‘আওয়ামী লীগের অপকর্মের জন্য ঘৃণা যথেষ্ট নয়’

অভ্যুত্থান চাইলেই হয় না। দীর্ঘদিনের শোষণ, নির্যাতন, লাঞ্ছনা ও বঞ্চনায় পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশই ছিল জুলাই অভ্যুত্থান। গত ১৭ বছরে আওয়ামী লীগ গুম, খুনসহ যেসব অপকর্ম করেছে সেজন্য তাদের প্রতি ঘৃণাই যথেষ্ট নয় বরং যথাযথ বিচার অপরিহার্য। জীবন-মৃত্যুর অদ্ভুত সমীকরণে উপনীত হয় গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তি ও তার পরিবার। গুমের শিকার পরিবার ঈদ, পূজা-পার্বণ, উৎসব পালন করতে পারে না, তাদের পরিবারের প্রতীক্ষার দিন শেষ হয় না। গুম পৃথিবীর জঘন্যতম অপরাধ। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মারণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে শেখ হাসিনা ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়ের সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগকে যদি কেউ পুনর্বাসন করতে চায় তাহলে সেটি হবে অপরাধীর পক্ষে অবস্থান নেয়া। ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তির ঐক্য অপরিহার্য। বর্তমানে এই ঐক্য বিনষ্টের ষড়যন্ত্র চলছে। এই ঐক্যে কোন বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না। একটি বিশেষ দলকে টার্গেট করে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। সন্ত্রাসী যেই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে।
শনিবার (১২ জুলাই) এফডিসিতে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়নে নাগরিক সচেতনতা নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল এসব কথা বলেন। সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান জনাব হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, জুলাই আন্দোলনের প্রত্যেকটি হত্যাকাণ্ড শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছে। শেখ হাসিনা যে জুলাই হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা তা এখন সারাবিশ্বের মানুষের মুখে মুখে। শেখ হাসিনা ছিল একজন নিষ্ঠুর, নির্দয়, কুৎসিত, অমানবিক ও অত্যাচারী স্বৈরশাসক। শেখ হাসিনা ছিল সারাবিশ্বের ফ্যাসিস্টের মুখপাত্র। তিনি দেশটাকে বাপের তালুক মনে করতো। নমরুদ-ফেরাউনের অত্যাচারকেও হার মানিয়েছিলো শেখ হাসিনার জুলুম অত্যাচার। মিথ্যা বলতে বলতে মিথ্যাকে সত্য হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার মাস্টার ছিল শেখ হাসিনা।
জুলাই হত্যাকাণ্ডের দায়ে দন্ডিত হলে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের বহু নেতাই নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা হারাবেন। তাই আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে। মুক্তিযুদ্ধের পর জুলাই আমাদের ইতিহাসের এক যুগান্তকারী দলিল, জুলাই আমাদের ঐক্যের প্রতীক। জুলাই আমাদের তারুণ্যের অহংকার, বিদ্রোহের অগ্নিশিখা। জুলাইয়ের চেতনা বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না। জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণ ছিল অভূতপূর্ব। এ বিজয় হাসিনাবিরোধী সকল শক্তির বিজয়।
মানুষের মনে একটা সন্দেহ ছিলো ভোট হবে কি না। কিন্তু প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লন্ডন বৈঠকের পর মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছে কাঙ্ক্ষিত সময়ে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশবাসী ড. ইউনুস ও তারেক রহমানের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠক লন্ডন ঘোষণার বাস্তবায়ন দেখতে চায়। কারণ জাতীয় নির্বাচন যতো দেরি হবে ততোই ফ্যাসিস্ট শক্তির মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার শঙ্কা রয়েছে। তবে ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ প্রদান করায় দেশের মানুষের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে আস্থা তৈরি হয়েছে।
পতিত আওয়ামী সরকার বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়েছিল, তা আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে জাতি এখন তার অংশগ্রহণ দেখতে চায়। আমরা মনে করি খালেদা জিয়া যে কয়টি আসন থেকেই নির্বাচনে প্রার্থী হোন না কেন প্রত্যেকটি আসনেই পূর্বের মতো বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করবেন।
জনাব কিরণ আরো বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ যে গুম-খুন, হত্যা, অত্যাচার-নির্যাতন, মামলা-হামলা চালিয়েছিলো তা ক্ষমার অযোগ্য। বিডিআর, শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড ছিলো তার ক্ষমতায় টিকে থাকার অন্যতম হাতিয়ার। আওয়ামী লীগ যখনই বেকায়দায় পড়েছে তখনই জঙ্গি নাটক সাজিয়েছে। আন্দাজ, অনুমান ও কল্পিত কাহিনীর মাধ্যমে তথ্য-প্রমাণবিহীন বিচার করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানসহ অন্যান্যদের শাস্তি দিয়েছিলো। মুফতী হান্নানকে ডিজিএফআইয়ের বিশেষ সেলে আটক রেখে দ্বিতীয়বার স্বীকারোক্তি নিয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছিলো। ৪০০ বছরের ফৌজদারি মামলার ইতিহাসে ভারতীয় উপমহাদেশে এভাবে দ্বিতীয়বার স্বীকারোক্তি নেওয়ার এমন একটি নজিরও নেই। এধরণের নজির তৈরি করেছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনা। যা মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় উক্ত মামলা থেকে সবাই খালাস পেয়েছে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়নে নাগরিক সচেতনতার ভূমিকাই মুখ্য’ শীর্ষক ছায়া সংসদে কবি নজরুল সরকারি কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক সিকান্দার রেমান ও সাংবাদিক আরিফুজ্জামান মামুন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
বিভি/এসজি
মন্তব্য করুন: