বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ছিল বিএনপি নেতা তরিকুল ইসলামের

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ‘যশোর উন্নয়নের কারিগর’ হিসেবে আখ্যা পাওয়া নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলাম। যথাযোগ্য মর্যাদায় সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) যশোরে পালিত হয়েছে তার ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৮ সালের এই দিনে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন ও রাজনীতিতে অসামান্য অবদান রাখা গণমানুষের নেতা তরিকুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকীর মতো কর্মসূচি পতিত হাসিনা সরকারের আমলে বিএনপি একবারও প্রকাশ্যে করতে পারেনি। এবারই প্রথমবারের মতো সপ্তাহব্যাপী যশোর জেলাজুড়ে নানা কর্মসূচিতে তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছে জেলা বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে তরিকুল ইসলামের কবর জিয়ারত, স্মরণসভা, দরিদ্রভোজ, এতিমখানা-মাদ্রাসায় উন্নতমানের খাবার ও পোশাক বিতরণ, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে পড়ার চেয়ার-টেবিল বিতরণ প্রভৃতি।
তরিকুল ইসলামের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীকে ঘিরে সবচেয়ে বড় কর্মসূচি স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) যশোর টাউন হল মাঠে। এই স্মরণসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
ছাত্রজীবনে ছাত্র ইউনিয়নের মাধ্যমের ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন তরিকুল ইসলাম। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে যশোর এমএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৩ সালে সর্বক্ষেত্রে রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৬৬ সালে যশোর এমএম কলেজে শহীদ মিনার নির্মাণের সময় রাজনৈতিক মামলায় প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাভোগ করেন। ১৯৬৮ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের সময় রাজবন্দি হিসেবে যশোর ও রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ৯ মাস বন্দি ছিলেন। ১৯৭০ সালে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন তিনি।
তরিকুল ইসলাম ১৯৭৩ সালে যশোর পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে মাওলানা ভাসানীর ফারাক্কা অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচি সফল করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৭৫ সালে বাকশালের বিরোধিতা করে আবারও তিন মাস কারাভোগ করেন। ১৯৭৮ সালে যশোর পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
এরপর বিএনপিতে যোগ দিয়ে দলটির যশোর জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে যশোর-৩ (সদর) আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবরণের পর তিনি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান।
স্বৈরাচার এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সামরিক শাসন জারি করলে তরিকুল ইসলাম আবারও গ্রেফতার হন। কারাগারে এসময় তার ওপর অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। এ দফায়ও দীর্ঘদিন কারাভোগের পর বেরিয়ে আবার বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন। বেগম খালেদা জিয়ার সরকারে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পান তরিকুল ইসলাম। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্বও পালন করেছেন।
১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে তিনি পর্যায়ক্রমে সমাজকল্যাণ ও মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০০১ সালে যশোর-৩ আসন থেকে আবারও বিপুল ভোটের ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে বন ও পরিবেশ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তরিকুল ইসলামের স্ত্রী অধ্যাপক নার্গিস বেগম বর্তমানে যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কনিষ্ঠ পুত্র অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের কাঁধে এখন বিএনপির খুলনা বিভাগের দায়িত্ব। তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জ্যেষ্ঠ পুত্র শান্তনু ইসলাম সুমিত পিতার প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক লোকসমাজের প্রকাশক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: