ইয়াজুজ-মাজুজ কোথায় বন্দী আছে, কবে আসবে তারা?
ইয়াজুজ ও মাজুজ। অদ্ভূত দুটি শব্দ। শব্দ দুটি এসেছে ‘উজাজ’ শব্দ থেকে যার অর্থ শুকনা অথবা কর্কশ। আরেকটি শব্দ থেকেও এর উৎপত্তি, ‘আল আজ’। যার অর্থ, যখন শত্রু খুব দ্রুত চারদিক থেকে আক্রমণ করে। ইয়াজুজ ও মাজুজ এর চরিত্রও এমনই হবে।
অর্থাৎ তারা খুব রুক্ষ ও কর্কশ স্বভাবের এবং তারা যখন আক্রমণ করবে তখন চারদিক থেকে এবং খুব দ্রুত আক্রমণ করবে। কেউ তাদের সামনে থেকে জীবিত পালাতে পারবে না। কেয়ামতের আগে আসবে ইয়াজুজ মাজুজ নামের দুটি জাতি। অত্যন্ত হিংশ্র ও বর্বর এই দুই জাতি কারা? কবে আসবে তারা?
ইয়াজুজ ও মাজুজ জাতি দুটি এক পরহেজগার বাদশাহর আমলে ছিলো। যে বাদশাহকে বলা হয় জুলকার নাইন। জুলকার নাইন অর্থ দুই শিং ওয়ালা মানুষ। সেই রাজার মুকুটে দুটি শিং এর মতো ছিলো বলেই তার এই নাম বলে মুফাসসিরিনদের ধারণা। জুলকার না’ইন ছিলেন খুবই ক্ষমতাধর এখজন শাসক এবং তিনি ছিলেন একজন ঈমানদার। তিনি এতটাই ক্ষমতাধর ছিলেন যে আল্লাহ তাকে প্রায় পুরো পৃথিবীর রাজত্বই দিয়েছিলেন।
তিনি তার সৈন্যদল নিয়ে ভ্রমণ করতেন। দেখতেন পৃথিবীর কে কোথায় নির্যাতিত হচ্ছে, কে ভালো কাজ করছে। তিনি তার জীবন পাড় করেছেন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায়। তার এমনই এক ভ্রমণ সম্পর্কে আল্লাহ সুরা কাহাফে বলেন। তিনি এতটাই দূরে চলে গিয়েছিলেন যে এর পর আর কোন মানব সভ্যতা ছিলো না। সেখানে দুটি পর্বতের মাঝে তিনি এক জাতিকে দেখলেন যাদের ভাষাও তিনি বুঝতে পারছিলেন না। কারণ তারা সভ্যতা থেকে এতটাই দূরে ছিলো যে তাদের ভাষাও দুর্বোধ্য ছিলো।
সে জাতি ইশারা ইঙ্গিতে জুলকার নাইনকে বললো, “ইয়াজুজ ও মাজুজ আমাদের উপর অনেক অত্যাচার করছে। তারা আমাদের হত্যা করছে, আমাদের উপর যুলুম করছে। আমরা যদি আপনাকে কিছু মূল্য দেই তার বদলে আপনি কি তাদের ও আমাদের মধ্যে একটি দেয়াল নির্মাণ করে দিতে পারেন?”
উত্তরে জুলকার নাইন বলেন, “আমার রব আমাকে যা দিয়েছেন তা তোমাদের উপহার থেকে অনেক ভালো। তোমরা বরং আমাকে সাহায্য করো এবং আমি তোমাদের ও তাদের মাঝে একটি দেয়াল তৈরি করে দিচ্ছি।” এবং তিনি তাদের লোহার টুকরা আনতে বললেন। তিনি সেই লোহার টুকরাগুলো দুই পর্বতের মাঝে রাখলেন এবং তাতে বিশাল আগুন ধরিয়ে দিলেন। সেই আগুন এতটাই বড় ছিলো যে লোহার টুকরাগুলো গলে গেল এবং সেখানে লোহার এক দেয়াল তৈরি হয়ে গেল। অর্থাৎ তিনি ইয়াজুজ ও মাজুজকে দুটি পর্বতের মাঝে আটকে দিলেন।
আল্লাহ তালা বলেন, “এবং তারা তা অতিক্রম করতে পারলো না এবং তা ভেদও করতে পারলো না।” [সুরা কাহাফ, আয়াত ৯৭]
জুলকার নাইন এই দেয়াল বানানোর ব্যাপারে বললেন, “এটা আমার রবের রহমত। কিন্তু যখন আমার পালনকর্তার ওয়াদা পূর্ণ হবে, তখন তিনি এই দেয়াল সমতল করবেন। আর আমার রবের ওয়াদা চির সত্য।”
এইখানে আল্লাহর ওয়াদা বলতে বুঝানো হয়েছে কেয়ামতকে। অর্থাৎ যখন কেয়ামত সন্নিকটে আসবে তখন আল্লাহ এই দেয়াল গুড়িয়ে দেবেন এবং ইয়াজুজ ও মাজুজকে মুক্ত করে দেবেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) কেয়ামতের যে ১০টি প্রধান আলামতের কথা বলেছেন তার অন্যতম একটি হচ্ছে ইয়াজুজ ও মাজুজের আগমন।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: