• NEWS PORTAL

শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

দান কাকে করবেন কিভাবে করবেন

তৌহিদুল ইসলাম বাদল

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ২১ এপ্রিল ২০২৩

ফন্ট সাইজ
দান কাকে করবেন কিভাবে করবেন

তৌহিদুল ইসলাম বাদল

সাধারণভাবে দান বলতে বুঝায় অর্থ-সম্পদের কিছু অংশ শর্তহীনভাবে কাউকে দিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশে প্রচলিত ১৮৮২ সালের সম্পত্তি হস্তান্তর আইন অনুসারে কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি কোন রকম মূল্য বা বিনিময় ব্যতিরেকে কাউকে প্রদান করাকে দান বলে।  প্রতিটি ধর্মেই দানের ব্যাপারে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং দানকে অন্যতম মহত কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অর্থ-সম্পদ ছাড়াও চিকিৎসা ও শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবহৃত রক্তদান, অঙ্গদান এবং জ্ঞান বা শিক্ষাও দান করে মানুষের কল্যাণ করা যায়। আবার সুন্দর কথা ও আচরণ দানের সমতুল্য। সব ধরনের দানেই গ্রহীতার সম্মতির প্রয়োজন।  


ইসলামে নামাজ, রোজার মতই দান-খয়রাত করা সরাসরি আল্লাহর নির্দেশ। মানুষ কেনো ও কি উদ্দেশ্যে দান করবে এবং দানের ফজিলত কি সে বিষয়ে পবিত্র আল-কোরআনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, "হে মুমিনগণ, আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা হতে ব্যয় কর, সে দিন আসার পূর্বে, যে দিন থাকবে না কোন-বেচাকেনা, না কোন বন্ধুত্ব এবং না কোন সুপারিশ। আর কাফিররাই যালিম।" (সুরা বাকারা, আয়াত-২৫৪) 


আল্লাহ্ সুবহানাহু তায়ালা মানুষকে তার মৃত্যু আসার পূর্বে দান করার নির্দেশ দিয়েছে কেনোনা  দান মানুষকে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করে এবং একই সাথে মানুষের পাপ মোচন করে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, "দান আল্লাহর অসন্তুষ্টি লাঘব করে এবং অপমৃত্যু রোধ করে।"
দানের একমাত্র উদ্দেশ্য হতে হবে মহান আল্লাহকে সন্তুষ্টি করা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, "আর যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও নিজদেরকে সুদৃঢ় রাখার লক্ষ্যে সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা উঁচু ভ‚মিতে অবস্থিত বাগানের মত, যাতে পড়েছে প্রবল বৃষ্টি। ফলে তা দ্বিগুণ ফল-ফলাদি উৎপন্ন করেছে। আর যদি তাতে প্রবল বৃষ্টি নাও পড়ে, তবে হালকা বৃষ্টি (যথেষ্ট)। আর আল্লাহ তোমরা যা আমল কর, সে ব্যাপারে সম্যক দ্রষ্টা। (সুরা বাকারা, আয়াত-২৬৫)। 


আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া লোক দেখানো দান মানুষের কোন কল্যাণে আসবে না। একই সাথে দান করে খোঁটা দিলে সে দান ধুয়ে মুছে যাবে। ঐ দানের জন্য কোন পূণ্য হবে না। বরং আল্লাহর কাছে লাঞ্ছিত হবে। দান করে খোঁটা দেওয়ার চেয়ে দান না করে ভালো কথা বলা উত্তম। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এরশাদ করেন, "উত্তম কথা ও ক্ষমা প্রদর্শন শ্রেয়, যে দানের পর কষ্ট দেয়া হয় তার চেয়ে। আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, সহনশীল।" (সুরা বাকারা, আয়াত- ২৬৩) 


প্রকাশ্যে দান করা উত্তম। তবে গোপণে দান করা আরো বেশি ভালো। গোপণ দানের ব্যাপারে আল্লাহ্ বলেন, "তোমরা যদি সদাকা প্রকাশ কর, তবে তা উত্তম। আর যদি তা গোপন কর এবং ফকীরদেরকে তা দাও, তাহলে তাও তোমাদের জন্য উত্তম এবং তিনি তোমাদের গুনাহসমূহ মুছে দেবেন। আর তোমরা যে আমল কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত।" (সুরা বাকারা, আয়াত-২৭১)

অবশ্যই গোপন দান ভালো। তবে প্রকাশ্য দানেরও অনেক গুরুত্ব রয়েছে। এর মাধ্যমে দানকারী আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের পাশাপাশি সামাজিক মর্যাদাবান হন। প্রকাশ্যে দানের আরেকটি ভালো দিক হলো- মানুষের মধ্যে দানের প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। দানকারীকে সম্মান বা মর্যদা দেওয়া দোষের কিছু নয়। বরং দানের বিপরীতে দানকারীকেও উপহার দিলে ধনী-গরীবের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। যা শ্রেণিহীন সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকাপালন করে। তবে কোন অবস্থাতেই দান করে রিয়া বা অহংকার বোধ করা যাবে না। তাতে আল্লাহ্ অখুশি হন। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিটি দানই সরাসরি আল্লাহকে দান করার সামিল। কিন্তু আল্লাহ্ অভাবগ্রস্ত নন, তিনিই একমাত্র মহাঐশ্বর্যময় এবং সহনশীল। বরং দানকারী বা দাতার এই জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা উচিত যে, কোটি কোটি মানুষের মধ্যে থেকে আল্লাহ তাকে দান করার তৌফিক দিয়েছেন এবং যার বিনিময় আল্লাহ্ নিজে দানকারীকে দিবেন। 


বিষয়টি একটি উদাহরণ দিয়ে পরিস্কার করা যেতে পারে। মনে করুন, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আপনাকে এবং আপনার এক বন্ধুকে চাকুরি দিয়েছে। আপনারা দুজনেই চাকুরি করে যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করেছেন। এখন প্রধানমন্ত্রী একজন মানুষকে সাহায্য করতে চান। প্রধান মন্ত্রী নিজে ইচ্ছে করলেই ঐ মানুষকে মোটা অংকের অর্থসম্পদ দিতে পারবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজে ঐ ব্যক্তিকে অর্থ সহায়তা না করে আপনার কিংবা আপনার বন্ধুর মাধ্যমে আপনাদের নিজ সম্পদ থেকে দেওয়ার জন্য মনস্থির করেছেন। যার বিনিময়ে তিনি আবার দাতাকে ১০০ গুণ বেশি সম্পদ পুরস্কার হিসেবে দিবেন এবং দাতার প্রতি সন্তুষ্টি থাকবেন। এখন নিশ্চয় আপনি এবং আপনার বন্ধু দুজনেই প্রধানমন্ত্রীর মনোনিত ব্যক্তিকে দান করার জন্য সুযোগ চাইবেন। আর আপনি সুযোগ পেলে নিশ্চয় সুযোগদানের জন্য প্রধান মন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করবেন। অনুরূপভাবে স্বয়ং আল্লাহর মনোনিত ব্যক্তি হিসেবে দান করতে পারা পরম সৌভাগ্যের এবং সম্মানের। যা একমাত্র আল্লাহ্ আপনাকে সেই সুযোগ দিয়েছেন। 


দানের ক্ষেত্রে অবশ্যই নিকটাত্মীয়দের বেশি প্রধান্য দিতে হবে। নিকটাত্মীয়দের দানের ব্যাপারে, মহানবী সাঃ বলেছেন, নিকটাত্মীয়কে দান করলে একই সাথে দুইটি সওয়াব, আত্মীয়তা রক্ষার এবং দানের। নিকটাত্মীয়ের মধ্যে প্রথমেই পিতা-মাতা এবং ভাইবোন। এরপর রক্তের সম্পর্কিত আত্মীয়। সেটি হতে পারে বাবার দিক থেকে এবং মায়ের দিক থেকে। শ্বশুর-শ্বাশুড়িও স্ত্রী কিংবা স্বামীর পিতা-মাতা সেটি মনে রাখা কর্তব্য।

দানের ব্যাপারে কে কতটুকু অগ্রাধিকার পাবে সে বিষয়েও ইসলামে স্পষ্ট বলা আছে। সমাজে যারা লোকলজ্জার ভয়ে হাত পেতে চাইতে পারে না, তাদেরকে দানের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এধরণের ব্যক্তিদেরকে গোপনে দান করাই শ্রেয়। স্কুল-কলেজ, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, মসজিদ-মাদরাসা, পুনর্বাসন কেন্দ্র নির্মান করে দান করা যায়। দেশে বন্যা, খরাসহ যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারী বা যুদ্ধবিগ্রহসহ যেকোনো ক্রান্তিলগ্নে রাষ্ট্রীয় তহবিল গঠন এবং বিপদ বা অভাবগ্রস্ত মানুষকে দান করা নৈতিক ও নাগরিক দায়িত্ব। একই সাথে ভিনদেশী মুসাফির কিংবা ভিন্নধর্মাবলম্বীও মুসলিমের দান থেকে বঞ্চিত হবে না। এভাবেই ইসলাম সকলের হক বা অধিকার প্রতিষ্ঠা করে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা নিশ্চিত করে।

মন্তব্য করুন: