• NEWS PORTAL

  • বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

খালেদা জিয়ার পৈতৃক ভিটা ফেনীতে শোকের মাতম

প্রকাশিত: ২১:৩৫, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

ফন্ট সাইজ
খালেদা জিয়ার পৈতৃক ভিটা ফেনীতে শোকের মাতম

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার নিজ জেলা ফেনীতে। অভিভাবককে হারানোর সংবাদে মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই জেলার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে বিরাজ করছে গভীর শোক ও হাহাকার। সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ফুলগাজী উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের পৈতৃক নিবাস ‘বড় মজুমদার বাড়িতে’ কান্নার রোল পড়ে যায়। স্বজন ও স্থানীয় বাসিন্দারা প্রিয় ‘পুতুল’ (পারিবারিক নাম) হারানোর শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছেন। সকালে পরিবারের পক্ষ থেকে তার আত্মার মাগফিরাত কামনায় কুরআন খতমের আয়োজন করা হয়। মসজিদের মাইকে ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই তাকে শেষবারের মতো স্মরণ করতে বাড়িতে ভিড় জমান হাজারো মানুষ।

বেগম খালেদা জিয়া ফেনী-১ আসন থেকে পাঁচবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বাবার নাম মরহুম ইস্কান্দার আলী মজুমদার, মাতার নাম মরহুমা তৈয়বা বেগম মজুমদার। তারা দুই ভাই তিন বোন।

তার ভাইদ্বয় হলেন মরহুম মেজর সাঈদ ইস্কান্দার এমপি ও শামীম ইস্কান্দার, বিমান বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। বেগম খালেদা জিয়ার বড় বোন হলেন মরহুম খুরশিদ জাহান চকলেট, সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী। দ্বিতীয় বেগম খালেদা জিয়া পুতুল ও তৃতীয় বোন বিউটি।

বেগম খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন তিনি বার বার তার নিজ বাড়িতে এসেছেন। এখানকার স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মিশেছেন। তার পরিবার-পরিজন ও দলীয় নেতা কর্মীদের সঙ্গে তার আন্তরিকতার কথাই এখানকার জনগণ বলছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বেগম খালেদা জিয়া ফেনীর উন্নয়নে অগ্রযাত্রায় ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার জন্য সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) ফেনী-১ (পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা। কিন্তু আজকের এই বিয়োগান্তক খবর কেউ মেনে নিতে পারছেন না।

বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলেন, বেগম জিয়া আরও আগেই ইহলোক ত্যাগ করতে পারতেন, কিন্তু আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তায়ালা তাকে জীবিত রেখেছিলেন যাতে তিনি নিজের জীবদ্দশায় রাজনীতির উত্থান পতন, বিশ্বাসঘাতকতা ও সত্যের পরীক্ষাগুলো নিজ চোখে দেখে যেতে পারেন। এগুলো ইতিহাসের অংশ, আর ইতিহাস দেখারও যোগ্যতা সবাই পায় না। আল্লাহ তায়ালা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বেহেশত নসিব করুন এবং তার অনন্ত যাত্রা কবুল করুন।

ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফখরুল আলম স্বপন ও সদস্য সচিব আবুল হোসেন বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল আমাদের নেত্রী এমপি হয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। বেগম জিয়ার মৃত্যুতে ৭দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। প্রত্যেকটা নেতা-কর্মীর বাড়িতে শোক দিবস পালন করা হবে। আমাদের ক্ষুদ্র-কর্মীর জন্য খালেদা জিয়ার যে আন্তরিকতা তা জীবনেও ভুলব না। আমাদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হওয়ার নয়। আমাদের নেত্রীর জন্য সকলে দোয়া করবেন। আমরা যতদিন বেঁচে থাকবো আমাদের নেত্রী আগে যেমন আমাদের মাঝে ছিলেন, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও আমাদের মাঝে থাকবেন। আমরা তাকে ধারণ করে সামনের রাজনীতি করবো।

ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ফেনীর মানুষ যাকে নিয়ে গর্ভ অহংকার করতেন তার মৃত্যুতে আমরা শোক জানাবার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। দেশ-জাতি যতদিন আছে, ততদিন এই জাতি বেগম খালেদা জিয়ার কথা স্মরণ করবে। আমাদের একজন নেত্রী ছিলেন যাকে নিয়ে সারাদেশ গর্ভ করে।

বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বজন মোবারক হোসেন রাশেদ বলেন, খালেদা জিয়া আট বছর বয়সে জলপাই গুড়িতে চলে যায়। তার মায়ের ওখানে ২২টি চা বাগান ছিল। ইস্কান্দর আলী মজুমদার ওখানে চা বাগানের ব্যবসা করতো। ওখানে উনার সঙ্গে পরিচয় ও সম্পর্ক হয়। ওখানে তৈয়বা মজুমদারের সঙ্গে বিয়ে হয়। দেশ ভাগ হওয়ার পর দিনাজপুর মামার বাড়িতে ইস্কান্দর আলী মজুমদারের লাশ দাফন হয়। খালেদা জিয়া দিনাজপুরে লেখাপড়া করেন। ওখানে একটি অনুষ্ঠানে মেজর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে পরিচয় হয়ে পরে বিবাহ হয়। খালেদা জিয়া বিএনপি চেয়ারপারসন হওয়ার পর ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের বাড়ি আসেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও বেশ কয়েকবার পৈত্রিক বাড়িতে এসে মুরুব্বি ও মহিলাদের সঙ্গে কথা বলতেন। উনার মৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত। ফেনীর মেয়ে খালেদা, গর্ভ মোদের আলাদা আর বলতে পারবো না। উনার মৃত্যুতে গর্ভের জায়গাটি আজ শেষ হয়ে গেল। আল্লাহ উনাকে বেহেশত নসিব করুক।

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চাচাতো ভাই শামিম হোসেন মজুমদার বলেন, আমার যেটা কাছ থেকে দেখেছি উনি একজন প্রধানমন্ত্রী ওনার কাছে সে অহংকার ছিল না। একজন সাধারণ মানুষ যেভাবে কথা বলে উনিও আমাদের সঙ্গে সেভাবে বলতেন। বাড়িতে এলে তিনি কোনও প্রটোকলমেন্টেন করতেন না। বাড়িতে এলে তিনি লোকজনের সঙ্গে কথা বলার সময় যারা প্রটোকল দিতেন তাদের বলতেন তোমরা এক পাশে বস। এটা আমার বাড়ি এখানে কোনো সমস্যা নেই।

জানা যায়, খালেদা জিয়ার পারিবারিক নাম খালেদা খানম পুতুল। ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিন বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তার দাদা হাজী সালামত আলী, নানা জলপাইগুড়ির তৌয়াবুর রহমান। বাবা ইস্কান্দার মজুমদার এবং মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়ায় তার জন্ম। আদি পৈতৃক নিবাস ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মজুমদার বাড়িতে।

খালেদা জিয়া পাঁচ বছর বয়সে দিনাজপুরের মিশন স্কুলে ভর্তি হন। এরপর তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। একই বছর তিনি জিয়াউর রহমানকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে তিনি খালেদা জিয়া বা বেগম খালেদা জিয়া নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাস শুরুর আগে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেন।

গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বেগম খালেদা জিয়াকে। এরপর থেকে তিনি সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2