৩৬৫ দিনে ৩৭০ মব, এমন দেশে পাগলও বাস করতে চাইবে না: রুমিন ফারহানা

ছবি: রুমিন ফারহানা
যতো দিন যাচ্ছে দেশের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। বিনিয়োগ কমছে, মব বাড়ছে। মেধাবীরাও দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে উদগ্রিব। অন্তবর্তী সরকারের দায়িত্বরতরা দায়িত্ব পালনের বদলে হঠাৎ পাওয়া ক্ষমতা উপভোগ করছে। দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টক শোতে এসব কথা বলেন বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যতো দিন যাচ্ছে ততোই কিন্তু পরিস্থিতি ঘোলাটে হচ্ছে। যতো দিন যাচ্ছে ততই দেশের পরিস্থিতি সেটা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক আইনশৃঙ্খলার অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে।আজকে শুধু বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ সাহেবের কথাই নয়, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যও কিন্তু খুব কাছাকাছি একটা কথা বলেছেন। বলেছেন যে দ্রুত আপনারা কাজ করুন। কারণ দর্শক অধৈর্য হয়ে গেলে তার পরিণতি ভালো হবে না। আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষ অধৈর্য। অনেকগুলো কারণে অধৈর্য। বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে আছে এবং আশঙ্কাজনক হারে বিনিয়োগ কমছে। কারণ যারা ইনভেস্ট করবে তারা একটা স্টেবল পলিটিক্যাল সিচুয়েশন দেখতে চায়। একটা স্টেবল পলিটিকাল গভর্মেন্ট দেখতে চায়।’
নেপালের উদাহরণ দিয়ে রুমিন ফারহানা বলেন, ‘নেপালে মাত্র তিনজনের একটা মন্ত্রিসভা হয়েছে এবং শপথ পড়ার সাথে সাথে তারা বলেছে আমার নেক্সট মেইন কাজই হলো ইলেকশন। উনারা কিন্তু ইনডেফিনিট পিরিয়ড। কেন ১২ বছরে ১৪টা সরকার হলো? পিআর পদ্ধতির কি এর জন্য দায়ী? নাকি নেপো চাইল্ডরা দায়ী, নাকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দায়ী, কে দায়ী এগুলো খুঁড়ে বের করতে যায়নি তারা। বরং তারা বলেছে আমরা অন্তর্বর্তীকালে জাস্ট এসেছি। জাস্ট একটা ইলেকশন দিয়ে আমরা চলে যাবো। আমরা কিন্তু সেটা বাংলাদেশে দেখছি না। আমরা নানান টালবাহানা লক্ষ্য করছি। টালবাহানাগুলো খুব ভালো না।’
যারা অন্তবর্তী সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বে আছেন তারা বাংলাদেশের প্রতি এতোটা দায়বদ্ধ নন জানিয়ে রুমিন বলেন, ‘আজকে ডক্টর আলী রিয়াজ বলছেন, যিনি আসলে বাংলাদেশি নন, উনি বলছেন যে কেবলমাত্র নির্বাচনই দেশে কোনো পরিবর্তন আনতে পারে না। মানে তাহলে একটা বছর তো আমরা পার করলাম নির্বাচন ছাড়া। দেশে কোনো পরিবর্তনটা এসছে? কেবল তো সংবিধান সংস্কার না, এখানে নারী সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে, এখানে চিকিৎসার সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে, এখানে পুলিশ সংস্কার কমিশন হয়েছে, প্রশাসন সংস্কারের জন্য কী কী হবে সেটার একটা রেকমেন্ডেশন এসেছে এবং ওগুলোর সংস্কারের ক্ষেত্রে কিন্তু দলগুলো মোটামুটি একমত হয়েছে। সেই সংস্কারে কয়টার বাস্তবায়ন হয়েছে?
আপনারা আসলে একটা বাবল তৈরি করতে চাচ্ছেন মানুষের সামনে যে আমি এটা করছি, ওটা করছি। আমি থাকলে আমি এটা করবো ওটা করবো। আপনারা আসলে কিছু করছেন না। আপনারা যেটা করছেন আপনারা না পেয়ে পাওয়া একটা ক্ষমতা, যেটা আপনারা কোনোদিন পাওয়ার কোনো কারণ ছিলো না, কথাও ছিলো না, আপনারা সেটা উপভোগ করছেন। আপনারা বহু বছর আগে বাংলাদেশকে ত্যাগ করে চলে গেছেন জীর্ণ বস্ত্রের মতো। আপনারা বিদেশিদের সঙ্গে সন্ধ্যাবেলা ইভনিং স্পেন্ড করতে করতে বাংলাদেশে কোনো মানুষ থাকে কি না এইসব নিয়ে আলাপ করেছেন এবং ভবিষ্যতেও আপনারা তাই করবেন। কিন্তু বাংলাদেশে আমরাই থাকব। আমাদের মৃত্যুও সম্ভবত বাংলাদেশেই হবে ইনশাআল্লাহ।
অন্তবর্তী সরকারের দায়িত্বরতদের দিকে প্রশ্ন তুলে রুমিন বলেন, ‘এই মানুষগুলো না পাওয়া ক্ষমতা আসলে পেয়ে গেছে। জীবনে কেউ তাদের চিনতো না। কেউ তাদের নামও জানতো না। কারণ তারা তো দেশ ত্যাগ করা মানুষ। তাদের নাম কেন জানবে বাংলাদেশ? কিন্তু তারা এখন বড় বড় জায়গায় বসছে। বড় বড় কথা বলছে। বড় বড় বুলি দিচ্ছে।’
দেশের অবস্থা খুবই খারাপের দিকে যাচ্ছে উল্লেখ করে রুমিন বলেন, ‘দেশের অবস্থা শেষ। আপনি দেখেন ৩৭০টা না, ৩৮০টা মব হইছে গত ৩৬৫ দিনে। ৩৭০টা মব যদি ৩৬৫ দিনে হয়, ওই দেশে তো পাগলও বিনিয়োগ করবে না। ওই দেশে তো পাগলও বাস করতে চাইবে না। গত ৪০ বছরে একটা ভয়াবহ রকম ব্রেইন ড্রেন হয়ে গেছে বাংলাদেশ থেকে। শিক্ষিত সমাজের অধিকাংশ সন্তান দেশের বাইরে চলে গেছে। সেটল হয়ে গেছে ওখানে। যে কয়জন শিক্ষিত পরিবার আছে তারাও আমি শুনি, আমার কানে তো আসে, কথা হয় না, বন্ধুবান্ধবের মধ্যে তো কথা হয়, তারা দেশ ছেড়ে দিতে চাইছে।’
বিভি/এআই
মন্তব্য করুন: