জোসেফ স্তালিনের বেদনাবিধূর আত্মত্যাগের ঘটনাপ্রবাহ!
দেশের জন্য স্তালিন উৎসর্গ করে দেবেন নিজের ছেলেকেই!
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আয়ুষ্কাল ছিল ৫ বছর ৮ মাস। এই দীর্ঘ সময়ে একের পর এক জনপদ দখল করে নিয়েছিল জার্মান বাহিনী। প্রায় ৬ কোটি মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। যার মধ্যে ৬০ লাখ মানুষকে বন্দিশিবিরে প্রাণ দিতে হয়েছিল। একদিকে জার্মান বাহিনীর অগ্রাভিযান অন্যদিকে জাপানের অগ্রাভিযান। বিশ্বের দুই প্রান্ত থেকে দখলদারিত্ব কায়েম হতে থাকলে সে সময়কার ব্রিটিশ শাসনাধীনের ভারতকেও ২৫ লাখ সৈন্য সরবরাহ করতে হয়েছিল ইয়োরোপ, এশিয়ায়। তাদের মধ্যে অনকে বাঙালিও ছিল। পুঁজিবাদীরা সোভিয়েত ইউনিয়ন আর সমাজতন্ত্রের সবকিছুর বিরোধিতা করলেও এটা স্বীকারে কুণ্ঠাবোধ করে না যে বিপুল বিক্রমে অগ্রসর হওয়া জার্মান বাহিনীর হাতে সোভিয়েতের পতন হলে সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বের অর্ধেকটা হিটলারের অধীনে চলে যেত এবং বিশ্বের মানচিত্র নতুনভাবে আঁকতে হতো। সেই ভয়াবহ বিপদ থেকে বিশ্বকে রক্ষা করেছিলেন জোসেফ স্তালিন। তার বিচক্ষণ আর সাহসী নেতৃত্বে জার্মান বাহিনীর অগ্রাভিযান রুখে দিয়েছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের লাল ফৌজ।
ইয়োরোপ-আমেরিকা যুদ্ধজয়ের এবং আত্মত্যাগের যে বড়াই করে সেটিও বাতিলযোগ্য, কারণ ওই যুদ্ধে সোভিয়েত সৈন্য মারা গিয়েছিল প্রায় ২ কোটি ৬০ লাখ! তার বিপরীতে বাকি মিত্র বাহিনীর সম্মিলিত নিহত সৈন্য সংখ্যা মাত্র ১০ লাখ! কিন্তু স্তালিনের সেই কৃতিত্বকে খাটো করে তারা কেবলই পশ্চিমা কৃতিত্ব দেখে। কখনোই আসল বীরত্ব দেখে না। এমনকি কখনো কোনো আলোচনায় সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা বলা হলেও স্তালিনের অবদানের প্রসঙ্গ কৌশলে বাদ দেয়া হয়। বিস্ময়করভাবে এই নিকৃষ্ট কাজটা ভারত উপমহাদেশের বামপন্থীরাও করে!
১৯৪৫ সালের মে মাসের কিছু আগে স্তালিনের প্রিয় পুত্র লেফটেন্যান্ট Yakov Dzhugashvili কে বন্দী করে জার্মানরা। যখন বুঝতে পারে তারা স্তালিনের ছেলেকেই বন্দী করেছে, তখন ইয়াকভ হয়ে ওঠে মহামূল্যবান ‘পণ্য’। জার্মনরা ইয়াকভকে বিনিময় করতে চায় তাদের ফিল্ড মার্শাল ফ্রেডরিখ পউলাসের সাথে। স্তালিন রাজি হননি! লাল ফৌজের সর্বাধিনায়ক স্তালিন পুত্রকে হারাতে হতে পারে জেনেও অবিচলভাবে বললেন “I will not trade a Marshal for a Lieutenant!” এই একটি ঘটনাই প্রমাণ করে দেয় স্তালিনের কাছে দেশ আর নিজের সন্তানের মধ্যে কোনটি গুরুত্বপূর্ণ? তাঁর সমালোচকরা অবশ্য কল্পনাও করতে পারবেন না যে দেশের জন্য স্তালিন উৎসর্গ করে দেবেন নিজের ছেলেকেই! যুদ্ধ শেষের আগেই স্তালিন সংবাদ পান ইয়াকভকে কুখ্যাত Sachsenhausen কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে চরম নির্যাতন শেষে হত্যা করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন: