওই নারীকে রাজশাহীতেই একটি ক্লিনিকে আনা হচ্ছিল সন্তান প্রসবের জন্য। সঙ্গে কয়েকজন নারী ও এক দেবর ছিলেন। আসার পথে ট্রেনের ভেতরে তিনি সন্তান প্রসব করেছেন। তারা যে ক্লিনিকে যেতেন, রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছার পর অ্যাম্বুলেন্সে করে সেখানে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, মা ও নবজাতক সুস্থ রয়েছে।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: